লস্করপুর বৈদ্যুতিক টাওয়ারে আক্রমণ, হবিগঞ্জ
শায়েস্তাগঞ্জে পাকিস্তানী বাহিনীর একটি মনিটরিং ক্যাম্প ছিল। এখান থেকেই ওরা পুরা হবিগঞ্জ নিয়ন্ত্রণ করত এবং মৌলভীবাজার ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে যোগাযোগ রক্ষা করত। শায়েস্তাগঞ্জের পূর্বদিকে লস্করপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্রায় ১ কিলোমিটার পূর্ব দিকে দত্তপাড়া গ্রামের উত্তরসীমানায় মাঠের মধ্যে বৈদ্যুতিক টাওয়ারটি অবস্থিত। এই টাওয়ারটি ছিল শায়েস্তাগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল বিদ্যুৎ সংযোগস্থল। টাওয়ারটি ধ্বংস করলে অন্ধকারাচ্ছন্ন এলাকায় যে কোন সময় পাকিস্তানী স্থাপনার উপর মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করতে পারবে। অন্যদিকে পাকিস্তানিরা রাতের অন্ধকারে কোনরূপ কার্যক্রমে অংশ নেবেনা। আনিছুল বারী চৌধুরী তার সহযোগী মুক্তিযোদ্ধাসহ চাটপাড়া গ্রামের মাখন মিয়া তরফদারের বাড়িতে অবস্থান করতেন। থাকা খাওয়ার সকল ব্যবস্থা তিনিই সাগ্রহে সুসম্পন্ন করতেন। বামেশ রঞ্জন ভট্টাচার্য রেকি করে অধিনায়ক আনিসুল বারী চৌধুরীকে রিপোর্ট দিলে তিনি ২০ জুলাই তার সহযোগীদের নিয়ে চাটপাড়া হতে রাতে ভুঙ্গেশ্বর গ্রামে এসে আত্মগোপন করেন। ভুঙ্গেশ্বর গ্রামের সকল মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে ছিল। পাশের গ্রামের আহসান উল্লাহ মুক্তিযোদ্ধাদের থাকা খাওয়ার সব ব্যবস্থা করে দেন। ২১ জুলাই রাত ১১ টার দিকে ভুঙ্গেশ্বর গ্রাম থেকে বিদায় নিয়ে ১ টায় টাওয়ারটির নিকটবর্তী গোপন আস্তানায় পৌঁছে ডিনামাইট চার্জের ধরন, এক্সপ্লোসিভের পরিমাণ, অ্যাকশন টিম, আস্তানা, সরঞ্জাম প্রহরার টিম, অ্যাকশন সময়, যাত্রা ও ফেরত আসা ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহন করে। ২২ জুলাই রাতে টাওয়ারটিতে ডিনামাইট ফিট করে ডেটোনেটর, ফিউজ কানেক্টিং ওয়্যার ফিট করা হয়। টাওয়ারটি হতে প্রায় ২০০ গজ দক্ষিণ-পশ্চিমে খোয়াই নদীর উঁচু বাঁধের ভিতরে নাদীর কিনারে সবাই নিরাপদ স্থানে অবস্থান নেবার পর সেফটি ম্যাচের কাঠির দ্বারা ওয়্যারে অগ্নিসংযোগ করলে অল্প কয়েক সেকেন্ডের ভিতরে বিকট আওয়াজে বিস্ফোরণ ঘটে। এই সগল অভিযানে চুনারুঘাট, শায়েস্তাগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল বিদ্যুতসংযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত