You dont have javascript enabled! Please enable it! মুকুন্দপুরের আক্রমণ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া - সংগ্রামের নোটবুক

মুকুন্দপুরের আক্রমণ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার মুকুন্দপুর গ্রাম এবং রেলওয়ে স্টেশন এলাকা অনেক দিন থেকেই পাকবাহিনীর দখলে। পাকবাহিনী একটি পদাতিক প্লাটুন নিয়ে মুকুন্দপুর সীমান্ত ফাঁড়িতে একটি শক্তিশালি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলে। ফাঁড়িটি রেলওয়ে স্টেশন ও মুকুন্দপুর গ্রামের মাঝামাঝি সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত। নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধারা এলাকায় জোর তৎপরতা শুরু করলে পাকবাহিনী ব্রিতকর অবস্থায় পড়ে। পাকবাহিনীর বিব্রতকর অবস্থার কথা বুঝতে পেরে মুক্তিযোদ্ধারা এলাকাটিকে শত্রুমুক্ত করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। এসময় তিন নম্বর সেক্টরের কমাণ্ডার এ.কে.এম. সফিউল্লাহ্ মুকুন্দপুর আক্রমণ করার জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ১৮তম রাজপুত (রাজস্থানের অধিবাসীদেরকে নিয়ে যে রেজিমেন্ট গঠন করা হয়) রেজিমেন্ট উত্তরে জলিলপুরে রেললাইন ধরে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। আরেকটি কোম্পানি কলাচ্ছড়া নদীর এলাকায় অবস্থান গ্রহণ করে। লেফটেন্যান্ট সাইদ এক কোম্পানি সৈন্যসহ মুকুন্দপুরের দক্ষিণে একটি ফলের বাগানে অবস্থান নেন। পরিকল্পনা মোতাবেক পশ্চিম দিক থেকে খুব ভোরে আক্রমণ শুরু করেন। গ্রামের দক্ষিণ ধারে ব্যূহ প্রতিষ্ঠা করার জন্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ স্থানটি সীমান্ত ফাঁড়ি থেকে ৮০০ গজ পশ্চিমে অবস্থিত। আক্রমণ শুরুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত যতোটা সম্ভব সামগ্রিক তৎপরতা গোপন রাখা হয়। গোলন্দাজ সেনাদের সতর্কাবস্থায় রাখা হয়। আক্রমণকারী কমাণ্ডার যখন চাইবেন, তখনই গোলান্দাজ বাহিনী গোলাবর্ষণ শুরু করবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী সকল প্রস্তুতি যখন সম্পন্ন, তখন ১৯ই নভেম্বর প্রভাতে পাকবাহিনীর ঘাঁটির ওপর আক্রমণ পরিচালনা শুরু হয় এবং সাথে সাথে গোলান্দাজ বাহিনী পরিকল্পনা অনুযায়ী গোলাবর্ষণ করতে থাকে। পাকবাহিনীও তাদের ফাঁড়ি থেকে বেপরোয়াভাবে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণকে প্রতিহত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়। এই যুদ্ধ সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের তীব্রতায় পাকবাহিনী টিকতে না পেরে পিছু হঠতে বাধ্য হয় এবং মুকুন্দপুর মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে আসে। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর ৩১ জন সৈন্য বন্দিসহ ২৭টি রাইফেল, ২টি স্টেনগান, ২টি এল.এম.জি. এবং ১.৩ ইঞ্চি মর্টার হস্তগত হয়। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর কোন প্রকার ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এই অভিযানের সাফল্য মুক্তিযোদ্ধাদের পরবর্তী অভিযানকে ত্বরান্বিত করে।
মোঃ আবু মুসা

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত