দুলাল-মুন্দিয়ার যুদ্ধ, যশোর
যশোর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত দুলাল-মুন্দিয়া গ্রামের পূর্বে যশোর-কালিগঞ্জ মহাসড়ক এবং পশ্চিমে রেললাইন। গ্রামটির পাকা রাস্তার উপর বাজার। গ্রামটিতে ছিল অসংখ্য গাছ, পুকুর ও ভূমি থেকে ৫-৬ ফুট উঁচু সড়ক। দুলাল-মুন্দিয়ার ভূমির এ গঠন প্রতিরক্ষা গ্রহণকারী সৈনিকদের জন্য কৌশলগত দিক থেকে সুবিধাজনক ও অনেকাংশে নিরাপদ। এখানে ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিলে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকবাহিনীর এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
আনুমানিক এক ব্যাটালিয়ন সৈন্যের পাকবাহিনী ১৩ এপ্রিল মান্দারতলা যুদ্ধের পর সাড়ে পাঁচটার দিকে দুলাল-মুন্দিয়াতে প্রবেশ করে। এদিকে প্রায় দুই কোম্পানি সৈন্যসহ নায়েব সুবেদার ফিরোজ মান্দারতলা থেকে দুলাল-মুন্দিয়াতে পৌঁছে এবং শক্রপক্ষকে ধ্বংস করার জন্য অবস্থান নেন। অতঃপর শুরু হয় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমূল সংঘর্ষ। ৩০৩ রাইফেল সর্বস্ব মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণপণে লড়াই করে হানাদারদের সঙ্গে। প্রায় দু’ঘন্টা স্থায়ী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বহু পাকসেনা নিহত ও আহত হয়। আর মুক্তিবাহিনী হারায় দেশমাতৃকার জন্য নিবেদিত-প্রাণ ৩০-৪০ জন বীর সেনানীকে। দুলাল-মুন্দিয়ার যুদ্ধে আনুমানিক ১২ জন নিরীহ গ্রামবাসীও জীবন হারান।
উল্লেখ্য, এই যুদ্ধের সচিত্র প্রতিবেদন বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বের সাহায্যে ও সহানুভুতি অর্জন করতে সাহায্য করেছিল। প্রকাশ পেয়েছিল পাকসেনাদের দ্বারা গণহত্যার ভয়াবহ চিত্র।
[৫৭] ইকবাল জাফর খন্দকার
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত