You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.07 | সুচিপাড়া খেয়াখাটের যুদ্ধ, চাঁদপুর - সংগ্রামের নোটবুক

সুচিপাড়া খেয়াখাটের যুদ্ধ, চাঁদপুর

১৯৭১ সাল ৭ সেপ্টেম্বর চাঁদপুরের শাহরাস্তি থানার সুচিপাড়া নামক স্থানে মুক্তিবাহিনী ও পাকবাহিনীর সাথে সকাল ৯ টা হতে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত প্রচন্ড লড়াই হয়। সেদিন ভোর ৬ টার সময় প্রায় ২০০ রাজাকার ও পাকসেনা গোপনে সুচিপাড়া খেয়াঘাটে জড়ো হয়ে এপারে আসার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। রাজাকাররা নদী সাঁতরিয়ে এপার এসে ৪/৫ টা নৌকা নিয়ে পাকসেনাদের এপারে নিয়ে আসতে থাকে। ইতিমধ্যে পাকসেনারা বিভিন্ন অবস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে মার খেয়েছে তাই সতর্কতার সাথে, আগাম কোন শব্দ না করে, গোলাগুলি না করে এপারে এগিয়ে আসতে থাকে। এদিকে পাঠান বাহিনীর ২ নং প্লাটুন কমান্ডার হাবিলদার রশীদ (ইপিআর) ও মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন খানসহ তিনি বাড়ির ফাঁকে ফাঁকে তাদের অবস্থান দেখে শুনে মিয়াজি বাড়ির পুকুরে অবস্থান নেন। সাথে পাশের গ্রামের একজন সাধারণ ছেলে যে পথঘাট চেনে। বাম পাশে তাদেরই একটা সেকশন পাটোয়ারী বাড়িতে অবস্থান নেন। বহুক্ষণ অপেক্ষার পর পাকবাহিনী ৩৫/৪০ গজের মাথায় চলে আসে। শুরু হয় আক্রমণ। রাস্তার উপর প্রথম আক্রমণেই ১০/১২ জন পড়ে গেল। ১০ মিনিট পর উভয় পক্ষে চলল লড়াই। অথৈ পানি। পাকবাহিনী খুঁজে পাচ্ছেনা উপযুক্ত স্থান। বহুদূর থেকে ৩ ইঞ্চি মর্টারের শেলিং মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে পিছনে পড়ছে। একটানা কয়েক ঘন্টা লড়াইয়ের পর তারা সমস্ত লাশ নিয়ে নদীর ওপারে চলে গেল। এবার মুক্তিযোদ্ধাদের পিছন থেকে ২৫/৩০ জন লোক একত্রে চিৎকার করে স্লোগান দিয়ে দৌড় মারল। পাকবাহিনী তখনো ওপারে থেকে মাঝে মাঝে ফায়ার করছে। মুক্তিযোদ্ধারা জনতাকে পিছনে সরানোর জন্য পজিশন ছেড়ে একা সামনে এগিয়ে গেলে রাস্তার উপর পাওয়া গেল একটি হেলমেট এবং রাস্তার উপর রক্ত এবং মাথার মগজ। হেলমেটটির সামনে ছিদ্র হয়ে গুলি মাথায় ঢুকেছে। পাশে রাস্তার উপর একটি মানিব্যাগ পাওয়া গেল তাতে ছেলেটির বউ এবং দুই বাচ্চার ছবি ও কিছু টাকা আছে। হঠাত জনতা দেখতে পেল ২০/২৫ হাত দূরে ধানক্ষেতে কিছু একটা নড়ছে। জনতা দেখা মাত্রই লাফিয়ে গিয়ে দেখে পাকফৌজটি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। পাক ফৌজটির বুকে এবং এবং কাঁধে গুলি লেগেছে। জনগণ ধর ধর পাঞ্জাবী ধর বলে মৌমাছির মত ঝাঁপিয়ে পড়ল। তারা পাক ফৌজটিকে কিলিয়ে পানিতে ফেলে ডুবিয়ে মেরে ফেলল। যুদ্ধ শেষ তবু হাজার হাজার জনতা মুক্তিফৌজ দেশী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের সাহায্যে ছুটে আসে। সেদিনের যুদ্ধে ৩০ জন পাক সৈন্য নিহত ও বহু আহত হয়। পাক বাহিনী পরে সুচিপাড়া থেকে মেহের পর্যন্ত কাফু দিয়ে লাশ নিয়ে যায়। আহতদের চাঁদপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত