রাজগঞ্জ অপারেশন, নোয়াখালী
সেপ্টেম্বরের ২১ তারিখ (সি) জোনের মুক্তিযোদ্ধাদের ৬ টি ট্রুপ নোয়াখালীর রাজগঞ্জ চতুর্দিকে পাকবাহিনীকে মোকাবেলা করার জন্য ওৎ পেতে থাকে। রাজগঞ্জ বাজার থেকে টেলিফোনে মাইাজদীতে অবস্থানরত আর্মি কন্ট্রোল রুমে বারবার যোগাযোগ করে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে অবিহিত করা হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রস্তুতি অব্যাহত থাকে। ঐ দিন রাত ১১ টার সময় জরুরি প্রয়োজনে মুক্তিযোদ্ধাদের পাঁচটি ট্রুপকে প্রত্যাহার করে বিভিন্ন জায়গাতে অপারেশন পরিচালনার জন্য পাঠানো হয়। পাকবাহিনী তাদের গোয়েন্দা মারফত ৫ টি ত্রুপ প্রত্যাহারের খবর অবহিত হওয়ার সাথে সাথে রাজগঞ্জ আক্রমণ করার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এবং রাত ৩:৩০ এ পাঁচমুখি আক্রমণ শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ত্রুপ কমান্ডার হাসেমের নেতৃত্বে রাজগঞ্জ অবস্থান করছিল। পাকবাহিনী মেইন ত্রুপ মাইাজদী বাজার থেকে ছায়ানী রাস্তা দিয়ে মুভ করে। ঐ গ্রুপই নোয়াখালী কলেজ (পুরাতন) সংলগ্ন এলাকা থেকে ২ ইঞ্চি মর্টার গান দিয়ে রাজগঞ্জের দিকে ফায়ার শুরু করে। বাকি চারটি ত্রুপ এবং মেইন ত্রুপ উভয়ে ভোর চারটায় একযোগে আধুনিক অস্ত্রসস্ত্র দিয়ে বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধাদের ত্রুপ কমান্ডার হাসেমের দৃঢ়তাড় সাথে পাকবাহিনীর মোকাবেলা করতে থাকেন। ইতিমধ্যে ছয়ানী থেকে ও তাদের একটা ত্রুপ কমান্ডার হাসেমের সঙ্গে এগিয়ে আসে। এদিকে দুর্ধষ কমান্ডার হাসেম ২৭ তারিখ সকাল ৭:৩০ মিঃ পর্যন্ত বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে পাকবাহিনীর ২৩ জন সৈন্যকে হত্যা করে। সম্মুখ যুদ্ধের ভয়াবহতার কারনে কমান্ডার হাসেমের সাহায্যকারীরা যথাক্রমে গোলাবারুদ সরবরাহ করতে সক্ষম হয় নি। গোলাবারুদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ও কমান্ডার হাসেম একই ৩০ মিঃ অবস্থান করেন। পাকবাহিনী তার এই নীরবতার রহস্য বুঝতে পেরে চারিদিক থেকে তাকে ঘিরে ফেলে ও সাথে সাথে গুলি করে হত্যা করে এবং একই সাথে মুক্তিযোদ্ধা সবুজ ও রবি কে ধরে ফেলে। পরবর্তীতে তাদেরকে মাইজদী হাসপাতালে অবস্থানরত পাকবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে আসে। এদিকে বাবুপুর হয়ে যে ত্রুপ রাজগঞ্জ আক্রমণ করে সেই ত্রুপ রাজগঞ্জের কাছাকাছি উত্তর দিকে মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হায়দার এবং শফিকুর রহমানকে ধরে ফেলে। গোলাম হায়দারকে গুলি করে হত্যা করে। এবং শফিকুর রহমানকে মাইজদী পাকবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে আসে। একই জায়গা থেকে ছয় জন নিরস্ত্র মানুষকে ধরে নিয়ে আসে। সবুজ, রবি, শফিকুর রহমানের সাথে ঐ ৬ জনকে একই সাথে হত্যা করে মাইজদী জেনারেল হাসপাতালের পূর্ব –উত্তর কোণের বিল্ডিং এর পেছনে গণ কবর দেওয়া হয়। নরেন্দ্র সুর উকিল ও মানিক লাল চৌধুরি সহ ২৩ জনকে একই দিনে পাকবাহিনী ধরে নিয়ে আসে এবং গুলি করে হত্যা করে গন কবর দেয়।
[৪৪] জোবাইদা নাসরীন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত