পয়ালগাছা অ্যাম্বুশ, কুমিল্লা
পাকসেনাদের একটি শক্রিশালী দল কুমিল্লার দক্ষিণে পয়ালগাছা থেকে নারায়ণপুরের অনেকগুলো বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়, নারী ধর্ষণ করে। ২/৩ ঘন্টা ব্যাপী তাদের অত্যাচার চলে। নারায়ণপুরের কাছে অবস্থানরত মুক্তিবাহিনীর একটি ১৩ সদস্যের গেরিলা দল পাকসেনাদের নারায়ণপুরের দিকে অগ্রসর হতে দেখে। পরে এই দলে পয়ালগাছা রাস্তায় অ্যামবুশ পাতে। পাকসেনারা নারায়ণপুরে অত্যাচার চালাবার পর ফেরার পথে তাদের অ্যামবুশের আওতায় পড়লে তারা আক্রমণ চালায়। আক্রমণে ১৫ জন পাকসেনা ও ২৮ জন রাজাকার নিহত এবং ১৩ জন পাকসেনা ও ১৬ জন রাজাকার আহত হয়। মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধারা তাদের গুলি শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রাণপণে আক্রমণ চালিয়ে যায়। এই অ্যামবুশে শেষ পর্যন্ত পাঁচজন গেরিলা শহীদ হন। বাকী ৮ জন ফিরে আসতে সক্ষম হন। শক্তিশালী একটি পাকবাহিনীর সঙ্গে ক্ষুদ্র গেরিলা বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণ এবং এই আত্মত্যাগ কোন দিনও ভুলে যাবার নয়। কুমিল্লার দক্ষিণে পাকবাহিনীর কংসতলা ঘাঁটিটি মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের যাতায়াতে বিশেষ অসুবিধার সৃষ্টি করেছিল। এই ঘাঁটিটি ধ্বংস করার জন্য ক্যাপ্টেন মাহাবুবের নেতৃত্বে ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ১টায় এই ঘাঁটিতে আক্রমণ করা হয়। তিন ঘন্টা যুদ্ধের পর সুবেদার শাহজাহানসহ ১৬ জন পাকসেনা নিহৎ এবং ৮ জন আহত হয়। এই আক্রমণের ফলে পাকসেনারা এতই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে যে সেখান থেকে তারা তাদের অবস্থান পরিত্যাগ করে কুমিল্লায় চলে আসতে বাধ্য হয়। এর দু’দিন পর মুক্তিবাহিনীর ডিমোনিশন পার্টি পিপুলিয়া বাজারের কাছে লালমাই- সোনাগাজী সড়কে একটি সেতু বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দেয়। পাকসেনারা এই রাস্তাটিকে ট্যাঙ্ক এবং ভাড়ি গাড়ি চলাচলের জন্য পুনঃ নির্মাণের চেষ্টা করেছিল। মুক্তিবাহিনীর আরেকটি দল চান্দিনার কাছে দোতলাতে রাস্তায় মাইন পুঁতে পাকসেনাদের একটি গাড়ি ধ্বংস করে দেয়। এছাড়াও কুমিল্লার দক্ষিণে ও উত্তরে ১ অক্টোবর থেকে বিভিন্ন সংঘর্ষে প্রাণছড়া, কোটেশ্বর, আজামপুর, বিবির বাজার আম্রাতলী প্রভৃতি জায়গায় ২৫ জন পাকসেনা নিহত এবং ৮ জন আহত হয়।
[১৮] আবুল কাশেম হৃদয়
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত