You dont have javascript enabled! Please enable it! লাঙ্গলবন্দ ব্রিজ অপারেশন, নারায়নগঞ্জ - সংগ্রামের নোটবুক

লাঙ্গলবন্দ ব্রিজ অপারেশন, নারায়নগঞ্জ

মুক্তিযোদ্ধারা আগস্ট মাসে নারায়নগঞ্জের লাঙ্গলবন্দ ব্রিজ ধ্বংস করতে ব্যররথ হলে আবার তা ধ্বংস করার পরিকল্পনা নেয়। মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল্লাহ রেকি করে জানতে পারেন ব্রিজের আশেপাশে গ্রাম দড়িকান্দি, ইলারদি থেকে সাধারণ মানুষদের ধরে এনে আর্মিরা ব্রিজ পাহারায় বাধ্য করে। এই গ্রামবাসীদের কাছে মুক্তিযোদ্ধারা জানতে পারেন পাকসেনারা রাতে (ব্রিজের গোড়ায়) বাঙ্কারের ভিতর ঘুমিয়ে থাকে। রাজাকার ও গ্রামবাসীরা রাতে ব্রিজ পাহারা দেয়। এই ব্রিজ পাহারায় দুপাশে (৪+৪) ৮ জন পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকার ছিল। সোনারগাঁ থানা কমান্ডার আব্দুল মালেকের গ্রুপের সহকারী কমান্ডার হাবিবুল্লাহ, উৎপল, বাতেন, সানাউল্লাহ, মতিন, ইদ্রিস মিয়া, বাবুল, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমান্ডার মো. ইসমাইলের গ্রুপের নূরুল ইসলাম, জয়নাল আবেদিন, মোমতাজউদ্দীন ভূঁইয়া, মোহর আলী, জজ মিয়া, তোজা গাজী মজিবুর, সিরাজুল হক, নিতাইচন্দ্র নন্দী, রেহানউদ্দীন রেহানের গ্রুপ, মোহাম্মাদ গিয়াসউদ্দীনের গ্রুপের আব্দুল হক, মো. আলীর গ্রুপের আউয়াল, মজিবুর, সোহেল, প্রমুখ চিটাগাং রোডে অবস্থান করেন। পাকসেনাদের কোন গাড়ি এদিকে আসলে বাধা দেবার জন্য। সোনারগাঁ বিদ্যুত ভৌমিকের গ্রুপের হারুন, মজিবুর রহমান লাঙ্গলবন্দের পূর্বদিক (ব্রক্ষ্মপুত্র নদের পূর্ব দিয়ে), আব্দুল রশীদের গ্রুপ (বন্দর), গ্রুপ কমান্ডার মোহাম্মাদ গিয়াসউদ্দিনের (নারায়নগঞ্জ) গ্রুপ, সহকারী কমান্ডার মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, খোরশেদ আলম খসরু, মো. শফি নূরুল ইসলাম, আলী আজগর, শাহাদাত হোসেন, দুলাল, গোলাম কাদির বাবুল, মাইনুদ্দীন প্রমুখ পশ্চিম দিকে অবস্থান নেন। মো. গিয়াসউদ্দীন (নারায়নগঞ্জ) লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত করেন কোন মুক্তিযোদ্ধারা ব্রিজ অপারেশন স্পটে যাবেন এবং কারা তাদের কাভার করবেন। লটারিতে ৭ জন স্পটে যাবার জন্য মনোনীত হয়। মো. নুরুজ্জামান, খোরশেদ আলম, খোরশেদ আলম খসরু, শফি, নূরুল ইসলাম, আলী আজগর, শাহাদাত হোসেন। দুলাল, গোলাম কাদের বাবুল স্পটে যান। লাঙ্গলবন্দের ব্রিজের নিচের পাইপ দিয়ে ৭ জনের মধ্যে বাঙ্কার আক্রমণ করার জন্য (৩+৩) ৬ জন দুপাশে ভাগ হয়ে যান এবং মো. নুরুজ্জামান কোমরে দড়ি বেঁধে ঝুলন্ত অবস্থায় ব্রিজের ,মাঝখানে পিকে ওয়ান ও এক্সপ্লোসিভ ফিট করেন। ব্রিজের নিচে নৌকায় দাঁড়িয়ে মো. গিয়াসউদ্দীন তাকে নিদ্দেশ দেন এবং তিনদিক থেকে নিজ নিজ গ্রুপের কমান্ডাররা স্ব স্ব যোদ্ধাদের নিয়ে কভার দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকেন। সোনারগাঁ গ্রুপ দুটি ভাগ হয়ে (১৬+১৬) ৩২ জনে ভাগ হয়ে একই সময়ে ব্রিজের দুপাশে বাঙ্কারে পাকসেনাদের আক্রমণ করেন। আনুমানিক ৭/৮ জন রাজাকার মারা যায়। সোনারগাঁ গ্রুপ প্রথম ফায়ার করলে পাকআর্মিরা সোনারগাঁ সড়ক দিয়ে চিটাগাং সড়কের দিকে হেড লাইট জ্বালিয়ে ব্রিজের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে এবং চিটাগাং সড়ক থেকেও পাকসেনাদের গাড়ির বহর লাঙ্গলবন্দ ব্রিজের দিকে আসতে থাকে। পাকসেনাদের লক্ষ্য করে মুক্তিযোদ্ধারা দুদিক থেকেই আক্রমণ করেন। উভয় দিকের বাঙ্কারে পাকসেনাদের খতম করে বাংকার দখল করেন মুক্তিযোদ্ধারা। আগত পাকসেনারা ফায়ার করতে থাকলে প্রায় আড়াই ঘন্টা যুদ্ধ হয়। পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা বাধা পেয়ে সামনের দিকে এগুতে থাকে। বীর দর্পে মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন সম্মুখযুদ্ধ করে যান। সোনারগাঁর মুক্তিযোদ্ধারা একজন পা আর্মিকে আহত অবস্থায় ধরে নৌকায় তুলে হাত পা বেঁধে নদীতে ফেলে দেন। এরপর আলীপুরা বাজার পার হয়ে প্যারাবো চলে যান। মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম খসরুর হাতে বেয়নেটের খোঁচা লাগে, সফিউদ্দিনের হাত পাক আর্মিদের লাথির আঘাতে থেঁতলে যায়।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত