ভাতকুড়ার সেতু ধ্বংস, টাঙ্গাইল
১৮ নভেম্বর কাদেরিয়া বাহিনী টাঙ্গাইল জেলা সদরে অবস্থিত ভাতকুড়া সেতু ধ্বংস করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী কমান্ডার মকবুল হোসেন খোকার নেতৃত্বে প্রথম দল ভাতকুড়া সেতু দখল করবে। কমান্ডার বজলুর নেতৃত্বে ত্রিশজনের দ্বিতীয় দল ভাতকুড়া সেতুর দেড় দু’মাইল উত্তরে টাঙ্গাইলের দিকে সড়ক আগলে থাকবে। পনের জনের তৃতীয় ও সর্বশেষ দলটি বাবুলের নেতৃত্বে ভাতকুড়ার মাইলখানেক দক্ষিণে ক্ষুদিরামপুর রাস্তার উপর অবরোধ সৃষ্টি করবে। উভয় দলের দায়িত্ব সেতু ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত রাস্তা আগলে রেখে কোনো দিক থেকে যাতে সেতুতে সাহায্য আসতে না পারে, তা নিশ্চিত করা। এছাড়া আরও পায় চল্লিশজন সহযোদ্ধা নিয়ে কাদের সিদ্দিকী মর্টার প্লাটুনের দায়িত্ব নেন।
ভাতকুড়া লৌহজং নদীর পাড়ে কর্ণেল জিয়ার কাছ থেকে নেয়া চায়নিজ ৩ ইঞ্চি মর্টারটি বসান হয়। নির্ভুল নিশানায় গোলাবর্ষণে অব্যর্থ সামাদ গামাও কাদের সিদ্দিকীর সহযোগী হন। পুল থেকে এক মাইল দূরে মর্টার বসানোর কাজ শেষ হলে সামাদ গামাকে মর্টারের কাছে বসিয়ে ভাতকুড়া গোরস্থানের পূর্ব দিকে পাকা রাস্তায় উঠে সরেজমিনে দেখে ফিরে এসে কাদের সিদ্দিকী সামাদকে গোলা ছুড়তে নির্দেশ দেন। সহযোদ্ধাদের নিয়ে কাদের সিদ্দিকী ভাতকুড়া গোরস্থানের কাছে আসা মাত্রই ভাতকুড়ার স্বেচ্ছাসেবক কমান্ডার দু’তিন জন মুক্তিযোদ্ধাসহ কাদের সিদ্দিকীর সামনে এসে বলেন- পুল দখল হয়েছে এবং রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করেছে। ভাতকুড়া পুলে ফিরে এসে মাত্র দু’জনকে রেখে কাদের সিদ্দিকী সবাইকে দক্ষিণে সরে যেতে বলেন। ইতোমধ্যে হাবিবের দ্বারা (বিস্ফোরক বিশারদ) ভাতকুড়া সেতুতে বিস্ফোরক লাগিয়ে কর্টেক্স ডেটেনেটর সংযোগ করা হয়েছে। রাত ১০ টায় ভাতকুড়া সেতুতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরণে সেতুটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হলো না। ব্রিজটি দুমড়ে মুচড়ে রাখার জন্য দ্বিতীয়বার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এবার পুলটির বেশিরভাগ অংশ ভেঙ্গে নিচে পড়ে যায় এবং বাকি অংশ পূর্বদিকে হেলে পড়ে। সফল হয় কাদের সিদ্দিকীর পরিকল্পনা।
[৫৯৫] ফিরোজ খায়রুদ্দিন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত