সাহাপুর গড় ওবড় জামবাড়িয়া আক্রমণ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৯ নভেম্বর (১৯ রমজান) মঙ্গলবার ভোরে নওয়াবগঞ্জের সাহাপুর গড়ের ৪টি গ্রাম ও বড় জামবাড়ীয়ার অধিবাসীদের মাঝে নেমে আসে এক ঘোর অমানিশা। কে জানতো পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর দালাল রাজাকারদের সম্মিলিত তান্ডবে ঘটে যাবে মানবতার নিষ্ঠুরতম ধবংসলীলা আর হত্যাযজ্ঞ। শত্রুবাহিনী যখন কোনভাবে মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে পেরে উঠতে পারছিল না অর্থাত তাদের নাস্তানাবুদ (ত্রাহি) অবস্থা তখন এই মানবরূপী দজ্জালেরা নিরীহ-নিরপরাধ সাধারণ মানুষ, অবোধ শিশু, নারী বৃদ্ধ বৃদ্ধার উপর, হিংস্র জংলী পশুর মতো ঝাপিয়ে পরে। ধর্মের মুখোশধারী পাকিশাসকদের আজ্ঞাবহ বাহিনী পবিত্র মাহে রমজানের সেহরী খাওয়ার সময়ে এবং ফজরের আযানের পূর্ব মূহূর্তে আকস্মিকভাবে হামলা চালিয়ে যে নিষ্ঠুরতম হত্যা ও ধংসলীলা চালায় তা শুধু মানবতার ইতিহাসের ঘৃণার অবতারণা করেনি, রীতিমতো ধর্মীয় ভাবার্দশকে কুঠারঘাত করেছে। শত্রুবাহিনীর এই বর্বর হামলায় ৫টি ফ্রামের মানুষের গগন বিদারী বুক ফাটা আর্ত-চিৎকারে সেদিন সুবহে-সাদেকের সুশীল হাওয়ায় ভারী হয়ে গিয়েছিল, প্রত্যুষের নির্মল আলো অগ্নিদাহের লাল-কালো লেলিহান শিখায় বিবর্ণ হয়ে পড়েছিল আর বাংলার সবুজ শ্যামল উর্বর ভূমি নিষ্কলুষ মানুষের তাজা রক্ত ও বিকৃত লাশের স্তূপে বীভৎস রূপে আবৃত হয়েছিল। মহান সৃষ্টিকর্তার এই ধরাবক্ষে বাংলার মুক্তিমাটি যতদিন অটুট থাকবে ততদিন সেদিনের এই নিষ্ঠূরতা জন্মন্তরে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। পাকিস্তানী বর্বর হানাদার বাহিনী সুপরিকল্পিতভাবে নিরীহ মানুষের ওপর এই হামলা পরিচালনা করে। শত্রুবাহিনী চৌডালা হাই স্কুল ক্যাম্প থেকে অগ্রসর হয়ে সাহাপুর গড় জামবাড়ীয়ায় হামলা করে। এই নৃশংস অভিযান চালানোর উদ্দেশ্যে শরতুবাহিনীর চৌডালায় শক্তি বৃদ্ধি করা হয়। অর্থাৎ রতনপুর এবি হাই স্কুল সেনাছাউনি থেকে চৌডালা ক্যাম্পে অতিতিক্ত সেনা সমাবেশ করা হয়। এই নির্মম গণহত্যা ও ধবংসলীলার পরিকল্পনার পেছনে অভিযান পরিচালনায় হানাদার বাহিনীর রহনপুর সেনাছাউনির ২৫ নম্বর পাঞ্জাব রেজিমেট হাই কমান্ডের সমর্থন ও নির্দেশনা ছিল। লোমহর্শক অভিযান রাজাকার বাহিনীর ভূমিকা ছিল মৃখ্য বলে প্রতীয়মান হয়। কারন ভূ-অবস্থানগত দিক থেকে সাহাপুর গড় ও বড় জামবাড়িয়া আক্রমণ করা পাকবাহিনীর পক্ষে খুব সহজ ব্যাপার ছিল না। রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার চৌডালার মোসলেম মিলিটারী (অবঃ সেনা সদস্য ) ছিল খুবই দুর্ধর্ষ ও নির্মম। জানা যায়, মোসলেম মিলিটারী ভয়ানক চরিত্রের পাকসেনা অফিসার মেজর ইউনুসের চেয়ে ও ছিল ভয়ানক। সাধারন পাকি সৈনিকরা পর্যন্ত তাকে দেখে ভয় করতো। অপেক্ষাকৃত কোমল স্বভাবের অপর এক পাক মেজর সাজ্জাদ ইউনুসের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘’যেখানে যায় ইউনুস, সেখানে থাকে না মানুষ’’। দেশ সাধীনতার পর বর্বর রাজাকা কমান্ডার মোসলেম মিলিটারী প্রান রক্ষার্থে গা ঢাকা দেয় এবং পরে কৌশলে আত্মসমর্পণ করে। অতঃপর স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর সে জেল থেকে ছাড়া পায়। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে-স্বাধীনতার শ্ত্রু হয়ে হত্যা ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের নায়ক রাজাকার কমান্ডার মোসলেম মিলিটারী মৃত্যু পর্যন্ত সেনাবাহিনীর অবসর ভাতা ভোগ করে। সাহাপুরের জামুরুদ্দীন মোড়লের বাড়িতে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প ছিল। আর ঝালু হাজীর বাড়িতে ছিল খানা তৈরির পাকঘর। সাহাপুর গড়ের এই ডিফেন্সের অধিনায়ক ছিলেন ইপিআরের নায়েক ওয়ারিশ মোল্লা। প্লাটুন কমান্ডারদের মধ্যে আজমতপুরের মহসিন, সেকশন কমান্ডার লছমনপুরের মশিউর, রহনপুরের জিল্লার-অন্যতম। সাহাপুর গড় থেকে দক্ষিণে কালন বিল অচিমুখে ৪/৫ প্লাটুন মুক্তিবাহিনী ডিফেন্স নিয়ে অবস্থান করছিলেন। মুক্তিবাহিনীর এই ডিফেন্সের আর একটি অগ্রবর্তী দল চকমজুমদার গ্রামের পুর্ব মাথায় আশ্বিনা আমবাগানে বাঙ্কারে অবস্থান করছিল। ডিফেন্সে এফএফ বাহিনীর তেরজন যোদ্ধা কর্তব্যরত ছিলেন। এই এলাকায় শত্রুবাহিনীর হামলার আশংকা কম ভেবে এগারজন যোদ্ধা বাঙ্কারে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন এবং দুইজন সেন্ট্রি প্রহরায় ছিলেন কিন্তু শ্ত্রুবাহিনী রাত সাড়ে ৩টা-৪টার মধ্যে আকস্মিকভাবে অগ্রগামী হয়ে খুব কাছে এসে পড়লে সেন্ট্রি ২ জন ভয়ে এতই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন যে তারা কোন সিগন্যাল না দিয়েই পেছনে পালিয়ে যান শত্রুরা বাঙ্কারে ঘুমন্ত অবস্থায় ওই ১১ জন এফএফ যোদ্ধাকে প্রথমে বেয়নট র্চাজ করে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ওই সব যোদ্ধাদের অধিকাংশই ছাত্র ছিলেন। এরপর শুরু হয় হানাদারবাহিনীর গোলন্দাজ কামানের গোলা বর্ষণ। প্রচণ্ড শিলা- বৃষ্টির চেয়েও ভয়াবহ গোলা বর্ষণ করে। শত্রুবাহিনীর এই আক্রমণে এখানে প্রায় ১৭ জন বীরযোদ্ধা ও অবলীলাক্রম হানাদারবাহিনীর বর্বর তান্ডবে শাহাদাৎ বরণ করেন। তাঁদের মধ্যে নওগার মদন কুমার ওরহনপুর কলোনীর তারেক শহীদ হন। নিষ্ঠুর নরঘাতক টিক্কা খানের অনুসারে পাকিফৌজ প্রায় ১৫০ জন এবং রাজাকার ও তাদের লুটতরাজকারী সহযোগী আত্মীয়-স্বজন প্রায় ৩০০/৩৫০ জনের বৃহৎ দলের একটি গ্রুপ চৌডালা থেকে নরশিয়ার পৃর্ব-পশ্চিমমুখী রাস্তা দিয়ে অগ্রসর হয়। অপর একটি গ্রুপ নরশিয়ার দক্ষিন দিক দিয়ে আসে এবং তৃতীয় গ্রুপ্টির রাজাকাররা আড়গাড়া হয়ে এসে ছোট জামবাড়িয়া গ্রামের খড়বড়ো দাঁড়ার (খাল) পৃর্ব দক্ষিণপারে অবস্থান নেয়। শত্রুদের পরিকল্পনা ছিল-তারা একযোগে ৩টি গ্রুপ সাহাপুর গড়, নরশিয়া, পলাশবোনা ও বড় জামবাড়ীয়া আক্রমন করবে। শ্ত্রুবাহিনীর প্রথম দুই গ্রুপ চকমজুমদার,নরশিয়া, সাহাপুর, পলাশবোনা একযোগে আক্রমণ করে কিন্ত রাজাকার রাজাকার বাহিনীর তৃতীয় গ্রুপটি সিগন্যাল না পেয়ে কিংবা সিগন্যাল বুঝতে না পেরে তারা দাঁড়ার দক্ষিণপারে অপেক্ষমাণ থাকে। তৃতীয় এই গ্রুপটি একসাথে হামলা করলে সাহাপুর গড়ের যে সব নারী-পুরুষ-শিশু ও মুক্তিযোদ্ধারা পালিয়ে আসার সুযোগ পেয়েছিলন তাঁরাও অবরুদ্ধ হয়ে মৃত্য মুখে পতিত হতেন। হানাদার বাহিনী, রাজাকার ও চৌড়ালা ইউনিয়নের লুটতরাজকারীরা চকমজুমদার, নরশিয়া,, সাহাপুর ও পলাশবোনা গ্রাম ঘিরে ফেলে শ্ত্রুবাহিনীর ভারী অস্ত্রেরমুখে গুলি বিনিময়ে টিকতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে দিকবিদিক পলায়ন করেন। কেউ যান কাশিয়াবাড়ির দিকে, আবার কেউ বড় জামবাড়ীয়া হয়ে বড়গাছী ও বিল দিয়ে আদমপুরে অবস্থান গ্রহন করেন আবার কেউ কেউ এতই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যে বিল পাড়ি দিয়ে ভোরাহাট সদর এলাকা পর্যন্ত পালিয়ে আসেন। পিছু হটে আসার সময় মুক্তিবাহিনীর ৩৭/৩৮ জনের একটি দল সাহাপুর গড় এলাকার একদল নারী-পুরুষ-শিমুকে গুলদহ বিলের পানি কিনার দিয়ে নিয়ে এসে জামবাড়ীয়া ইউনিয়নের হেলাচী গ্রামের মধ্যে দিয়ে আদমপুর গ্রামে রশিদ মেম্বারের বাড়ির কাছে উপস্থিত হন। এই দলের এক শিশু সাহাপুরের তাহিরের ছেলে আয়েশ (৪)-কে গুলদহ বিলে। শ্ত্রুদের ছোঁড়া গুলি পেটে লাগলে তার নাড়িভূড়ি বের হয়ে পড়ে এবং আদমপুরে এসে মারা যায়। সাহাপুর গড়ে মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহানের ডান হাতের কবঞ্জিতে শত্রু বাহিনীর ছোঁড়া গুলি লাগে ও ১টি গুলি ডান পায়ের উরুতে লেগে ছেচড়িয়ে যায়। এতে তিনি আহত হন। এছাড়া ঘাইবাড়ির মুক্তিযোদ্ধা জালালউদ্দিন শত্রুদের গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে ঞ্জান হারিয়ে ফেলেন এবং তাঁকে চিকিৎসার জন্য মালদেহে পাঠিয়ে দেয়ে হয়ে। ততক্ষণে সকাল হয়ে গেছে। এদিকে হানাদার বাহিনী তাদের দোসর রাজাকার ও লুটতরাজকারীর চকমজুমদার, নরশিয়া, সাহাপুর ও পলাশবোনা গ্রামে ব্যাপক নৃশংস হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগসহ ধ্বংসলীলা চালিয়ে বড় জামবাড়িয়া গ্রামে তান্ডবলীলা শুরু করে। শত্রুবাহিনী সাহাপুর গড়ে মানবতার নিষ্ঠুরতম বর্বরতা ও ধবংসলীলা চালায়। পাকি জল্লাদবাহিনী ২৬ সেপ্টেম্বর যে দিন বোয়ালিয়া ইউনিয়নের বোলিয়া , কালুপুরম, বঙ্গেশ্বরপুর, ঘাটনগর,লক্ষ্মীনারায়ণ,নওদাপাড়া,বাবুপুর, বৈরতলা, দরবারপুর প্রভৃতি গ্রামে ভয়াবহ হত্যা,ধর্ষণ,নির্যাতন,জ্বালাও পোড়াও ও ধ্বংসলীলা চালায়; সে দিন প্রায় দেড়শ’জন পাকিফৌজ সাহাপুর গ্রামে অনুপ্রবেশ করে এই গ্রামে তারা ১৫০ টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। তবে এই দিন হানাদাররা এই এলাকায় আর কোন ঘটনা ঘটায়নি। তারা মুক্তিবাহিনীর অবস্থান জানার জন্যই এই ধ্বংসলীলা চালিয়ে দ্রুত ফিরে যায়। তবে তখনো মুক্তিবাহিনীর ডিফেন্স সাহাপুর গড়ে স্থাপিত হয়নি। অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর মুক্তিবাহিনী ১০/১৫ দিন পরে সাহাপুর গড় এলাকায় ক্যাম্প ও ডিফেন্স স্থাপন করে। এই ঘটনার পর সাহাপুর গড়ের ৪টি গ্রামের অধিকাংশ মানুষ(উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত সবাই) বড় জামবাড়িয়া,বড়গাছীসহ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তবে প্রাস্তিক কৃষক ও মজুর শ্রেণীর অল্প সংখ্যক মানুষ কতক সময়ে গ্রামে অবস্থান করতেন। কিন্তু বন্যার পানি কমে যাবার পর সবেমাত্র কিছু কিছু পরিবার এই গ্রামগুলোতে বন্যা পরবর্তী ফসল আবাদের জন্যে আসতে শুরু করেছিল। জল্লাদ সেনানায়ক টিক্কা খানের ছায়ারূপী পাকিফৌজ ও রাজাকার কামান্ডার মোসলেম মিলিটারীর নেতৃত্বাধীন বাহিনী এবং চৌডালা ইউনিয়নের লুটতরাজকারীরা সাহাপুর গড় ও বড় জামবাড়িয়া যে বর্বরতা চালিয়েছিল তা হালাকু-চেঙ্গীস বাহিনীর বাগদাদ নগরীর ধ্বংসলীলা আর লুন্ঠনের যে লঙ্কাকান্ড নির্মমতা তাকেও যেন হারমানিয়েছিল। শত্রুরা সাহাপুর গড়ে পুরাতন কবরে লুকায়িত মুক্তিযোদ্ধাদের বাশের গুঞ্জ পুতে মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়। ঘর থেকে নিরীহ মানুষকে টেনে হিঁচড়ে বের করে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হাড়-মান্স ছিন্ন-ভিন্ন করে গুলি ও বন্দুকের বেয়নেট চার্জ করে নৃশংসভাবে হত্যা করে। সাহাপুরের গিয়াস কবিরাজের মাথায় কলস ও অন্যান্য জিনিস দিয়ে আঘাতের পর আঘাত করে চেহারা বীভৎস হয়ে পড়লে রাস্তায় কাঁদায় পুতে দেয়। কিন্তু মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে সে প্রাণে বেচে যান এবং এখনো জীবিত আছেন। এ দিকে নারী নির্যাতনের আর্তনাদে আকাশ-বাতাস কেপে উঠে। অন্তঃস্বত্ত্বা নারীদের পেটে লাথি মেরে নিদারুণ নির্যাতনের মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। মোহদীপুর থেকে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের দূর্ধর্ষ টাইগার বাহিনী অগ্রসর হয়ে বড় জামবাড়িয়ায় শত্রুদের পরাস্ত করে সাহাপুর গড়ে অনুপ্রবেশ করলে শত্রুবাহিনী পিছু হটে যাবার সময় চকমজুমদার গ্রামের ইলাম কবিরাজের ছেলে ফাইজুদ্দিনকে ধরে বোয়ারিয়া সাহেবের ঘাটের কাছে তাদের ঘটিয়ে নিয়ে যায়। সেখানে ফাইজুদ্দিনের শরীরে সিগারেটের আগুনের ছেকা দিয়ে পুড়িয়ে এক পর্যায়ে তার হাত-পা বেধে মহানন্দা নদীতে ফেলে দেয়। সৌভাগ্যক্রমে পানির নীচে তার হাতের বাধন খুলে যায় এবং স্রোতের তোড়ে সে ভেসে উঠলে জেলেরা তাকে উদ্ধার করে। আজও সে পাকি নির্যাতনের দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে বেচে আছেন এবং নাপিতের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। জল্লাদ শত্রুবাহিনীর (পাকফৌজ ও রাজাকার) নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞে নির্যাতনের নরশিয়া, চকমজুমদার,সাহাপুর ও পলাশবোনা গ্রামের যে সব নিরীহ হতভাগ্য শাহাদাৎ বরণ করেন, তাঁরা হচ্ছেন-চকমজুমদার গ্রামের (১) অরেজুদ্দিন, পিতা-আসমত আলী (২) ফকির উদ্দিন,পিতা-কার্ত্তিক মন্ডল, (৩) এরফান আলী,পিতা-ফকির উদ্দিন (৪) আয়েশ আলী পিতা-তাহির সেখ (৫) তালেব সেখ, পিতা-স্বামী-ভোলা সেখ (৬) জসুমুদ্দিন, পিতা-আমিরুদ্দিন (৭) আঃ রশিদ,পিতা-ইসরাইল (৮)জমিরুদ্দিন,পিতা-আমিরুদ্দিন। সাহাপুর গ্রামেরঃ (১) আইনুদ্দিন,পিতা-মুকুটউদ্দিন (২) পটল,পিতা-অয়েস মোল্লা (৩) শুকুরুদ্দিন,পিতা-সায়ুরুদ্দিন কবিরাজ,(৪) আকিমুদ্দিন ডুমন, পিতা-ফরিঙ্গা সেখ। পলাশবোনা গ্রামেরঃ (১) হামদুল, পিতা-সাবারত আলী। জল্লাদ পাকিফৌজ ও রাজাকার বাহিনীর হাতে নির্যাতনে… গুলিতে ও তাদের ব্রাশ ফায়ারে ভোলাহাট উপজেলার জামবাড়ীয়া ইউনিয়নের বড় জামবাড়িয়া গ্রামের শাহাদাৎবরণকারী হতভাগ্যরা হচ্ছেন-(১) নাসিরুদ্দিন,পিতা-নেকীতুল্লাহ (২) আঃ গফুর, পিতা-এফার মোল্লা (৩) তানেশউদ্দিন, পিতা-তমুজুদ্দিন মোল্লা (৪) ইলিয়াস আলী, পিতা-খাপুরুদ্দিন সরদার, (৫) সাজ্জাদ আলীর পিতা-খাপুরুদ্দিন সরদার (৬) আলেক,পিতা-আমুরুদ্দিন (৭) আঃ রশিদ,পিতা-হাবিবুল্লাহ (৮) ইয়াসিন সরদার, পিতা-লিভরসী সরদার, (৯) ফেলানী বিবি, স্বামী-সালেকউদ্দিন (১০) আকবর আলী, পিতা-ফকিরউদ্দিন (১১) আজেদা,পিতা-বরকত মোল্লা। নিহতদের মধ্যে ইলিয়াস আলী ও সাজ্জাদ আলীর পিতৃপরিবার পরবর্তীতে নরশিয়া-চকমজুমদার গ্রামে আবাস স্থাপন করে। আর আকবর নরশিয়া-চকমজুমদার গ্রামের ফকিরউদ্দিনের পুত্র। সে বড় জামবাড়িয়া গ্রামে মোসাঃ বিসনিকে বিয়ে করে ঘরজামাই হিসেবে এই গ্রামে বসবাস করতো। এছাড়া বড় জামবাড়িয়া গ্রামে আশ্রয় গ্রহণকারী সাহাপুর গ্রামের আকিমুদ্দিন ডুমুন,পিতা ফরিঙ্গা এবং চৌডালার মুক্তিযোদ্ধা মহসিনের পিতা অজেদ আলী, পিতা রাসূল এবং সাহাপুর গ্রামের নাম না জানা এক মহিলা শত্রুর হাতে শাহাদাৎ বরণ করেন। এখানে উল্লেখ্য,গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার রাজাকার ও পিসকমিটির সদস্যদের অত্যাচার প্রাণ নাশের ভয়ে অজেদ আলী বড় জামবাড়িয়া গ্রামে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তার ছেলে ১৫/১৬ বছরের মহসিন আলী মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার কারণে অতি হোশীষ ছেলের মায়া ছাড়তে না পেরে ছেলেকে দেখার জন্যে প্রায়শ ডিফেন্সে যেতেন। শত্রুবাহিনীর আক্রমণের দিন রাতে অজেদ আলী মুক্তিবাহিনীর সাহাপুর ডিফেন্স যান এবং ক্যাম্পে রাতে অবস্থান করেন। সাহাপুর ডিফেন্স কামান্ডার ওয়াশিল মোল্লা ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন। শত্রুদের হামলার সময় মুক্তিযোদ্ধার পিতা আজেদ আলী সেহরী খেয়ে ফজরের নামাজের জন্য অজু করছিলেন। এমন সময় হানাদারদের গোলাগুলির তাণ্ডবে তিনি বড় জামবাড়িয়া অভিমুখে দৌড়ে পালিয়ে আসতে থাকেন। কিন্তু বৃদ্ধ অজেদ আলী আমবাগানের উঁচু-নীচু স্থানে রাতের আধাঁরে পরে গেলে রাজাকাররা তাঁকে ধরে ফেলে এবং একমাত্র মুক্তিযোদ্ধার বাবা হবার কারণে রাজাকার কমান্ডার মোসলেম মিলিটারীর নির্দেশে রাজাকাররা তাঁকে বেয়নেট চার্জ ও গুলি করে হত্যা করে। চকমজুমদার, নরশিয়া ও বড় জামবাড়িয়া গ্রামে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং গণহত্যার শিকার হতভাগ্য নিরীহ মানুষের গণকবর আছে। অতঃপর ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর নেতৃত্বাধীন মুক্তিবাহিনীর পাল্টা আক্রমণের পর হানাদারবাহিনীর ফেলে যাওয়া মাইন বিস্ফোরণে বড় জামবাড়িয়া গ্রামের ফিরোজ সেথের ছেলে আকবর আলীর বাম হাতের কব্জি উড়ে যায় এবং আজিজের ছেলে তাসু ও উমুদ্দিনের ছেলে এস্তাজ জখম হয়। পাকি হানাদার ও রাজাকার বাহিনীর হত্যাযঞ্জের পাশাপাশি তাদের সহযোগী লুটপ্টকারীরা ব্যাপক লুটপাট করে। যেমনটি মার্কিনীরা ইরাক দখল করার পর (২০০৩ খ্রিঃ ২০ মার্চ-৯ এপ্রিল যুদ্ধ)বাগদাদ লাইব্রেরী, জাতীয় যাদুঘর ও অন্যান্য সম্পদ লুটপাট করে। লুটপাটকারীরা জনসাধারণের ধান,চাল,ডাল,গরু,মহিষ,ছাগল,হাঁস,মুরগী, কাপড়-চোপড়,লেপ-ক্যাঁথা,থালা-বাসন থেকে শুরু করে যাবতীয় তৈজসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়। তাদের লুটপাট এতই নিদারুণ ছিল যে, তারা ঘরের দরজা-জানালার চৌকাঠ পর্যন্ত খুলে নিয়ে গিয়েছিল। কাপড়ের একটি ন্যাকড়া পর্যন্ত ছিল না। লুটপাট করে দস্যুরা ঘরবাড়ি আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। যুদ্ধ শেষে মুক্তভূমির স্ব-গ্রামে ফিরে সাহাপুর গড়ের সাহাপুর, নরশিয়া, চমকমজুমদার, পলাশবোনা ও বড় জামবাড়িয়া গ্রামের মানুষ ভিটেবাড়ির মাটি ছাড়া কিছুই পায়নি। মাতৃভূমি স্বাধীন্তার ৩৩ বছর পরও লুণ্ঠিত এই জনপদের মানুষের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। এই সব গ্রামের মানুষের অনেকেরই বাড়িতে এখনো গরু-ছাগল বাঁধার সামর্থ্য নেই। নেই ধানের গোলা, ভাল পোশাক পরিধান করা কিংবা ছেলে মেয়েদের শিক্ষা-দীক্ষায় বড় মানুষ গড়ার সামর্থ্য অধিকাংশেরই নেই। দেশমাতৃকার স্বাধীনতার যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই সব জনপদ চির অবহেলিত রয়ে গেছে। এই সব গ্রামের মানুষ সেদিনের দুর্দশার দুঃসহ স্মৃতি আজো বক্ষে ধারন করে আছেন কথা প্রসঙ্গে নরশিয়ার প্রবীণ ব্যক্তিত্ব এমাজুদ্দিন মন্ডল মুক্তিযোদ্ধের বিভীষিকাময় ঘটনার করুণ স্মৃতির বর্ণনা দেন। বর্বর দখলদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকারা সাহাপুর গড় অধিকার করে বড় জামবাড়িয়া পর্যন্ত করায়ত্ত্ব করেছে। আগুনের লেলিহান শিখায় সমগ্র এলাকা দাউদাউ করে জ্বলছে। চতুর্দিকে ভিঁটেছাড়া মানুষের আহাজারী ধ্বনিত হচ্ছে। শত্রুরা মণের উল্লাসে মানুষের ঘাম ঝরা শ্রমে পালিত গরু-ছাগল জবাই করে মহা ধুমধামে রান্না-বান্না শুরু করেছে। যেন তারা লঙ্গরখানা খুলেছে। নরশিয়ার এমাজুদ্দিন মন্ডলের কোরবানীর পোষা খাসিটিকেও নরপশুরা হত্যা করে উনুনে চাপিয়েছে। সাহাপুর গরে ও বড় জামবাড়িয়ার উত্তর পাড়ায় শত্রুদের ধুমধাম করে তৈরি চলছে। একই সাথে গনহত্যা,লুটপাট ও জ্বলাও-পোড়াও চলছে তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ধর্মীয় রাষ্ট্রব্যবহার ধ্বজাধারী এই জল্লাদরা পবিত্র মাহে রমজানের মর্যাদা পর্যন্ত রাখেনি। সাহাপুর গড়ে যখন শত্রুরা লঙ্কাকান্ড চালায় তখন নরশিয়ার গোপারের ছেলে মোজফফার এতি ভীত-সন্ত্রন্ত হয়ে পড়েছিলেন যে, তিনি এক দৌড়ে ঘাট-অঘাট পাড় হয়ে মোহদীরপুর গিয়ে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সাহবেকে এই পাকি বর্বরতার খবর পৌছে দেন। জাহাঙ্গীর সাহেব তখন মেসওয়াক করেছিলেন। সাব-সেক্টর কামান্ডার ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর সংবাদ পেয়ে তাঁর সুসজ্জিত একাশি এমএম (৮১ সস) মর্টার প্লাটুনের চৌকস দলসহ টাইগার বাহিনীর ৪০ জন সদস্য নিয়ে পায়ে হেঁটে বারমাসা দাঁড়া (খাল) পার হয়ে আদমপুর গ্রামে উপস্থিত হন। ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর সাহেবের সাথে ছিলেন লেঃ বজলুর রশিদ ও সুবাদার ডাঃপিয়াস। এখানে (আদমপুরে) পিছু হটে আসা (৩৭/৩৮) জন মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান করছিলেন। ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর আদমপুরে পিছু হটে আসা যোদ্ধাদের সাথে মিলিত হন এবং এখানে মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলীর কাছে সব কিছু অবগত হন। যে সব মুক্তিযোদ্ধা বিভিন্ন দিকে পালিয়ে গেছেন তাদের ব্যাপারে তিনি ক্ষুব্ধ পতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। অতঃপর কাপ্টেন জাহাঙ্গীর শত্রুর মোকাবিলা করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর সাহেবের নেতৃত্বাধীন টাইগার বাহিনীর দল ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে রাস্তা চিনিয়ে নিয়ে বড়গাঙ্গী গ্রামের উত্তর-পূর্বের রাস্তা ধরে হেলচী গ্রাম হয়ে দক্ষিণে দাঁড়ায় (খাল) ধার দিয়ে ছোট আমবাড়িয়ার পূর্ব মাথায় অর্থাৎ বড় জানবাড়িয়া ব্রীজের পশ্চিমে অবস্থান গ্রহণ করেন। সময় তখন বেলা ১২:৩০ টা বেজে গেছে। সেখানে ইয়াসিন আলীর ইটভাটা ছিল। ওই সময়ে হানাদার বাহিনী ছোট জামবাড়িয়া গ্রামে শলাইয়ের কাঠি দিয়ে একটি বাড়িতে আগুন ধরাতে যাচ্ছিল। লেঃ বজলুর রশিদ সহযোদ্ধাদের সবাইকে নীরব থাকতে বলে ব্রাশ ফারায় করেন। এতে ১জন পাকসেনা নিহত হয়। এরপর শুরু হয় দাঁড়ায় উভয়পার থেকে দু’পক্ষকে প্রচন্ড গুলি বিনিময়। এ সময় গেরিলা যোদ্ধা আমিনুল ইসলামের ৩০৩ রাইফেরের ছোঁড়া গুলিতে ইট ভাটার আড়ে ক্যাঁৎ হয়ে পজিশনে থাকা অপর ১জন পাক্সেনা নিহত হয়। এই জায়গায় যখন উভয় পক্ষের প্রচন্ড গুলি বিনিময় চলছে,ওই সময়ে পাকিফৌজ ও রাজাকাররা বড় জমবাড়িয়া প্রাইমারী স্কুলে গ্রামের বেশ কিছু নিরীহ মানুষকে লাইনে দাড় করিয়ে গুলি করার চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল; এমন সময়ে শত্রুদের লাগিয়ে দেয়া আগুনে আজিজুর রহ্মানের বাড়িতে টালিঘরের তলায় (কোঠায়) থাকা গেরিলা বাহিনীর হ্যান্ড-গ্রেডেন ও মাইন প্রচন্ড শব্দে বিস্ফোরণ ঘটাতে শুরু করে। শত্রুবাহিনী তাদের চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলা হচ্ছে এই ধারণা করে লাইনে দাঁড় করানো লোকদের ছেড়ে দিয়ে পলায়ন করে এবং ইট ভাটার কাছে যুদ্ধরত সাহাপুর শত্রুবাহিনী গুলি ছুড়তে ছুড়তে পিছু হটতে থাকে আর মুক্তিবাহিনী সামনে অগ্রসর হয়। পিছু হটে শুত্রুরা নরশিয়া দিয়ে বোয়ারিয়া এবং চৌডালায় ফিরে যায়। ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সাহেবের নেতৃত্বাধীন বাহিনী সাহাপুর গড় পুনঃদখল করেন। শত্রুরা সাহাপুর গড়ে সবেমাত্র খাসির মাংস ও ভাত রান্না করে উনুন থেকে নামিয়েছিল আর অপর একটি ডেকচিত ভাত রান্না চলছিল। অপরদিকে বড় জামবাড়িয়ার ইট ভাটার কাছ থেকে শত্রুবাহিনী পিছু হটার সময় সেখানে রান্না চলছিল। ওই অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা টাইগার বাহিনীর কাছে পরাস্ত হয়ে দখলদার বাহিনী সব কিছু ফেলে পালিয়ে জীবন বাঁচায়। সুবাদার ডাক্তার গিয়াস খানাগুলো পরীক্ষা করেন এবং কুকুরকে কিছু খাইয়ে মুক্তিযোদ্ধারা অর্জিত খানা আহার করেন। এখানে শত্রুবাহিনীর গণহত্যার শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ মানুষের অন্তঃসার শূন্য নিথর দেহ মুক্তিযোদ্ধারা কবর দেন। বিবিসি থেকে এই যুদ্ধের খবর প্রচারিত হয়। হানাদার বাহিনীর কবল থেকে সাহাপুর গড় উদ্ধার করার পর সাব সেক্টর কমান্ডার ক্রাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেখানে ডিফেন্স পরিদর্শন করেন। হানাদার বাহিনীর গণহত্যা ও ধ্বংসলীলার সংবাদ সেক্টর কামান্ডার লেঃ কর্ণেল কাজী নুরুজ্জামানকে অবহিত করেন। সেক্টর কমান্ডার এই দুঃসংবাদ শুনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং হারানো এলাকা মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আসায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। হানাদার বাহিনীর এই গণহত্যা ও ধবংসলীলার পর ছোট জামবাড়িয়ার আনেশউদ্দিনের বাড়িতে মুক্তিবাহিনীর একটি ছোট ক্যাম্প করা হয়। এরপর বড় জামবাড়ীয়ার প্রাক্তন ইউনিয়ন বোর্ড়ের প্রেসিডেন্ট ডাঃ আঃ জব্বার সাহেবের ভাই আঃ কুদ্দুসের বাড়িতে ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। এখানে মুক্তিবাহিনীর প্লাটুন কমান্ডার ছিলেন চৌডালা-বেনিচকের শওকাত আলী। বড় জামবাড়িয়ার গেরিলা বাহিনীর নেটওয়ার্ক ছিল। এখানে গেরিলা বাহিনীর প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। স্থানীয় ২ জন মেয়ে ও ১১জন যুবক প্রথমত এর প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন।ভোলাহাট সদর গোহালবাড়ি থেকে জাম্বাড়িয়া এবং অন্যান্য অঞ্চলের সাথে এই বাহিনীর অধিনায়কদের সংযোগ ছিল।গেরিলা বাহিনীরেই নেটওয়ার্কের কমান্ডার ছিলেন চাঁপাই নবাবগঞ্জের আহসানউদ্দিন; পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিঞ্জানের প্রফেসার। এছাড়া প্রশিক্ষণ দিতেন শিবগঞ্জের বিনোদপুর ইউনিয়নের চাঁন শিকারী গ্রামের আবুল কালাম ও আলাউদ্দিন, গোমস্তাপুর-আলীনগরের সোনারদি, চাঁপাই নবাবগঞ্জের হেনজিলা, কাজল ও সপিকুল। গেরিলা বাহিনীর এই নেটওয়ার্কের সাথে ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল এই এলাকায় প্রশিক্ষ্ণার্থী গেরিলা বাহিনী তাঁদের কার্যক্রম সংম্প্রসারণের আগেই দেশ স্বাধীন হয়ে যায় এবং তারা গেরিলা বাহিনীর সনদ লাভ ব্যর্থ হওয়ার মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তাদের নাম লিপিবদ্ধ হয়নি। সাহাপুর গড় ও বড় জামবাড়িয়ায় শ্ত্রুবাহিনীর এই বর্বরতার পর এবং তাদের বিতাড়ন করা হলে তারা আর এই এলাকায় অনুপ্রবেশের দুঃসাহস দেখায়নি।
[৫৭৪] মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত