মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ
দেশের সর্বস্তরের মানুষ স্বদেশভূমিকা শত্রুমুক্ত করার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিল। ছাত্র-যুবক-তরুণ-কৃষক শ্রমিক-বুদ্ধিজীবী প্রমুখ যেমন মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে যায়, তেমনি নিয়মিত-অনিয়মিত বাহিনীর সদস্যগণও এতে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল সদস্যকে সে সময় প্রধানমত তিনটি শ্রেণীতে চিহ্নিত করা হয়েছিল সরকারি দৃষ্টিকোণ থেকে। ছাত্র-তরুণ অসামরিক ব্যক্তি সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা (Freedom Fighter)। যেসম মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে রাজনৈতিক আবেগ প্রবল ছিল। তাদের ভিন্নতর নামে অভিহিত করা হয়। এঁদের বলা হতো মুজিববাহিনী (Bangladesh Liberation Force)। এরা সরকারের মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিবাহিনী চেইন অব কমান্ড বহির্ভূত ছিলেন। মুক্তিবাহিনী (Mukti Fouz) গঠিত হয় নিয়মিত বাহিনীর সদস্যয, বিশেষ বাহিনীর সদস্য ও ব্যাটালিয়ন সমন্বয়ে। মুক্তিবাহিনী ১১টি সেক্টর মোতায়েন করা হয়। সরকার তিন সেনা অফিসারের নামের আদ্যক্ষর দিয়ে আরও অতিরিক্ত বাহিনীর নামকরণ করেছিলেন। এই বাহিনী তিনটি Z Force, K Force, S Force নামে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী অনুরোধে ভারত-সরকার আমাদের ছাত্র-যুবক ও সাধারণ মানুষদের যুদ্ধ-প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। ভারতীয় সেনাবাহিনী আমাদের মুক্তিবাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেছে। আমাদের সেনা-কর্মকর্তারা যারা পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে বিদ্রোহ করে চলে এসেছিলেন তারাও আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। সাধারণ মানুষজন, যারা অনেকেই কোনো আগ্নেয়াস্ত্রই চোখে দেখেনি তাঁরা সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণের পর একেকজন বিচক্ষণ ও সাহসী যোদ্ধায় রূপান্তরিত হয়। সীমান্ত এলাকায় মুক্তিবাহিনীরা অপারেশনকালে ভারতীয় সেনাবাহিনী সহায়তা করত এবং শেষের দিকে বিমান সাহায্য দিতে। মুক্তিবাহিনীর আঞ্চলিক অফিস ছিল সীমান্ত এলাকায় আর প্রধান দপ্তর ছিল কোলকাতায়। প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম.এ.জি ওসমানী কোলকাতা অফসে বসেতেন। ভারতীয় বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান অফিস ছিল কোলকাতা ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিবাহিনী অস্ত্র নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। আমাদের নিয়মিত বাহিনী ভারতীয় বাহিনীকে বীরত্বের প্রশংসা করে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জে.এফ.আর জ্যাকোব লিখেছেঃ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল অনকার সিং কালকাট এবং পরে ছিলেন মেজর জেনারেল বি.এন.সরকার। ভারতের বেশ কয়েকটি স্থানে ও সেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিল।
[১৩] এইচ.টি. ইমাম
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত