You dont have javascript enabled! Please enable it! বামনসুন্দর-দারোগার হাট অপারেশন, চট্টগ্রাম - সংগ্রামের নোটবুক

বামনসুন্দর-দারোগার হাট অপারেশন, চট্টগ্রাম

ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাঙ্ক রোদেড় মিঠাছড়া বাজার থেকে একটি রাস্থা পশ্চিম দিকে বামনসুন্দর-দারোগার হাট বাজারের দিকে গিয়েছে।এই রাস্তায় মিঠাবাজার থেকে জোড় পুকুর পর্যন্ত রাস্থা হট বিছানো এবং জোড় পুকুর থেকে বামনসুন্দর দারোগাহাট পর্যন্ত কাঁচা রাস্থা ছিলো। অপারেশনের সঠিক তারিখ কমান্ডার অহিদ নিদৃষ্টভাবে মনে করতে না পারলেও অপারেশনটি জুন মাসের শেষের দিকে হয়েছে বলে ধারণা করেন। অপারেশনের দিন আবহাওয়া ভালো ছিলো। তাছাড়া রাস্তাআর আশেপাশের এলাকায় হাঁটু পানি ছিল। এই অপারেশনের উদ্দেশ্য ছিল পাক সেনাদের চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে তাদেরকে ভীতসস্ত্রস্ত করে তোলা। এলাকা সম্পর্কে পূর্ব থেকেই মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডারের ধারণা থাকায় পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন ছিল না।মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অহিদ তাঁর গ্রুপসহ মিঠানালা গ্রামের এক হিন্দুবাড়িতে অবস্থান করতেন।ঐ বাড়ির ল্কসন পাকসেনাদের ভয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিলো।তিনি লোকমুখে শোনেন,পাকসৈন্যরা একটা বেসামরিক ট্রাকে করে জোরারগঞ্জ বাজার ক্যাম্প থেকে মিঠাছড়া বাজার হয়ে বামনসুন্দর-দারোগ্রার হাটের দিকে গিয়েছে। ঐ রাস্থা দিয়েই তাদের ফেরত আসা নিশ্চিত ছিল। তাদের কাছে দুটি এন্টি ত্যাংক মাইন ছিল। চিন্তা ভাবনা করে একটি এন্টি ট্যাংক মাইন জোড় পুকুরের কাছে (যেখানে ইটের রাস্থা শেষ হয়েছে এবং কাচারাস্থা শুরু হয়েছে) গোপনে পুতে রাখেন।তখন বেলা ১১টা। পাকসেনারা ট্রাকযোগে বামনসুন্দর-দারোগার হাটে যায় এবং সেখান থেকে পায়ে হেঁটে দক্ষিণ দিকে মিঠানালা গ্রাম যায় এবং রাজাপুর গ্রা, দিয়ে আবার বামনসুন্দর দারোগার হাট কাঁচা রাস্থায় ওঠে। কমান্ডার কাশেম গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারাও ঐ এলাকায় অবস্থান করতেন।ইতোমধ্যে তারাও খবর পেয়ে তাদের ২/৩ জন মুক্তিযোদ্ধা দিয়ে পাকসেনাদের পার্ক করে রাখা বেসামরিক ট্রাকের ফুয়েল ট্যাঙ্কে অতি গোপনে কিছু বালি মাথি দিয়ে রাখেন।এই ঘটনা ট্রাকের ড্রাইভার বুঝতে পারে নি। ফলে পাকসেনাদের ট্রাকটা ক্যাম্পে ফেরত যাওয়ার সময় কিছু দূর গিয়েই খারাপ হয়ে যায় তখন পাকসেনারা উপায়ান্থর না দেখে পায়ে হেটেই মিঠাছড়া বাজারের দিকে এগোতে থাকে।এমনকি নিরাপদে এন্টি ট্যাংকের মাইনের উপর দিয়ে চলে যেতে সমর্থ হয়।মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তখন স্টেঙ্গান (এস এম সি) থাকায় ফায়ার করেনি।কারন,এই অস্ত্রের কম রেঞ্জ ছিল।এমন অবস্থায় কম দূরত্বে গিয়ে ফায়ার করাও ছিল বিপদজ্জনক।পরে পাকসেনারা খারাপ ট্রাকটি নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি বড় ক্রেন মিঠাছড়া বাজারের দিকে নিয়ে আসে।ঐ ক্রেনে ৩ জন পাকসেনা ও ২ জন বেসামরিক লোক ছিল। ক্রেনটি জোড়পুকুরে স্থাপিত এন্টি ট্যাংক মাইনের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় তা বিস্ফোরিত হও্যায় ক্রেনের সকলেই মারা যায়। পরবর্তীকালে ঐ নষ্ট ট্রাকটি আনার জন্য আবারও ২০/২৫ জন পাকসেনা দুটো বেসামরিক ট্রাকযোগে মিঠাছড়া বাজারের দিক থেকে বামন্সুন্দর দারোগার হাটের দিকে যায়।তারা বামনসুন্দর দারোগার হাটের নিকটবর্তী রাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছা কাছি পৌছালে মুক্তিযোদ্ধারা বামনসুন্দর দারোগ্রার হাটের দিক থেকে একসেনাদের প্রতি ফায়ার করে। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে তখন ছিলো কাশেম গ্রুপের সুবেদার নজিরসহ আরও ৪/৫ জন/ এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ছিল ১টি এলএমজি(সেটা ঐ সময়ে খারাপ ছিল) ৫টি ৩০৩ রাইফেল,২টি স্টেঙ্গান এবং ২০/২৫টি গ্রেনেড।পাকসেনাদের কাছে ছিল চাইনিজ রাইফেল, এবং এল এম জি। উভয় পক্ষের মধ্যে মাগরিবের আযান পর্যন্ত ফায়ারিং চলে।পরে পাকসেনারা আস্তে আস্তে পশ্চাদসরন করে মিঠাছড়া বাজারের দিকে চলে যায়। বেসামরিক ট্রাকটি পূর্বের স্থানেই পড়ে থাকে। পরে মুক্তিযোদ্ধারা জানতে পারেন যে,ট্রাকটি গ্রামের লোকেরা ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়।অপারেশনের পর পাকসেনারা দীর্ঘদিন ঐ এলাকায় যাতায়াত বন্ধ রাখে এবং যথেচ্চ ভাবে বিরচণ করার আর সাহস পায়নি।তারা সব সময়ই আতংকগ্রস্ত হয়ে চলাচল করত।গাড়ি থেকে নেমে গ্রাম অবাদে ঘোরাফেরা করতে পারে নি। এই ঘটনায় মুক্তি্যোদ্ধাদের প্রতি জনগনের বিশ্বাস ও আস্থা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত