You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.25 | ২৫শে মার্চ প্রতিরোধ যুদ্ধে ঢাকার মিরপুর - সংগ্রামের নোটবুক

২৫শে মার্চ প্রতিরোধ যুদ্ধে ঢাকার মিরপুর
[প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ]

আমার অয়ারলেস সেটটি কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর রাজারবার অয়ারলেস কন্ট্রোল রুম থেকে আর এক বাঙ্গালি পুলিশের কন্ঠ ঘোষণা করল “অল অফিসারস অফ অ্যান্ড এবভ র‍্যাঙ্ক অফ ইন্সপেক্টরস উইল প্রোসিড টু দেয়ার কোয়ার্টারস”। হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালের পশ্চিমের গেটে প্রহরারত বাঙ্গালি পুলিশের ভীত-সন্ত্রস্ত কন্ঠ আমার অয়ারলেস সেটে বেজে ওঠার পর এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইনের কন্ট্রোল রুমের অয়ারলেস থেকে সতর্কবাণী পাওয়ার পর আমরা সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। এরপর ডি-এস-পি, ইন্সপেক্টরসহ সকল পদস্থ বাঙ্গালি পুলিশ অফিসার যারা মিরপুর ও অন্যান্য স্থানে বিভিন্ন সেকশন ও সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন, অয়ারলেস মারফৎ রাজারবাগ কন্ট্রোল রুম থেকে উপরোক্ত নির্দেশ পাওয়ার পর সবাই হেডকোয়ার্টারে চলে গেলে আমি আমার এক প্লাটুন (৩৭ জন পুলিশ) নিয়ে মিরপুর থানায় গিয়ে উঠি। সেখানে আমি মিরপুরের বিভিন্ন সেকশনে কর্তব্যরত সকল ফোরসকেই জমায়েত দেখতে পাই। সারা মিরপুরে এ সময় থমথমে ভাব বিরাজ করছিল। হঠাৎ পুলিশ (কমিশনার বিল্ডিং) কন্ট্রোল রুম থেকে আবার অয়ারলেস সেটে বাঙ্গালি পুলিশের কম্পিত কন্ঠ বেজে উঠল। সেই কন্ঠ বলছিল- “পাক আর্মি ভারী কামান, ট্যাঙ্ক ও মেশিনগান নিয়ে আমাদের কন্ট্রোল রুম ঘেরাও করে ফেলেছে। ওরা গোলাবর্ষণ করতে করতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসছে আমাদিগকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য-ওরা ভীষণভাবে ধেয়ে আসছে-তোমরা যে যেখানে থাক এগিয়ে এসো, রক্ষা করো, বাঁচাও, আমাদের বাঁচাও”। সেই কন্ঠ বলে যাচ্ছিল “রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পাকপশুদের হামলা হয়েছে, সেখানে গোলাগুলি চলছে, আমাদের বীর পুলিশরা লড়ছে, সেখানকার অয়ারলেস বেইস থেকে আমরা কোন শব্দ পাচ্ছি না, সব নীরব নিস্তব্ধ হয়ে গেছে”। পরক্ষণেই আমরা ঢাকার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, আকাশে বৃষ্টির মত লাইট-বোমা উড়ছে। কামান, ট্যাঙ্ক আর গোলাবর্ষণের ভীষন গর্জন শুনছিলাম, অসংখ্য মানুষের বুক-ফাটা অসহায় কান্নার রোল।
*মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান ১৯৭১ সনের ২৫শে মার্চ রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আর্মড সাব-ইন্সপেক্টর অব পুলিশ হিসেবে কর্মরত থাকাকালে মিরপুর দশ নম্বর সেকশনে জরুরী টহলে গিয়েছিলেন।
[১৫৭] সাক্ষাৎকারঃ মোহাম্মদ আঃ সোবহান, ইন্সপেক্টর অব রিজার্ভ পুলিশ, ২৯-০১-১৯৭৪

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত