বয়রার যুদ্ধ-১, খুলনা
বয়রা মহিলা কলেজের সামনে প্রচুর ইটের গাদা ছিল। সিএন্ডবি-র এই বিরাট ইটের ঢিবির পেছনে এক দল তরুণ কয়েকটা রাইফেল ও বন্দুক নিয়ে সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। দিনটি ছিল ২৭ মার্চ শনিবার। পাকসেনারা বয়রা মহিলা কলেজের সামনে আসতেই তারা গুলিবর্ষণ শুরু করে। তখন পাকসেনারা দিশেহারা হয়ে বিভিন্ন দিকে এলোপাথাড়ি গুলি করতে থাকে। এখানে পাকসেনাদের একজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়। এই সময়ে পুলিশের সিপাহী মুন্সী মুফাজ্জল হোসেন এক ইটের গাঁদা থেকে অন্য ইটের গাঁদায় যাওয়ার সময়ে পাকসেনাদের গুলিতে শহীদ হন। বিকাল চারটা পর্যন্ত দু’পক্ষ ব্যাপক যুদ্ধে লিপ্ত থাকে। ইতোমধ্যে পাকসেনাদের আরও ২০/২৫টি গাড়ি চলে আসে। মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা পিছু হটে যায়। আর পাকসেনারা চলে যায় খুলনা শহরে। এই যুদ্ধে এইচ অ্যান্ড পোদ্দার কোম্পানির মুন্সীরাঙ্গা মিয়া নামক একজন শ্রমিকও শহীদ হন। যুদ্ধ শেষে আজকের বীর শহীদ বয়রা রিজার্ভ ক্যাম্পের সিপাহী পি.আর.এফ নম্বর ১৩৪ মুন্সী মুফাজ্জেল হোসেনকে যথারীতি বাজারে ইসাহাত মৌলভীর বাড়িতে দাফন করা হয়। ওপর শহীদের বাড়ি ছিল ফরিদপুর জেলার মুখছেদপুর থানার বাহাড়া গ্রামে এবং পাবলিক লাইব্রেরির সীমানার ভিতর মুন্সী রাঙা মিয়াকে দাফন করা হয়। বয়রা ও বৈকালী যুদ্ধের ফলাফল যাই হোক না কেন, সেই যুদ্ধ এতদাঞ্চলের লোকজনের দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সামান্য ক’টা বোমা, বন্দুক, রাইফেল নিয়ে পাকসেনাদের প্রতিরোদ করা ছিল এক ঐতিহাসিক ঘটনা।
[১৮৮] মোঃ আবুবকর সিদ্দিকী
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত