You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.14 | তারাবহর যুদ্ধ, কুড়িগ্রাম - সংগ্রামের নোটবুক

তারাবহর যুদ্ধ, কুড়িগ্রাম

একাত্তরের আগস্ট পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সারা দেশব্যাপী তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। সর্বত্রই ক্ষ্যাপা কুকুরের মতো আক্রমণমুখী। ১৪ আগস্ট মুক্তাঞ্চলগুলোর দখল নিতে চায় ওরা। এক সময় শোনা গেল, কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর ইউনিয়নও (বর্তমান থানা) ঐদিন আক্রমণ করার এক পরিকল্পনা নিয়েছে। যে কোন মূল্যেই তারা রাজিবপুর পাকিস্তানী পতাকা উড়াতে চায়। এর জন্য আগে থেকেই নাকি চাঁদতারা মার্কা অনেকগুলো পতাকা তৈরি করিয়ে নিয়েছিল। এ সংবাদ টেইলারিং শপ থেকে চলে আসছিল মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে। হানাদার বাহিনী যমুনা নদী দিয়ে অগ্রসর হবে। পৌছাবে রাজিবপুর। ‘মুক্তিদের’ সরিয়ে দিয়ে কতৃত্ব প্রতিষ্টা করবে সেখানে।
১৪ আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস। সেদিন পাকিস্তানী সৈন্য বাহিনী মুক্তাঞ্চলের অনেকগুলো অংশে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্টার সঙ্কল্প নিয়েছে। নানাভাবে সংবাদগুলো পৌঁছে মুক্তিবাহিনীর কাছে। আর সাথে সাথেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় পশু নিধনের। প্রতিটি এলাকা রক্ষায় প্রনীত হয় আলাদা আলাদা পরিকল্পনা। আফতাব বাহিনীর একটি গ্রুপ তখন অবস্থান করছে দশঘরিয়াপাড়ায়। নেতৃত্ব দিচ্ছেন জহিরুল হল। সে গ্রুপও তাদের অবস্থানে থেকে পাকিস্তানীদের প্রতিহত করতে প্রস্তুতি গ্রহণ করে। নানা পরিকল্পনার এক পর্যায়ে সুবেদার আফতাব আলী গঠন করেন একটি অ্যাকশন গ্রুপ। আর গ্রুপটি তারাবহর নামক স্থানে মুখোমুখি হয় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর। শুরু হয়ে যায় প্রচণ্ড লড়াই।
পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সুশিক্ষিত, তাদের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র গোলাবারুধও প্রচুর। অন্যদিকে কয়েকদিনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিসেনাদের হাতে অতি হালকা অস্ত্র। কিন্ত দেশপ্রেমের শক্তিতে তারা বলীয়ান। অসীম সাহসের সাথে লড়াই করে পাকিস্তানীদের হটিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল আমাদের সোনার ছেলেরা। পেছন থেকে রকেট লঞ্চার দিয়ে মুক্তিসেনাদের সাপোর্ট দেয়া হয়েছিল। ফলে প্রচুর ক্ক্যক্ষতি স্বীকার করে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্তানী সৈন্যরা। তারাবহর দিয়ে পাকিস্তানী সৈন্যরা আর সামনে অগ্রসর হতে পারে নি। এক ইঞ্চি মুক্ত ভূমিও তাদের দখল করা সম্ভব হয় নি। এরপর আর কখনো পাকিস্তানীরা রাজিবপুর অভিমুখে অগ্রসর হওয়ার দুঃসাহসও প্রদর্শন করেন নি। সে মনোবল আর অবশিষ্ট ছিল না তাদের। আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে মুক্তিরা। আবারো পাকিস্তানীদের সামনে থেকে যুদ্ধ করতে উৎসাহী হয়ে ওঠে তারা।
[৪৭] তাজুল মোহাম্মদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত