লাতু সারপার যুদ্ধ, সিলেট
লাত-সারপার যুদ্ধ এক ঐতিহাসিক যুদ্ধ। ভয়াবহ সম্মুখ যুদ্ধ সংঘটিত হয় এখানে। এ অঞ্চলের রণাঙ্গনে এটি ছিল একটি অন্যতম বিশাল যুদ্ধ। আগস্ট মাসের শেষ দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণে সারপার থেকে পালাতে বাধ্য হয় খান সেনারা। শত্রুমুক্ত এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প। এক কোম্পানী মুক্তিসেনার অবস্থান সারপারে। একারণে যুদ্ধের জন্য অবস্থানগত সুবিধা আদায় করে নেয় সূর্য সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা। পরাজয়ে, ক্ষোভের অনলে পুড়ছিল হানাদাররা। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট থেকে পুনরায় সারপারের দখল প্রতিষ্ঠার পারিকল্পনা আঁটে। বিরাট সংখ্যক সৈন্য, অসংখ্য রাজাকার সমবেত করা হয় এ অপারেশনের জন্য। দুই ব্যাটালিয়ন সৈন্য সমাবেশ ঘটায় পাক হানাদাররা। সময়টি ছিল বর্ষার শেষভাগ। তাই হানাদার সেনারা প্রায় দুইশত নৌকা নিয়ে চতুর্দিক থেকে সারপার, আষ্টঘরি, গবিনপুর আক্রমন করে। মুক্তিবাহিনী এ আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিলনা। তথাপিও পালটা আক্রমণ গড়ে তোলে মুক্তিসেনারা। শুরু হয় প্রচন্ড গোলাগুলি। রাতের আকাশ আলোয় আলোকময় হয়ে যায় গোলাগুলির স্ফূলিঙ্গে। কেয়ামতের বিভীষিকা শুরু হয় এ অঞ্চলে। এক পর্যায়ে রাতের অন্ধকারে প্রায় কাছাকাছি চলে আসে উভয়পক্ষ। সর্বগ্রাসী এ আক্রমণে মুক্তিসেনারা পিছু হটে। ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় সারপার। এ যুদ্ধে নান্দুয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আরফান আলী শহীদ হন। এছাড়াও গুরুতর আহত হন কয়েকজন মুক্তিসেনা। প্রতিপক্ষের কয়েকজন হতাহত হয় এ যুদ্ধে। এ যুদ্ধে পরাজয়ের কারণ হিসেবে যুদ্ধে অংশ নেওয়া নায়েক শফিক উদ্দীন আহমদের অভিমত হচ্ছে- লোকবল, রসদ, অস্ত্রশস্ত্র ইত্যাদ্দির স্বল্পতাই দায়ি। এ কারণে নদীতে ঝাঁপিয়ে জীবন রক্ষা করে মুক্তিযোদ্ধারা। এ যুদ্ধ সংঘটিত হয় ১৪ সেপ্টেম্বর।
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত