মানিকহার যুদ্ধ, গোপালগঞ্জ
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধের সময় গোপালগঞ্জ জেলায় পাকসেনাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের দৃঢ় প্রতিরোধের একটি অন্যতম উদাহরণ হলো মানিকহারের যুদ্ধ। মানিকহারের যুদ্ধ মূলত মানিকহার, শসাবাড়িয়া, পাইককান্দি ও উরফি গ্রামে সংঘটিত হয়। মুষ্টিমেয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সৈনিক এবং ছাত্র-জনতার এই প্রতিরোধ গোপালগঞ্জবাসীকে মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী দিনগুলোতে অদম্য সাহস আর অসীম প্রেরণা জুগিয়েছে। পাকবাহিনীর যে দলটি মানিকহার গ্রামের উদ্দেশে রওনা হয় তারা মানিকহার-পাইককান্দি খালের পূর্ব পাড়ে পৌঁছালে উভয় পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় শুরু হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যবধান হয়ে দাঁড়ায় শুধুমাত্র ৩০ গজ প্রশস্ত মানিকহার-পাইককান্দি খালটি। মুক্তিযোদ্ধা নায়েক রউফ একটি এলএমজি দিয়ে তার প্রতিরক্ষার ডান পাশ রক্ষা করতে থাকে। পাকবাহিনী কাঠের সেতুর ওপর দিয়ে খাল অতিক্রমের চেষ্টা করলে সে ৩-৪ জন পাকসেনাকে হত্যা করে। অতঃপর অসীম সাহসী এই যোদ্ধার অবস্থান টের পেয়ে পাকবাহিনী তার ওপর এলএমজি ফায়ার হানে। নায়েক রউফ হাতে গুলিবিদ্ধ হন৷ নায়েক রউফ আহত হওয়াতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষার ডান পাশ দুর্বল হয়ে পড়ে, যা মুক্তিযোদ্ধা কোম্পানিটিকে বিচলিত করে তোলে এবং তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। মুক্তিবাহিনী ওই এলাকা থেকে পশ্চাৎপসরণের পর মধুপুর থেকে আগত পাকবাহিনীর দলটি তাদের মূল দলের সাথে একত্রিত হয়ে পাইককান্দির দিকে রওনা হয়। পাকবাহিনীর যে দলটি ডুমুদিয়াতে অবতরণ করে তারাও তুদবাটি হয়ে পাইককান্দি-সোনাসুরের কাছে এসে পড়ে। উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির একপর্যায়ে পাইককান্দি-সোনাসুরে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ডান পাশের মুক্তিযোদ্ধা কোম্পানির প্রত্যাবর্তনের সংবাদে পিছু হটতে শুরু করে। মানিকহার এলাকা থেকে পশ্চাৎপসারণ করে গোপালগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা পুনরায় গোপীনাথপুর হাইস্কুল ও রামদিয়া বাজারে সমবেত হয় এবং প্রশিক্ষণের তাগিদে বিভিন্ন সময়ে ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করে। এভাবেই স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে সৃষ্ট গোপালগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাথমিক প্রতিরোধের সমাপ্তি ঘটে।
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত