পাচরুখী ব্রিজ অপারেশন, নারায়ণগঞ্জ
সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নির্দেশানুযায়ী নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানা কমান্ডার আব্দুর জব্বার খান পিনুর গ্রুপ, নরসিংদীর নেভাল সিরাজের গ্রুপ, আড়াইহাজার থানার আব্দুস সামাদের গ্রুপ ও করিম দিনের বেলায় মিলিত হয়ে অপারেশনের সময় রাতে সামাদের গ্রুপ করিম দিনের বেলায় মিলিত হয়ে অপারেশনের সময় রাতে নির্ধারণ করেন। তারা নির্ধারিত সময়ে ব্রিজের কাছাকাছি অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেন। মেঘনা নদী থেকে একটি শাখা নদী বারদী বিষনন্দী, প্রভাকরদি, কালীর বাড়ি প্রভৃতি গ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পাচরুখী বাজারের পাশ দিয়ে রূপগঞ্জের শীতলক্ষ্যায় এসে মিলিত হয়েছে। পাকআর্মিরা এই ব্রিজের ওপর দিয়ে ঢাকা টু নরসিংদী হয়ে সিলেট যাতায়াত করত। তাদের যাতায়াত বন্ধ করার জন্য অপারেশনের উদ্যোগ নেয়া হয়। আব্দুস সামাদের নেতৃত্বে খালেকুজ্জামানের গ্রুপ, মো. রেজাউল করিম, আব্দুল মতিন ভুঁইয়া, আতাউর, ফজলুল হক, মান্নান, আমানুল্লাহ, মোশাররফ হোসেন, শফিউদ্দীন, রায়হান, জামান, শামসুজ্জামান, ডালিম, জলিল, ফজর আলী, আমিরউদ্দীন, হাবিবর রহমান, মজিবর রহমান প্রমুখ নির্ধারিত সময়ে রসদ নিয়ে ব্রিজের কাছেই দক্ষিণ দিকের রোমান ডাক্তারের বাড়িতে অবস্থান করে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত আব্দুর জব্বার খান ও নেভাল সিরাজের গ্রুপের অপেক্ষায়। এই দুই গ্রুপ উপস্থিত না হওয়াতে সেদিন অপারেশন না করে ফিরে আসেন আব্দুস সামাদ সহযোদ্ধাদেরসহ। এরপর সেপ্টেম্বর মাসের ৮/১১ তারিখের মধ্যে আড়াইহাজার থানা কমান্ডারের নেতৃত্বে তাঁর নয়জন সহযোদ্ধা গ্রুপ কমান্ডার জি.এম.খলিল, ফয়েজ, রহিম, মো. শামসুল মোল্লা (বি এল এফ), আক্তার, লাল মিয়া ও ডেমিনেশন পার্টি সহকারে পাচরুখী ব্রিজ অপারেশনের জন্য রাত ১০টা/১১টার দিকে পাঁচগাঁ থেকে নৌকাযোগে ব্রিজের সামনে পৌঁছে। একটা গ্রুপ নরসিংদীর দিকে এক কিলোমিটার দূরে এমবুশ করে থাকে। এক কিলোমিটার দূরে ঢাকার দিকেও কিছু মুক্তিযোদ্ধা এমবুশ অবস্থায় পাহারা দেয়। ব্রিজের পিলারটি দেওয়ালের মতো ছিল। পিলারটি ধ্বংস করার জন্য বারুদের প্রয়োজন ছিল ১৫০ পাউন্ড। কিন্ত ১৬৫ পাউন্ড বারুদ ব্যবহার করেন মুক্তিযোদ্ধারা। পিলারের ইট খুলে ওই গর্তের ভেতরে ৩টি পিণ্ড করে মাঝের পিণ্ডটিতে ১৫ পাউন্ড বেশি দেন ব্রিজটি ধ্বংস করার জন্য। প্রেমকড ও টাইম ফিউজ ফিট করে টাইম ফিউজে আগুন ধরিয়ে সরে পড়েন। ১৫ পাউন্ড বারুদ অতিরিক্ত দেয়া সত্ত্বেও পিলারটি ধ্বংস হয়নি। তবে ব্রিজের প্লেটটি উড়ে যায়। ফলে ব্রিজটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
[১১০] রীতা ভৌমিক
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত