You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.09 | মন্ত্রীপরিষদে যুবশিবির সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত - সংগ্রামের নোটবুক

যুবশিবির

৯ আগস্ট ১৯৭১ তারিখে মন্ত্রীপরিষদে যুবশিবির সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
১. যুবশিবিরঃ অভ্যর্থনা শিবিরগুলি বাংলাদেশ সরকার দেখাশুনা করবে।
যেহেতু পূর্বাঞ্চলেই যুবশিবিরের সূচনা এবং ঢাকা, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং সিলেট থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক যুবশ্রেণী সমবেত হচ্ছিলেন ত্রিপুরা রাজ্যে, সেজন্য প্রথম ক’টি মাস এখানকার শিবিরগুলি বেশি তৎপর ছিল। এর ওপর ত্রিপুরা-রাজ্যে বড় সমাবেশ ঘটেছিল উপরোক্ত জেলাগুলির নেতৃবৃন্দের। ঐ সময়কার কয়েকটি প্রতিবেদন, চিঠিপত্র ইত্যাদি দেখলেই বোঝা যাবে কত গুরুত্বের সাথে যুব শিবিরগুলি পরিচালিত হতো।
প্রাথমিক পর্যায়ে পূর্বাঞ্চলে সংগঠিত যুব শিবিরগুলি কোথায়, কীভাবে, কার নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছিল তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে তুলে ধরা হলোঃ
২৩ আগস্ট মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের একটি সিদ্ধান্তে যুবশিবির সম্বন্ধে বলা হয় যে, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিবৃন্দ সঠিকভাবে কাজ না করায় শিবিরগুলিতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।
২৮ মে তারিখে মাহবুব আলম সাহেব (ডিরেক্টর, ইয়ুথ ক্যাম্পে-এই পরিচয়ে) ‘গান্ধী পিস ফাউন্ডেশন’ ( Gandhi Peace Foundation)-এর সচিবের একটি চিঠি লেখেন। এতে দেখা যায় যে গ্রামভিত্তিক সংগঠন করার জন্য পূর্বাঞ্চলে যুবশিবির স্থাপিত হচ্ছে। পশ্চিম অঞ্চলে ইতোমধ্যেই “ গান্ধী শান্তি পরিষদ” এইরকম কাজে সাহায্য করেছিল বিধায় একই পাঠ্যক্রম এবং যোগ্যতাসম্পন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে স্থানীয়ভাবে শিবির পরিচালনা করে যাবার প্রস্তাব রাখা হয়। এই মাসব্যাপী প্রশিক্ষণে মাথাপিছু ২০০ রুপি করে ১০০ জন প্রশিক্ষণার্থীর জন্য ২০,০০০ রুপি চাওয়া হয় (প্রতি শিবিরে ১০০ জন হিসাবে)
এর পরের মেমোটি (memo) ছিল এম.আর. সিদ্দিকী সাহেবের দস্তখতে (Member –in-charge, Finance) । বিষয়বস্তু দেখে অনুমান করা যায় এটি পূর্বাঞ্চলের যুবশিবির-প্রধানকে লেখা। এতে অনুরোধ করা হয়েছে যে শিবিরগুলি পরিদর্শনকালে ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যেন নির্ধারিত ছকে কতকগুলি তথ্য সরবরাহ করেন। এতে আমরা পূর্বাঞ্চলের যুবশিবিরগুলির একটি সম্পুর্ণ চিত্র পাই।
জুন মাসে মোট ১৭টি শিবিরে ভারপ্রাপ্ত সবাই ছিলেন জাতীয় অথবা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, দু-একজন ব্যতীত (একজন এম.এ. হান্নান জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং আরেকজন অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন)। শিবিরগুলিতে সদস্য ছিলেন ৪৮৫০ জন, ৮টি জেলা থেকে আগত। নির্ধারিত ছকের একটি শিবিরের কর্মকর্তাদের বিবরণ পাওয়া যায়। তাঁরা শিবিরগুলিতে অবস্থান করতেন। ১৯/৬/৭১ তারিখে পূরণকৃত একটি ছকে দেখা যায় যে সেখানকার শিবির-প্রধান ছিলেন এম.এ. হান্নান এবং তাঁর সহকারী ছিলেন এম.এ. মান্নান, ক্যাম্প- সুপারভাইজার ছিলেন জি.এ. প্রসাদনাথ (মন্টো)), রাজনৈতিক প্রশিক্ষক আজিজুল হক (এডভোকেট), প্রফেসর নূরুল আবসার ও প্রফেসর নূর মোহাম্মদ, ছাত্র প্রতিনিধি এম.এ. হাশেম আর ডাক্তার ছিলেন ডা. রেজা।
পূর্বাঞ্চলের প্রশাসক রূপে ২৫/৬/৭১ তারিখে আমি একটি মেমো জারি করি। এতে দেখা যায় অর্থমন্ত্রী একটি প্রশাসনিক কাঠামো অনুমোদন করেন। এতে আঞ্চলিক প্রশাসন ছাড়াও যবশিবির ব্যবস্থাপনাও অনুমোদন করেন। এতে আঞ্চলিক প্রশাসন ছাড়াও যুবশিবির ব্যবস্থাপনাও অনুমোদন দেওয়া হয়। যুবশিবির কমিটি কাউন্সিলের সাথেই কাজ করত এবং এদের ব্যবস্থাপনা ও কর্মকাণ্ড আঞ্চলিক পরিষদ (Zonal Council) সমন্বয় করত।
এই সময়ে অর্থাৎ জুনে যুবশিবির পরিচালনায় ছিলেন নিন্মলিখিত ব্যক্তিবর্গ
১. প্রফেসর নূরুল ইসলাম চৌধুরী এম.এন.এ. ডিরেক্টর, প্রশাসন;
২. ড. আবু ইউসুফ ডিরেক্টর, সিলেবাস ও কর্মসূচি;
৩. জনাব মির্জা আবু মনসুর, এম.পি.এ. উপ-পরিচালক, সরবরাহ
৪. জনাব বজলুর রহমান, উপ-পরিচালক, চলাচল;
৫. জনাব ফারুকী, এম.পি.এ. উপ-পরিচালক প্রশাসন।

এছাড়া আরও কর্মকর্তা ছিলেন। পূর্ব অঞ্চলের (-এর) প্রধান হিসাবরক্ষক এ. কে. চৌধুরী। ২৫/৭/৭১ তারিখের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায় যে, জুলাই মাসে ঐ অঞ্চলে যুবশিবিরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৩-এ উপনীত হয়েছে। তালিকা নিচে দেওয়া হলোঃ

যুবশিবিরেরে তালিকাঃ জুলাই ১৯৭১
১. বক্সনগর
২. বেলতলী
৩. চারিপাড়া
৪. কংগ্রেস ভবন
৫. চোটাখোলা
৬. ধর্মনগর
৭. দুর্গা চৌধুরীপাড়া- বিজনা
৮. ঐ- গুমতি
৯. ঐ- ইছামতি
১০. গোকুলনগর
১১. ঐ-মেঘনা
১২. ঐ-পদ্মা
১৩. হরিণা
১৪. হাতিমারা
১৫. হাপানিয়
১৬. ঐ- ব্রক্ষপুত্র
১৭. ঐ-গুমতি
১৮. ঐ-যমুনা
১৯. হাপানিয়া-তিতাস
২০. জয়নগর
২১. কাঁঠালিয়া (বড়মুরা)
২২. কৈলাশহর
২৩. খোয়াই
২৪. মেলাঘর
২৫. মোহনপুর
২৬. মোতিনগর
২৮. পালাটোনা
২৯. পাথেরকান্দী
৩০. রাজনগর (রাধানগর)
৩১. শিলাছড়া
৩২. শ্রীনগর
৩৩. উদয়পুর
ইতোমধ্যে এই অঞ্চলের যুবশিবির পরিচালনা বোর্ডও সম্প্রাওসারিত হয়েছিল নিন্মলিখিতভাবে

১. কেন্দ্রীয় প্রশাসন : প্রফেসর নূরুল ইসলাম, এম.এন.এ
২. প্রশিক্ষণ এবং সমন্বয় : ড. আবু ইউসুফ ( Geology. PhD.)
৩. কেন্দ্রীয় সরবরাহ : জনাব মির্জা আবু মনসুর, এম.পি.এ
৪. চলাচল/তৎপরতা : বজলুর রহমান
৫. মেডিকেল : ড. এম.এ. মান্নান, এম.পি.এ.
৬. নতুন ভর্তি (Recruitment) : জনাব আ. স. ম আবদূর রব
৭. ছাত্রদের বিষয়াবলি : জনাব আবদুল কুদ্দুস মাখন
৮. কর্নেল চৌমুহনী অফিস : জনাব আবদুল লতিফ খান
(আগরতলা শহর)
জুলাইয়ের শেষভাবে চার শ্রেণীর শিবির স্থাপিত ও পরিচালিত হচ্ছিল। যেমনঃ
ক. অভ্যর্থনা (Reception), খ. উদ্ধুকরণ (Motivation), গ. প্রশিক্ষণ
(Training) ও ঘ. নিয়মিত বাহিনীর সাথে।
[১৫৮] রিয়াজ আহমেদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত