You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.09 | বাঘবাড়ীর যুদ্ধ, নরসিংদী - সংগ্রামের নোটবুক

বাঘবাড়ীর যুদ্ধ, নরসিংদী

ঢাকার পিলকানার ইপিআর সদর দপ্তর থেকে ২৫ মার্চ রাতে প্রাণে বেঁচে আসা একদল ইপিআর সদস্য এবং ক্যাপ্টেন মতিউর এর নেতৃত্বাধীন একটি কোম্পানী নরসিংদী সদর থানায় ময়েজ উদ্দিন ফকিরের আশ্রমে অবস্থান নেয়। ঐ সময়ে নেহাব গ্রামের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্য সিরাজউদ্দিন আহমেদ ছুটিতে আসেন (পরবর্তীতে ন্যাভাল সিরাজ হিসেবে খ্যাতিমান হন) এবং ছুটি হতে ফেরত না গিয়ে নিজ মাতৃভুমির টানে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মূলত নরসিংদী সদর থানায় সকল বড়/খন্ড যুদ্ধ তাঁর প্রত্যক্ষ/পরোক্ষ নেতৃত্বে সংঘটিত হয়। ঢাকা থেকে পালিয়ে আসা ইপিআর সদস্যদের সাথে ন্যাভাল সিরাজ এপ্রিল এর ৩/৪ তারিখে গোপন বৈঠক করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন যে ঢাকা থেকে নরসিংদীর দিকে আসা পাক বাহিনীকে যেভাবে হোক বাঁধা দিতে হবে। ৯ এপ্রিল আনুমানিক ১৫:০০-১৬:০০ টার মধ্যে বাঘবাড়ী (তাঁরা পুকুরপাড় ) নামক স্থানে যা পাঁচদোনা ব্রিজ থেকে ৮ কি মি. পশ্চিমে (ঢাকার দিকে), শত্রু বাহিনীর উপর ঝটিকা আক্রমণ চালানো হবে। নরসিংদী দখলের উদ্দেশ্যে পাক বাহিনী ঢাকা থেকে নরসিংদী সদর অভিমুখে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদিসহ প্রধান সড়ক ধরে যাত্রা শুরু করে। সংবাদ পাওয়া মাত্র শত্রুর অগ্রাভিযান নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য ঢকা থেকে পালিয়ে আসা ইপিআর সদস্যরা এবং ন্যাভাল সিরাজের নেতৃত্বে কিছু উৎসুক বাঙ্গালী সদস্য বাঘবাড়ীতে অবস্থান নেয়। ৯ এপ্রিল ১৫:০০ ঘটিকার আগেই ইপিআর এবং ন্যাভাল সিরাজের দল বাঘবাড়ীস্থ তাঁরা পুকুর পাড়ে অবস্থান নেয় এবং অধীর আগ্রহে বসে থাকে পাক বাহিনীর জন্য। যুদ্ধে পাকবাহিনীর একটি ব্যাটলিয়ান গ্রুপ এবং অপর দিকে ইপিআর এবং আশেপাশের গ্রামের কিছু গণযুদ্ধা মিলে প্রথমে ১০ জনের একটি দল পরবতীতে ২০/২৫ জনের আরোও একটি দল তাদের সাথে অংশ গ্রহণ করে। তাদের কাছে তেমন কোন ভারি অস্ত্র অথবা অত্যাধুনিক অস্ত্র ছিল না বললেই চলে। এমতাবস্থায় বিকাল আনুমানিক ১৬:০০ টার দিকে পাক বাহিনীর প্রথম দলটি কিছু যান্ত্রিক গাড়ী নিয়ে মুক্তিযুদ্ধাদের নাগালে চলে আসে আর সাথে সাথে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা প্রবলভাবে গুলি ছোড়া শুরু করে। পাকবাহিনীরা মুক্তিবাহিনীর কাছ থেকে এত তড়িও গতিতে সাড়া পাবে আশা করে নাই, ফলস্রুতিতে তাঁরা উপায়ান্তর না দেখে ডানে বামে ছুটাছুটি করতে থাকে।পরে অবশ্য তাঁরা একত্রিত হয়ে পালটা গুলি করে।এই যুদ্ধ ভোররাত ৪টা পর্যন্ত চলতে থাকে।এর মধ্যে শত্রুরা শক্তিবৃদ্ধি করে তিন দিক থেকে মুক্তিবাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়।ফলস্রুতিতে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অবস্থান ত্যাগ করেন এবং পিছু হটে যান। উক্ত যুদ্ধে নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গের নাম ছাড়াও নাম না জানা আরোও অনেকেই অংশগরহন করে ছিলেন।তাদের মধে ছিলেনঃ ইমামুদ্দিন,অহিবুর রহমান,ওসমান গনি,আবদুল হাকিম,ড আবদুল খালেক,ড রফিক প্রমুখ।
বাঘবাড়ি সম্মুখ যুদ্ধে পাকবাহিনীর হতাহতের পরিমাণ অনেক বেশি ছিল এবং তাদের তিনটি ট্রাক এই অপারেশনে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছিল।অপরদিকে মুক্তিবাহিনীর হতাহতের পরিমাণ ছিল খুবই কম দুই একজন শুধু মাত্র গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু শত্রুর অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি এবং প্রচন্ড চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত মুক্তিবাহিনীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়,
[৫৯৪] রিয়াজ আহমদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত