কাশিয়াবাড়ী গণহত্যা
একাত্তরের ১১ জুন গাইবান্ধার পলাশবাড়ী থানার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নে কাশিয়াবাড়ী গ্রামের হিন্দু পাড়ায় পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পৈশাচিক ঘটনা সংঘটিত করে। তারা খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজসহ সকল ধরনের মানবতা বিরোধী কাজ সম্পন্ন করে। ঘটনার নৃশংসতা এমন ছিল যে নরঘাতকরা ১৬৮ জনকে হত্যা করে অথচ কাউকেই গুলি করে নাই। ওইদিন ভোরে দিনাজপুর ঘোড়াঘাটের বিহারী কলোনীর বিহারী এবং রাজাকাররা ভোরবেলায় করতোয়া নদী পার হয়ে কাশিয়াবাড়ী প্রবেশ করে। তারা আশপাশের সগুনা, কেশবপুর, রামচন্দ্রপুর, হাইতর, হাসানঘোড়সহ কয়েকটি গ্রাম ঘিরে ফেলে। গ্রামবাসী টের পেয়ে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয় বিহারী ও রাজাকারদের কারণে তারা পালাতে পারে নাই। প্রায় দু’হাজার গ্রামবাসীকে আটক করে কাশিয়াবাড়ী হাইস্কুল মাঠে জড়ো করে। সেখানে নারী ও শিশুদের পৃথক করা হয়। এরপর পুরুষদের থেকে বেছে বেছে বিশেষত হিন্দুদের পৃথক করা হয়। নারীদের পাশে কাশিয়াবাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আটক করে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। সেখানে ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ফুলবানু নামে এক বাঙালি নারী ধর্ষণের ফলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। গিরিবালা নামে একজনকে ধর্ষণের পর উলঙ্গ করে খুঁটির সাথে বেঁধে ফেলে তাঁর স্তন বেয়োনেট দিয়ে ছিন্নভিন্ন করে তাঁকে হত্যা করে। অপরদিকে হাইস্কুল মাঠে বাছাই করা বাঙালিদের রামচন্দ্রপুর হিন্দু পাড়ার ডোবার পাড়ে দাঁড় করানো হয়। তারপর সেখানে বিহারী কসাই রমজান ও হানিফ মৌলানা বড় বড় রাম দা দিয়ে কাউকে জবাই, কাউকে কুপিয়ে বা নরবলির মতো করে হত্যা করে। হত্যার পর তাঁদের ডোবায় ফেলে দেয়। সেদিনের নৃসংশ হত্যাকাণ্ডের শিকার অনেক নারী ও সংখ্যালঘু হিন্দু যাঁদের নাম এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে তাঁরা হলেন—
ক্র. | শহিদের নাম | পিতার নাম | ঠিকানা |
১ | শহিদ রামবল্লভ কর্মকার | অজ্ঞাত | কাশিয়াবাড়ী, পলাশবাড়ী |
২ | শহিদ রাজেন্দ্রনাথ শীল | রাজবিহারী শীল | কাশিয়াবাড়ী, পলাশবাড়ী |
৩ | শহিদ অতুল চন্দ্র কারমাইকেল কলেজের ছাত্র | কুমুদ চন্দ্র প্রামানিক | রামচন্দ্রপুর, পলাশবাড়ী |
৪ | শহিদ কুমুদ চন্দ্র প্রামানিক | বঙ্গবিহারী প্রামানিক | রামচন্দ্রপুর, পলাশবাড়ী |
৫ | শহিদ জ্ঞানেন্দ্র নাথ দাস | অজ্ঞাত | রামচন্দ্রপুর, পলাশবাড়ী |
৬ | শহিদ উপেন্দ্রনাথ | অজ্ঞাত | রামচন্দ্রপুর, পলাশবাড়ী |
৭ | শহিদ ক্ষুদিরাম | অজ্ঞাত | রামচন্দ্রপুর, পলাশবাড়ী |
৮ | শহিদ গৌরহরি | অজ্ঞাত | রামচন্দ্রপুর, পলাশবাড়ী |
৯ | শহিদ নরেন্দ্রনাথ | রাজেন্দ্রনাথ পন্ডিত | জাইতর, পলাশবাড়ী |
১০ | শহিদ সিতারাম | অজ্ঞাত | কাশিয়াবাড়ী, পলাশবাড়ী |
১১ | শহিদ চেংটু মন্ডল | অজ্ঞাত | কাশিয়াবাড়ী, পলাশবাড়ী |
১২ | শহিদ কালু দাস | অজ্ঞাত | কাশিয়াবাড়ী, পলাশবাড়ী |
১৩ | শহিদ গাদু সরকার | অজ্ঞাত | কাশিয়াবাড়ী, পলাশবাড়ী |
১৪ | শহিদ মুকুন্দ শীল | অজ্ঞাত | কাশিয়াবাড়ী, পলাশবাড়ী |
১৫ | শহিদ বালু রাম দাস | অজ্ঞাত | কাশিয়াবাড়ী, পলাশবাড়ী |
১৬ | শহিদ মহিন্দ্র নাথ দাস | অজ্ঞাত | কাশিয়াবাড়ী, পলাশবাড়ী |
১৭ | শহিদ রমেশ চন্দ্র সরকার | অজ্ঞাত | পবনাপুর, পলাশবাড়ী |
১৮ | শহিদ মনিন্দ্র লাল সরকার | অজ্ঞাত | পবনাপুর, পলাশবাড়ী |
১৯ | শহিদ গগণ চন্দ্র দাস | অজ্ঞাত | পবনাপুর, পলাশবাড়ী |
২০ | শহিদ শিবচরণ সরকার | হরিদাস সরকার | রামচন্দ্রপুর, পলাশবাড়ী |
২১ | শহিদ ফুলবানু | অজ্ঞাত | কাশিয়াবাড়ী, পলাশবাড়ী |
কাশিয়াবাড়ী নারী নির্যাতন
কাশিয়াবাড়ী গণহত্যার দিন অসংখ্য নারী ধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষিতা নারীগণ অধিকাংশই সংসার ও সামাজিক সংস্কারের কারণে নিজের উপরে ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনা প্রকাশে সম্মত নন। যে কজনের নাম পাওয়া যায় তাঁরা হলেন—
ক্র. | নির্যাতিত নারী পুরুষের নাম | পিতার নাম | ঠিকানা |
১ | শহিদ ফুলবানু
(৭ মাসের গর্ভবতী। ধর্ষণের পর স্তন বিচ্ছিন্ন করে দেয় বর্বর খান সেনারা) |
অজ্ঞাত | কাশিয়াবাড়ী, পলাশবাড়ী |
২ | গিরিবালা | অজ্ঞাত | কাশিয়াবাড়ী, পলাশবাড়ী |
(পূর্ণাঙ্গ তালিকা নয়)
সূত্র: উত্তর রণাঙ্গনে সংখ্যালঘু গণহত্যা ও নারী নির্যাতন– এসএম আব্রাহাম