বাগুয়ানের যুদ্ধ-৩,মেহেরপুর
৪ ও ৫ আগস্ট নৈমত্তিকভাবেই ক্মদেবঅউরে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিবিনিময় হয়। কিন্তু ৫ তারিখেই ঘটে যায় এ অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে চরম বেদনা দায়কক একটি ঘটনা। এ ঘটনা সংঘটনের স্থান মেহেরপুর জেলার বাগোয়ান গ্রাম এবং রতনপুর ঘাট।ঘটনার শিকার অধিকাংশই চুয়াডাঙ্গা জেলার বাসিন্দা। মেহেরপুর ওঁ চুয়াডাঙ্গা জেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম জয়পুরে শেল্টার নিয়েছিলো ৩১জন মুক্তিযোদ্ধা। দেশের ভেতর বিভিন্ন জায়গায় গেরিয়া তৎপরতা চালানোর জন্য তাঁরা সবেমাত্র ভারত থেকে এসেছে। খুব সকালে তাদের কাছে নালিশ এলো বাগায়ানের মাঠ থেকে দুইজন রাজাকার ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে। নালিশশোনে রাজাকারদের শায়েস্থা করার জন্য সঙ্গে সঙ্গে বাগোয়ানের মাঠে ছুটে যায় ৭ মুক্তিযোদ্ধা। হাসান,তারিক,খোকন,কাশেম,পিন্টু,আশা ওঁ আফাজ উদ্দিন। কিন্তু সেখানে কাউকে দেখতে না পেয়ে ৫ জনকে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে বলে।পিন্টু ওঁ আফাজউদ্দিন খানিকটা এগিয়ে রতনপুর ঘাটের কাছে যায় কৌতূহলবশত। নদ্রী ওপারে বটগাছের মাথায় দুজন অপিকে দেখে আফাজুদ্দিন গুলি ছুড়ে বয়সে। সঙ্গে সঙ্গে নদীর ওপার থেকে শহত শত গুলি ছুটে আসে। মুক্তিযোদ্ধারা অনতু দূরে বাগোয়ান গ্রামের এক বাগানে এসে আশ্রয় নেয়। এদিয়েকে রতনঅউর ঘাটে গোলাগুলির শন্দ শুনে জুপুর শেল্টার থেকে ২৪জন মুক্তিযোদ্ধা এসে হাজির হয়। সংখ্যাধিক্যের কারণে মনোবল বেড়ে গেল। সিদ্ধান্ত হলো রতন পুর ঘাটে পাকিস্থানবাহিনীর সঙ্গে তাঁরা সম্মুখ যুদ্ধই করবে। ১৫ আর ১৬ ডিসেম্বর দু দলে বিভক্ত হলো ৩১জন মুক্তিযোদ্ধা।১৫ জনের গ্রুপ রওণা হল রতনপুর ঘাটে পিছনে থাকলো আরোও ১৬ জন কাভারিং পার্টি। কিন্তু পাকবাহিনী ইতোমধ্যে নদী পার হয়ে এসে আখক্ষেতের মধ্যে মুক্তুযোদ্ধাদের খুজতে শুরু করেছে।তারপর ইংরেজি ইউ আকারে এম্বুস করে মুক্তিযোদ্ধাদের অপেক্ষায় আছে।কিছু না বুঝে রেকি না করে মুক্তিযোদ্ধারা এসে ধীরে ধীরে ঢুকে পরে ঐ ইউ আকৃতির অ্যামবুশ স্থান। তারপর প্রচুর গুলাগুলি শুরু হউ।কিছুই করার ছিলো না তখন।এমন কি পিছিয়ে আসার জন্যও মাত্র একটি পথ খোলা।পায়ে হেঁটে নয়, বুকে ক্রলিং করে পিছিয়ে আসতে হবে।ডান হাতে গুলিবিদ্ধ হাসান কাভারিং ফায়ারের দায়িত্ব নিয়ে সবাইকে যাবার সুযোগ করে দেয়।কিন্তু হটাৎ একটি গুলি এসে কুয়ামুদীনের মাথায় লাগলে সে মৃত্যুর কোলে ধলে পড়ে।অন্যান্যরা পিছু হটতে থাকলে অবস্থাঙ্গত অসুবিধার কারণে খোকন,কাশেম,রবিউল,তারি,রওশন এ আফজাল উদ্দিন শেষ পর্যন্ত পাকবাহিনীর একেবারে নাগালের মধ্যে পড়ে যায়।খুব কাছত হেকে গুলি করে,বেয়োনেট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে হত্যাকরে ৮ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। অবশ্য এই সম্মুখ যুদ্ধে কয়েকজন পাকসেনা হতাহত হয়। এই ৮ জন শহীদের মধ্যে তাহাজ ওঁ আফাজ মেহেরঅউরের কোমরপুরের মানুষ। বাগোয়ান গ্রামের আবু তায়েজ খানের জমিতে এই যুদ্ধ হয়।কিন্তু জনৈক লালচাঁদের গরু গাড়িতে করে ৮ শহীদের লাশ এনে রাখা হয় জগন্নাথপুরে। পরদিন শুক্রবার এলাকাবাসীকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে লাশ দেখিয়ে সতর্ক করা হয় মুক্তিযোদ্ধা হলে এই হবে তাঁর পরিনাম। পরদিন জগন্নাথপুরের কিতাব হালসানার জমিতে পাশাপাশি দুটি গর্ত করে ৮শহিদের লাশ মাটি চাপা দেয়া হয়। মাটি চাপা দেয়ার কাজে অংশগ্রহনকারী গ্রামবাসীদের মধ্যে রমজান আলী,কিতাব আলী,বিশারত মন্ডল, গোলাম আলী অন্যতম।
[১০৩] রফিক রশীদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত