You dont have javascript enabled! Please enable it! হবিগঞ্জ শহর আক্রমণ, হবিগঞ্জ - সংগ্রামের নোটবুক

হবিগঞ্জ শহর আক্রমণ, হবিগঞ্জ

৩৩ জন মুক্তিযোদ্ধা ভারতের সিংগিছাড়া থেকে বোরুসীনবাড়ি হয়ে রাণীগাঁও,গাভিগাঁও, পাঁচগাঁও গ্রাম পার হয়ে ষাটিয়াজুরীর মধ্য দিয়ে মিরপুর নতুন বাজারের দিকে মিরপুর-শ্রীমঙ্গল মহাসড়ক অতিক্রম করে বাহুবল থানার আকিলপুর গ্রামে একজন হাজী সাহেবের বাড়িতে রাত্রিযাপন করে। পরদিন সন্ধ্যার পর বখতারপুর,শুয়াইয়া,সারংপুর গ্রামে যথাক্রমে জাফর মেম্বার, হুসেন আলী মাস্টার ও কালাহাজীর বাড়িতে অবস্থান করে। এখানে ১৫/১৬ দিন থাকার পর ২৮ তারিখ রাতে নৌকাযোগে টঙ্গির ঘাট হয়র রামপুর বাঁধে আসে। রামপুর বাঁধের মিলনস্থল নির্ধারণ করে ৩৩জন মুক্তিযোদ্ধা তিনটি সেকশনে বিভক্ত হয়ে হবিগঞ্জ শহর আক্রমণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। উল্লেখ্য যে, ২৮ডিসেম্বর হবিগঞ্জ ঈদগাহ মাঠে পাকিস্তানীদের একটি সমাবেশ হয়। সমাবেশ সভাপতিত্ব করেন শান্তি কমিটির হবিগঞ্জ মহকুমা আহবায়ক সৈয়দ কামরুল আহসান। বক্তব্য রাখেন আব্দুল বারী মোক্তার, আবদুল্লাহ এডভোকেট, শাহাবুদ্দিন এডভোকেট, সুরত আলীসহ আরো অনেকে। বক্তাগন মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তথা পাকিস্তানী শক্তিকে শক্তিশালী করবার জন্য জনগণকে আহবান জানায়। মুক্তিযোদ্ধারা এর শক্ত প্রতিবাদে তিনটি বাহিনীতে বিভক্ত হয়ে গেরিলা হামলা চালায়। একটি গ্রুপকে থানা ও ওয়ারলেস আক্রমণের দায়িত্ব দেয়া হয়। দ্বিতীয় গ্রুপটিকে দায়িত্ব দেয়া হয় ওয়াপদা আক্রমণ করবার জন্য। তৃতীয় গ্রুপটিকে দেয়া হয় পুরাতন বাজারসহ উমেদনগরে রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করবার জন্য। সাবু মিয়ার ( সুনেমা হলবাজার ) গ্রুপ ওয়ারলেস টাওয়ারে অত্যন্ত সুকৌশলে আক্রমণ করে ধবংস করে। আবদুস শহীদের গ্রুপ ওয়াপদা আক্রমণ না করে পানির ট্যাঙ্কি আক্রমণ করে ট্যাঙ্কি উড়িয়ে দেয়। জালালউদ্দিনের গ্রুপ পাকিস্তানী দালাল উমেদনগরের লুদাই হাজীকে ধরে নিয়ে যায় এবং রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণ করে। রাত ২টায় একই সাথে তিনটি গ্রুপের মোট ৩৩জন সদস্য এসএমজি, এসএলআর, ২ইঞ্চি মর্টার গ্রেনেড, রকেট লাঞ্চার ইত্যাদি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে রাজাকার পাক বাহিনীদের আতংক সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়। রাত ৪ টার দিকেমুক্তিযোদ্ধারা নির্দিষ্ট স্থানে চলে যায়। এই অভিযানে সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান বাচ্চু গাইড হিসেবে সার্বক্ষণিক দায়িত্বে ছিলেন। বলা যায় তার প্রেরণাই মুক্তিযোদ্ধারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন রাখেন। সিরাজ মিয়া (ষাটিয়াজুরী),আবদুল্লাহ,আবদুল লতিফ (বড় বাহুলা),শুকুর আলী (কাটাখালী),রেফাই মিয়া (দোউলতপুর),হাবিব মিয়া (ভাদেশ্বর),তৈয়ব আলী (মুশাজান),কালা মিয়া(সুলতানশী),সিরাজ মিয়া (সুলতান মাহমুদপুর),আবদুস সাত্তার (মোহনপুর),সিরাজুদ্দিন(সিলেট),আ.শহিদ(পাঁচগাঁও),রইছ আলী (পুরানমুন্সফ),আজগর আলী (বড় বহুলা),আবু মিয়া (মশাজান) প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। এই সময়ে আতাউর রহমান নিম্বর আলী মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করেন।
[৬৩] মাহফুজুর রহমান

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত