মির্জাপুর থানা ও সেতুর পতন, টাঙ্গাইল
ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল জেলার প্রবেশ পথেই মির্জাপুর থানা। এখানেই অবস্থিত বিখ্যাত দানবীর রনদা প্রসাদের বাড়ি ও তার প্রতিষ্ঠিত মির্জাপুর হাসপাতাল। ১৯ নভেম্বর মির্জাপুর সেতু দখল করার পর প্রায় ৩ ঘন্টা মির্জাপুর থানার উপর মুক্তিযোদ্ধা আজাদ কামাল ও তাঁর সহযোদ্ধারা ক্রমাগত আক্রমণ চালায়। কিছু কিছুতেই পাক বাহিনীকে ঘায়েল করা যায়নি। এমন সময় কমান্ডার সবুর খানের নেতৃত্বে প্রায় ৩ শত মুক্তিযোদ্ধা হাজির হয়। নানা দিক থেকে আক্রমণ করার পরও পাক বাহিনীর বাঙ্কারগুলো দখল করা যায়নি। অবশেষে কমান্ডার সবুর খানের বুদ্ধিতে ৫টি পাম্প সংগ্রহ করে খালে বসানো হলো। ভোর হওয়ার সাথে সাথে পাম্পগুলো চালু করা হলো। ৬ ঘন্টা পাম্প চলার পর মির্জাপুর হাইস্কুল-কলেজের মাঠ বর্ষার পানিতে ভরে গিয়ে থানার বাঙ্কারগুলো পানিতে পরিপূর্ণ হতে লাগল। উপায়ন্তর না দেখে পাকসেনারা পাম্পের দিকে ফায়ার করতে লাগল। কিন্তু পাম্পের জলধারা থামল না। বাঙ্কারের ভিতর থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ল। অধিকাংশ পাকসেনা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে গুলি বিনিময় করতে করতে ঢাকার দিকে পালিয়ে যায়। বার জন পাকসেনা। চারজন মিলিশিয়া ও সত্তর জন রাজাকার মুক্তিবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে৷
অবশেষে থানা থেকে ৪০/৫০ গজ দূরে অবস্থিত মির্জাপুর সেতু ধ্বংস করা হয়। সবুর ইঞ্জিনিয়ারের দল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেতুটি ধ্বংস করে। মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা নির্ভুল ও নিখুঁতভাবে সেতু ধ্বংস অভিয়ানের পর থেকে দাম্ভিক শত্রু সেনাদের আস্ফালন ও গৌরবে ক্রমাগত ফাটল ধরতে শুরু করে।
[৫৯৫] ফিরোজ খায়রুদ্দিন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত