নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পাকবাহিনীর ঘাঁটি অপারেশন
ক্যাপ্টেন এ টি এম হায়দার মিত্রবাহিনীর সদস্যদের আশ্রয় ও সহযোগিতা এবং তাঁদের অভ্যর্থনা করার জন্য মো. গিয়াসউদ্দিনকে (নারায়ানগঞ্জ) চিঠির মাধ্যমে অবগত করেন। মো. গিয়াসউদ্দিনের নির্দেশে সহকারী গ্রুপ কমান্ডার মো. নুরুজ্জামান ১১ ডিসেম্বর সোনারগাঁ বৈদ্যের বাজার এলাকায় মেজর নরেন্দ্র প্রসাদ সিং ও ক্যাপ্টেন শিশুদিয়া ল্যান্ড করলে তাদের সাদরে অভ্যর্থনা করেন এবং মিত্রবাহিনীর তাঁবু খাঁটিয়ে ক্যাম্প ও বাঙ্কার করে থাকার ব্যবস্থা করেন। মিত্রবাহিনীর পক্ষ থেকে মো. নুরুজ্জামান মাইক দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদীর পশ্চিমপাড় কাইক্কারটেক, বন্দর এলাকার গ্রামবাসীদের মধ্যে কার্ফু ঘোষণা করেন। মিলিশিয়া বাহিনীকে আক্রমণ করার জন্য মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা সমন্বয়ে রেকি করেন। এই যুদ্ধের জন্য মিত্রবাহিনীর জোনাল অফিস কাইক্কারটেকে স্থাপন করা হয়। রেকি করে মি. নাইয়ার মিত্রবাহিনীর ওপি অপারেটর বা সিগন্যাল অপারেটর কোডে জোনাল অফিসে সঙ্কেতের মাধ্যমে পাকবাহিনীদের অবস্থান অবগত করেন। ১৫ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী, মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে পাকবাহিনীর ওপর চূড়ান্ত আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়। এই দিন আরো মিত্রবাহিনী হেলিকপ্টারে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেয়। মো. গিয়াসউদ্দিনের গ্রুপ (নারায়ণগঞ্জ), সহকারী গ্রুপ কমান্ডার মো. নুরুজ্জামান, কাডসার (দাউদকান্দি), কুতুব, সাহাবুদ্দীন খানসহ ৫৫ জন মুক্তিযোদ্ধা ও জালালউদ্দীন রুমী ও নাজিমউদ্দীন মাহমুদও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা পজিশন নিয়ে নবীগঞ্জ রেললাইন ধরে পায়ে হেঁটে বন্দরের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। পশ্চিম ও পূর্ব দু’দিকে খাল এবং পশ্চিম দিক পাক আর্মি ও রাজাকারদের দখলে বিধায় পূর্ব দিক দিয়ে উত্তর দিক হতে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। রাত ৯টা ১২ মিনিটে হঠাৎ একটা গুলি ওপি মি. নাইয়ারের শরীরে বিদ্ধ হলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে শুয়ে পড়েন। এরপর গোলাগুলি সকাল ৮টা পর্যন্ত চলে। উভয়পক্ষের মধ্যেই গোলাগুলি হয়। মিত্রবাহিনীর ১১ জন সৈন্য শহীদ এবং ২৫ জন আহত হন। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মো. নুরুজ্জামান কাউসার (দাউদকান্দি), জামাল আহত হন।
[১১০] রীতা ভৌমিক
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত