হরিরামপুরের যুদ্ধ, মেহেরপুর
জুন মাসের ১৭ তারিখে বিহারের চাকুলিয়া থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ শেষে মেহেরপুর জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম ব্যাচ নিজ এলাকায় প্রবেশ করে। মেহেরপুর থানার পধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা বেতাই এ্যাকশন ক্যাম্পে এসে পৌছানোর পর মেহেরপুর থানার বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। গাংনী থানার মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই শিকারপুর এ্যাকশন ক্যাম্পে এসে তেতুলবাড়িয়া সহড়াতলা সীমান্ত হয়ে বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। আলমডাঙ্গা থানার প্রথম ব্যাচের মুক্তিযোদ্ধারাও আব্দুর হান্নানের নেতৃত্বে এই পথেই এ দিন দেশে প্রবেশ করে। সপড়াবাড়িয়া থেকে মিনাপাড়া হয়ে মিনাডাঙ্গা নদী পেরিয়ে আলমডাঙ্গা পৌছে। গাংনী থানার ভেতর দিয়ে গড়ে ওঠা এই কর্দমাক্ত সংকীর্ণ গ্রাম্য পথটিই দূর-দূরান্তের মুক্তিযোদ্ধারা ব্যবহার করেছে নিরাপদ পথ হিসেবে। কিন্তু সেই দুঃসময়ে এ পথ সব সময় নিরাপত্তা বিধান করতে পারেনি। বিশেষ করে জোড়পুকুরে এসে মেহেরপুর কুষ্টিয়া প্রধান সড়ক অতিক্রমের সময় হয়ে উঠতো ঝুঁকিপূর্ণ। এই জোড়পুকুরে এ সে বিভিন্ন সময়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা, রাজাকার-পাকসেনাদের হাতে ধরা পড়ে। ১৭ জুন চাকুলিয়া থেকে প্রশিক্ষণ শেষে মেহেরপুর জেলার একদল মুক্তিযোদ্ধাকে ৯নং সেক্টরের হিঙ্গলগঞ্জ এ্যাকশান ক্যাম্পে পাঠানো হয়। এদিন মুজিবনগর এলাকায় পাকসেনাদের হাতে ধরা পড়ে শহীদ হন রতনপুরের মুক্তিযোদ্ধা রমজান খান। এদিকে হরিরামপুরে গিয়ে পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে পিছু হটে আসার আগে কয়েকজন নিরীহ গ্রামবাসীকে বেয়োনেট বিদ্ধ করে। হরিরাম্পুরের এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা কমরউদ্দীন, কামালউদ্দীন, জোয়াদ আলীসহ ১২ জনের একটি সেকশন অংশগ্রহণ করে। পরদিন হাবিলদার আব্দুল মতিন পাটোয়ারীর নেতৃত্বে আইয়ুব আলী, মোহাম্মদ আলী খরিশ, শামসুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেনসহ ১৫ জনের একটি মুক্তিযোদ্ধা দল ইচাখালি সজিপাড়ায় পৌছালে পাকবাহিনীর একজন নিহত এবং দুজন আহত হয়।
[১০৩] রফিকুর রশীদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত