ঠাকুর বাজারের যুদ্ধ, চাঁদপুর
১৯৭১ সালে চাঁদপুর জেলার মেহের ঠাকুর বাজার নামক স্থানে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পাক বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের এক সম্মুখ যুদ্ধ হয়। পাক বাহিনীকে ফাঁদে ফেলার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা সাপুর গ্রামের রেল মিস্ত্রী জাহাঙ্গীর ও গ্যাং সর্দার জহিরকে দিয়ে নাওড়া স্কুলের কাছে প্রায় ৩০০ ফুট রেল লাইন উপড়ে ফেলে। এই কাজের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জহিরুল হক পাঠান, কমরেড কলিমউল্যা ভূইয়া, করিম পাটোয়ারী (প্রাক্তন এমপি), এডভোকেট মাঈন উদ্দিন (প্রাক্তন এমপি) ও আবদুল খালেককে দিয়ে আগের দিন মাইকিং করান। বলা হয়, নাওড়া স্কুল মাঠে সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধারা এক বিরাট মিটিং করবে। নেতাদের খবর পেয়ে দলে দলে শত শত জনতা সেখানে উপস্থিত হয়। এবার সংগ্রামী জনতাকে সাথে নিয়ে রেল লাইন ওপড়ে ফেলেন তারা/ মুক্তিযোদ্ধাদের রেল লাইন ওপড়ানোর খবর চাঁদপুর কুমিল্লায় পাক বাহিনীর কাছে পৌঁছে যায়। পাকবাহিনী চালাকি করে সেদিকে কোন ট্রেন না পাঠিয়ে বেলা ২টার সময় একটি খালি রেল ইঞ্জিন পাঠায়। সেই রেল ইঞ্জিনের ড্রাইভারকে মুক্তিযোদ্ধারা বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে মেরে ফেলে এবং রেল লাইনের উপর ফেলে রাখে আর ইঞ্জিনিয়ারকে জনতা ধরে সংগ্রাম কমিটির হাতে তুলে দেয়। বিকাল ৪ টার সময় কয়েক ট্রাক পাক সেনা এসে মেহের গ্রাম ঘিরে ফেলে। পাক বাহিনীর ধারণা ছিল মেহের গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরাট ক্যাম্প আছে। পাক বাহিনীর আগমন টের পেয়ে জনগন গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। রাত্রে পাকবাহিনী বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এনে রেল লাইন ঠিক করে। পরের দিন তারা ঠাকুর বাড়ি এসে প্রথমে এলোপাথাড়ি গুলি করতে থাকে। তারা ঠাকুর বাজারের প্রায় সবক’টি দোকান পুড়িয়ে দেয়। তার সংখ্যা ছিল প্রায় ৩০/৪০ টি। এখবর জানার পর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের তিন দিক থেকে এম্বুশ করে। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের ২টি বৃটিশ এলএমজি ও রাইফেল ছিল। হাবিলদার লোকমান (তেলিশাইর) এর নেতৃত্বে বেলা ১০টায় শুরু হয় পাকবাহিনীর অপর আক্রমণ। মুক্তিযোদ্ধারা এইভাবে পাকসেনাদের ঘিরে আক্রমণ করবে তারা কখনও বুঝতে পারেনি। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রায় ৪০ গজ কাছে থেকে আক্রমণ করে। এই যুদ্ধে পাকবাহিনীর চেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের গোলা বারুদ করম থাকলেও দীর্ঘ ৪ ঘন্টা লড়াইয়ে পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে মার খেয়ে ১০/১২ টি লাশ ও বহু আহত সৈনিককে সাথে করে পিছু হটতে বাধ্য হয়। কয়েকজন নিরীহ গ্রামবাসী আহত হওয়া ছাড়া এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ নিহত বা আহত হয় নি।
[২৪] ডাঃ মো. দেলোয়ার হোসেন খান
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত