টাউনশ্রীপুর যুদ্ধ, সাতক্ষীরা
[প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ]
সাতক্ষীরার মহকুমার দেবহাট থানার ইছামতি নদীর তীরে অবস্থিত টাউনশ্রীপুরগ্রাম। এই গ্রামের পশ্চিমদিক দিয়ে কুল কুল রবে ইছামতি নদী বয়ে চলেছে এবং বাংলাদেশ ও ভারত এই দুটো রাষ্ট্রের সীমানা নির্দেশ করছে ইছামতি। ইছামতি বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধের এক নীরব স্বাক্ষী। টাউনশ্রীপুরের অপর পাড়ে ভারতের টাকী গ্রাম, এখানে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুজাহিদ ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টারের বাড়ি বেহাটা থানার এই টাউনশ্রীপুর গ্রামে। পেশায় তিনি একজন শিক্ষক, দেশকে রক্ষার প্রয়োজনে তিনি মসি ছেড়ে অসি ধরেছেন।
হানাদার পাকবাহিনী প্রত্যেহ এই সীমান্ত গ্রাম টাউনশ্রীপুরে এসে নানা রকম অত্যাচার করে গরু, ছাগল ইত্যাদি ধরে নিয়ে যায়। এমনিভাবে পরপর কয়েকদিন অত্যাচার করার ফলে লোকজন অতিষ্ট হয়ে নবম সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল ও মুজাহিদ ক্যাপ্টেন শাহজাহান সাহেবের নিকট এসে অভিযোগ করে। তাই সিদ্ধান্ত হয় হানাদার পাকবাহিনীর ক্যাম্পে এক রাতে আক্রমণ চালাতে হবে।
দীর্ঘ আলাপ আলোচনা চলল টাকী ক্যাম্পে। অতঃপর সিদ্ধান্ত হল ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টারই হবেন এই অভিযানের অধিনায়ক, যেহেতু এই অঞ্চলে তাঁর বাড়ি এবং অঞ্চলের বাড়িঘর-রাস্তাঘাট সবর তাঁর পরিচিত। তাছাড়া স্বল্পভাষী এও লোকটি দুর্দান্ত সাহসী ও কৌশলী যোদ্ধা। সিদ্ধান্ত হল পাকসেনাদের বাঙ্কারে আমরা রাতে গ্রেন্ড নিক্ষেপ করব ও স্টেনগানের এবং এলএমজির কিছু ব্রাশ করে দিয়ে চলে আসব।
৬ জুন রাতে আমরা তিনটা দল পৃথক পৃথক দায়িত্ব নিয়ে একই সাথে নদী পার হলাম। একদল পারুলিয়া ব্রীজ উড়িয়ে দেয়ার জন্য যাচ্ছে, আর একদল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে কোন এক জানা এলাকায় প্রবেশ করবে এবং আমরা হানাদারবাহিনীর ক্যাম্পে ঝাটিকা আক্রমণ চালাব।
ইছামতি নদী পার হয়ে নৌকা থেকে নেমেই বাংলাদেশের পবিত্র মাটি বুকে ও কপালে লাগালাম। তারপর তিন দল তিন দিকে রওনা হলাম। আমরা প্রায় ৩৫ জন। আমাদের কাছে ১টা এলএম জি এবং ডজন দুয়েক গ্রেনেড। কমান্ডার শাহজাহান সাহেব ও আমি পরামর্শ করে দু’জনে রেকি করতে বের হলাম, অন্য সবাই একটা নিরাপদ স্থানে ততক্ষণ বসে থাকবে। আমরা দু’জন নিঃশ্বাস একরকম বন্ধ করে ধীরে ধীরে পাকসেনাদের বাঙ্কারের দিকে অগ্রসর হলা। না, ওদের কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। ঘটনা কি? একটু একটু করে আরো বেশ কিছুদূর অগ্রসর হলাম এবং একসয় তাদের বাঙ্কারের ভিতরেই চলে এলাম। না, কেউ নেই, সব খালি।
অতঃপর আমি ও স্যার ফিসফিস করে পরামর্শ করলাম কি করা যায়। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, মাস্টার শাহজাহান সাহেব দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন, তাই অনেকেই তাকে ‘স্যার’ বলে ডাকেন, আমিও উনাকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করি। তিনি নিকটের এক বাড়ির একতা লোককে ঘুম থেকে ডেকে মিলিটালীর অবস্থানের কথা জিজ্ঞেস করলেন। লোকটা জবাব দিল যে, সন্ধ্যার পূর্বেই এ এলাকা ছেড়ে চলে যায়। এবং দূরে একতা দোতলা বাড়িতে থাকে অথবা সাতক্ষীরা চলে যায়। প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পেরে আমরা আমাদের দলের নিকট ফিরে আসি এবং একটা পরিত্যাক্ত বাড়িতে আশ্রয় নেই এবং ‘স্যার’ ঐ রাতেই নবম সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলের নিকট রওনা হন তার নির্দেশের জন্য। তিনি রাত দুটার দিকে ফিরে এলেন এবং জানালেন যে, তার নির্দেশ আগামীকাল পাকবাহিনীর উপর আমাদের আক্রমণ চালাতে হবে।
সিদ্ধান্ত আমাদের মনঃপুত হল না। কারন আমরা গেরিলা যুদ্ধ করছি। শক্রুবেষ্টিত এলাকার সম্মুখে নানা সমস্যা, আর সেই ধরনের অস্ত্রও আমাদের নেই, সামরিক প্রস্তুতি ও সরঞ্জামাদিও নেই। তাছাড়া ইছামতি নদী আর এক মস্ত বড় ব্যারিকেড আমাদের জন্য। তবুও কমান্ডারের নির্দেশ পালন করতেই হবে। আমরা ইছামতির তীরবর্তী আহমেদ মিস্ত্রির বাড়িতে ৩৫ জনের দল ৩টা ঘরে ভাগ হয়ে আছি। একজন ইঞ্জিনিয়ারসহ এলএম জি নিয়ে ১০/১১ জনের একটা দল পূর্ব দিকের একটা ঘরে। স্যার ১২/১৩ জনের একটা দল নিয়ে নদীর একদম নিকটের ঘরে। আর বাকিদের নিয়ে আমি মধ্যবর্তী একতা ঘরে। আমরা রাতে সব বিশ্রাম করব, তারপর সকাল্বেলা নাস্তার পর সময় ও সুযোগ বুঝে খান সেনাদের উপর আক্রমণ চালাব। কিন্তু ‘স্যারে’র মুজাহিদ বাহিনীর নূর মোহাম্মদ নামে একটা ছেলে যে কোন কারণেই হোক মুক্তিবাহিনীর আগমন ও পরিকল্পনার কথা ওই রাতেই মিলিটারীর নিকট ফাঁস করে দেয়। পাকবাহিনী এ সুযোগ পুরোপুরি গ্রহণ করে।
ভরবেলা, কেবলমাত্র সূর্য উঠেছে। সবাই ঘুমে, ‘স্যার’ ও আমি জেগে আছি। আমরা যেসব ঘরে আছি-সবগুলো ঘরেই গোলপাতার ছাউনি এবং কঞ্চির বেড়ার উপর আধা ইঞ্চি পুরু মাটির প্রলেপ। ঘরগুলো মোটেই নিরাপদ নয়। আমরা পরামর্শ করছি। নারকেল দিয়ে জাউ বা ফেনাভাতের নাস্তা তৈরি করা হয়েছে আমাদের জন্য, একটু পরেই আসবে। বাড়িটির তিন দিকে কেমন ঝোপঝাড়ে ঢেকে গেছে, সামনে ফাঁকা উঠোন এবং পশ্চিম দিকে ইছামতি নদী। দু’দিকে মাটির পাঁচিল, একদিকে বাগান, আমি যে ঘরে আছি সেই ঘর সংলগ্ন একটা ঢেঁকিঘর। আমরা বারান্দায় বসে নিচু গলায় কথা বলছি, হঠাৎ দেখি পূর্ব দিকের বাগানের ভিতর দিয়ে দু’জন খানসেনা ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। হঠাৎ ভূত দেখার মতো সম্ভবত খানসেনাদের দ্বারা ঘেরাও হয়ে পড়েছি, আমাদের বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে বের হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই।
নিমিষেই আমরা যে ঘরে গিয়ে সকলকে জাগিয়ে বললাম, যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। কিন্তু তৃতীয় ঘরের লোকরা জাগবে কিভাবে? আমি আমার ঘরে ঢুকে দেখি সবাই গভীর ঘুমে অচেতন। আমি একে একে সবাইকে ঘুম থেকে জাগিয়ে মিলিটারিড় কথা বললে সবাই চমকে উঠে যার যার অস্ত্র ধরে। বাইরে তাকিয়ে দেখি যে, একজন মিলিটারী উঠানে দাঁড়িয়ে। সম্ভবত সে তখনও নিশ্চিৎ নয় যে ঘরে কেউ আছে কিনা অথবা কোন ঘরে মুক্তিবাহিনী আছে। কারণ এখানে একই রকমের অনেকগুলো ঘর। হঠাৎ করে ইঞ্জিনিয়ারদের ঘর থেকে একটা গুলি হল উঠানে দাঁড়ানো মিলিটারীর উপর। সঙ্গে সঙ্গে সে লাফ দিয়ে অস্ত্র সহ লুটিয়ে পড়ল, আর যায় কোথায়- শুরু হল গুলি। আমার সাথে কাজল ও নাজমুলসহ অন্যান্যরা ছিল, ওরা দ্রুত গুলি করতে করতে বের হয়ে যাওয়ার জন্য খুব ব্যাস্ত হয়ে পড়ল।
সবাই একে একে বের হয়ে গেল, আমি একা একা ঢেঁকিঘরের হাত দুয়েক উঁচু দেয়ালের আড়ালে থেকে একটা রাইফেল নিয়ে পরিস্থিতি অনুধাবনের চেষ্টা করছি। বৃষ্টির মতো গুলি হচ্ছে এখানে। আর এক মুহূর্তও দেরি করা সম্ভব নয়, ঝোপঝাড়ের মধ্যে একটা নালা পেলাম। সম্ভবত ওটা পানি তোলা ড্রেন, বেশ গভীর। দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় উপরে লতাপাতায় ঢাকা। এদিক-ওদিক তাকিয়ে দ্রুত ঐ ড্রেনের মধ্যে ঢুকে গেলাম। পিঠটা কাঁটায় কিছু ছিঁড়ে গেল, ভ্রুক্ষেপ করলাম না। ধীরে অতি ধীরে অগ্রসর হচ্ছি, কিছুদূর পাড়ি দিয়ে দেখি মাত্র হাত দশেক দূরে একটা গাছের গায়ে এক খানসেনা রাইফেল উঁচিয়ে, পিছনটা আমার দিকে। রাইফেলটা তাক করে এক নিমিষেই ট্রিগার টেনে দিলাম, আহ! লোকটা যেন গাছের সাথে লেপটে গেল। তার ভবলীলা সাঙ্গ হল। এখন আর মরলেও আফসোস নেই। এত নিকট থেকে খানসেনাকে গুলি করে মারার অভিজ্ঞতা আমার এই প্রথম। রোমাঞ্চিত হয়ে তারপর শম্ভুকগতিকে চলা শুরু করলাম। হাত বিশ/পচিশ এগিয়ে দেখি দু’জন খানসেনা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে মুখ করে রাইফেল উঁচিয়ে শুয়ে পড়ে আছে। তারা আমাকে আদৌ দেখে নি, কিন্ত যে কোন মুহূর্তে দেখে ফেলতে পারে, যদি তাদের দিকে গুলি না করি আমাকে দেখা মাত্রই তারা গুলি করে শেষ করতে পারে। তাদের দিকে গুলি করলে আমার বাঁচার কোনই সম্ভাবনা নেই। উভয় সঙ্কট পরিস্থিতিতে এবং জীবন-মৃত্যুর সম্মুখে ক্ষণিক আল্লাহ স্মরণ করে খুব তাক করে গুলি করলাম। একজন গুলি খেয়ে ছিটকে পড়ল এবং অন্যজন আন্দাজে গড়াতে গড়াতে আড়ালে গেলে আমি দ্রুত চলা শুরু করি।
উভয় পক্ষে অবিরাম যুদ্ধ চলছে। টাকী এলাকা থেকে মুক্তিবাহিনী ভারী কামানের গোলা নিক্ষেপ করছে আমাদের সাহায্যের জন্য। কিন্তু শক্রু-মিত্র একই সাথে মিশে আছে। সুতরাং ভারী কামানের গর্জন সৃষ্টি করা ছাড়া কোন সাহায্য এল না। গোলাগুলির কোন শেষ নেই। কে কোন দিকে তাও বুঝা যাচ্ছে না। গুলির আওয়াজ তখন ইছামতি পার হয়ে ভারতে গিয়ে প্রতিধ্বনি করছে। সঙ্গীদের কারো কোন সাক্ষাৎ নেই। কে কতদুরে আছে জানার কোনই উপায় নেই। শুধু শক্রু নিধনের পালা। তারপর জীবন বাঁচবে কিনা কে জানে। ড্রেন দিয়ে চলতে চলতে একটা খালে এসে পৌছলাম। এবং ১০০ গজ দুরেই ওয়াপদার সুইস গেট, খালে পানি কম, হেঁটে গেলেও কেউ দেখতে পাবে না। ওয়াপদা সুইচ গেটের মধ্য দিয়ে অল্প পানি বয়ে যাচ্ছে। অতএব নিচু হয় একে দৌড়ে সুইস গেটের ভেতরে গিয়ে উপস্থিত হলাম এবং এটাকে নিরাপদ আশ্রয় মনে হল। গুলি তখনও অব্যাহত, ইছামতি নদীর ওপারে প্রচুর লোক দাঁড়িয়ে যুদ্ধ দেখছে। আমার রাইফেলে তখন দুটো গুলি, কাছেও আর গুলি নেই। আজকে আমার অস্ত্র ছিল ষ্টেনগান, কিন্তু ঘর থেকে বের হওয়ার সময় স্টেন রেখে রাইফেল নিয়েছি। গুলি আর নেয়া হয় নি। ইতিমধ্যে যুদ্ধ ঘন্টাখানেক হয়ে গেছে। আমার কাছে গুলি নেই। বিপজ্জনক অবস্থা। আমি সাঁতরিয়ে ইছামতি পার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম, রাইফেলসহ ঝাপ দিলাম নদীতে। সাঁতরিয়ে নদীর দুই তৃতীয়াংশ পার হয়ে গেলে টকীর পার থেকে একটা নৌকা এগিয়ে এল। নৌকায় উঠে তীরে এলে হাজার খানেক লোক আমাকে ঘিরে হাজার প্রশ্ন করল। আমি শুধু বললাম, আমরা সবাই ঘেরাও হয়ে যাই, আমার গুলি নাই, গুলি দাও, আমি ওপারে যাব।‘ গফুর ভাই, ডাঃ আসিফুর রহমানসহ পরিচিত অন্যান্যদের দেখলাম। আমার মাথা বিকৃত হয়েছে মনে করে তারা একটা ঘরে নিয়ে আমাকে আটকিয়ে রাখল। আমি আমার বন্ধু সহযোদ্ধাদের জন্য উতলা হয়ে উঠলাম। জানালায় হাত দিয়ে জানালা দুর্বল, সজোরে লাথি দিয়ে ভেঙ্গে আমি পুনঃ জনতার হাতে ধরা পড়ার ভয়ে বেশ কিছু দূরে গিয়ে সাতক্ষীরার কামরুজ্জামান ও বিলুকে পেলাম। তারা আমার সাথে ওপারে যেতে রাজী হল, ওরা দু’জন ৩টা রাইফেল নিয়ে এল। একটা ভারতীয় নৌকে নিয়ে পুনরায় ইছামতি পাড়ি দিলাম। ইতিমধ্যে যুদ্ধে তীব্রতা একদম কমে গেছে, তীরে এসে দেখি হাবলু গুলি খেয়ে নদীতে এসে পড়েছে। তাকে নৌকায় তুললে নৌকার পানি রক্তে সব লাল হয়ে গেল। তার গায়ে মোট ৩০ টা গুলি লেগেছে। বিলুকে নৌকায় হাবলুর নিকটে রেখে কামরুজ্জামান ও আমি উপরে গিয়ে একে একে সকলের নাম ধরে ডাকছি। যুদ্ধ তখন থেমে গেছে। পাকসেনারা চলে গেছে। ঘরে গিয়ে দেখি আমাদের অস্ত্র গ্রেনেড সবই ঠিক আছে। অন্যান্যরা সব এল, দ্রুত সবকিছু নিলাম। অন্য এক ঘরে গিয়ে দেখি নারায়ন ঘরেই মরে পড়ে আছে। ঘর থেকে নেমে সকলকে খুঁজতে গিয়ে দেখি খানসেনাদের লাশ আর লাশ। ২০টা পর্যন্ত গুণে উঠোনে দাঁড়িয়েছি, এমন সময় ৩/৪ জন খানসেনা দূর থেকে হেঁটে আসছে। ‘হ্যান্ডস আপ’ বলে এৎ জোরে চিৎকার করলাম যা আমার জীবনে স্মরনীয়। সাথে সাথে দু’তিনজনে গুলি করলে ওরা ঊর্ধ্বশ্বাসে পালাল। তারাও বুঝি তাদের সঙ্গীদের খোঁজে এসেছিল। নারায়নের লাশসহ হাবলু ও স্যার রশীদ, জলিলের লাশ পাওয়া গেল। কয়েকজন নিখোঁজ, সর্বত্র শোকের কালো ছায়া। কয়েক ঘন্টার মধ্যে কেমন একটা লন্ডভন্ড অবস্থা হয়ে গেল। সাতক্ষীরার দুই তরুণ কাজল এবং নাজমুলের রাজপুত্রের মতো চেহারা ছিল, কাজল ক্যাম্পে ৫/৬ খানা রুটি খেত এবং বলত, ‘আমাকে অনেকদিন যুদ্ধ করতে হবে তাই বেশি খেতে হবে’। একবার সে আমার সাথে আশাশুনির কলমটি যায়, দেখি দুপুরের দিকে ৫টা টেংরা মাছ পুড়িয়ে এনে সে দিব্যি খাচ্ছে এবং বলছে, আমি গেরিলা হব, তাই এখন খাওয়ার অভ্যাস করছি। আর নাজমুল মাত্র ১টা বড়জোর দুটো রুটি খেত। সে প্রায় সময়ই ‘বাংলাদেশের কোথা হতে কখন আপনি-তুমি এসে দেখা দিলে ওগো জননী’ গানটা গাইত। ওরা দু’জনই ছিল আমার ভক্ত। আরো কত স্মৃতি। ‘স্যার’ কেমন যেন মুষড়ে পড়েছেন আজকের এই শোকে। নারায়ন পাইকগাছা থানার হরিঢালী উলুডাঙ্গা রহীমপুরের ছেলে। আজকের যুদ্ধের সে অন্যতম শহীদ। তাকে মুখে আগুন দিয়ে ইছামতিতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। একজন মুজাহীদও শহীদ হয়েছে, সর্বমোট ৭ জন এবং একজন নিখোঁজ। সবাই যদি ‘স্যারের’ নির্দেশ মতো অসীম সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করতে করতে, না বের হত তবে আরো জীবনের ক্ষতি হত। ইছামতির জোয়ারে নাজমুলের লাশ ভেসে আসে। সেই দৃশ্য দেখার মতো নয়, তারপর জানাযা ও দাফন করে কবর দেয়া হয়। এ স্মৃতি বড় করুন।
[৬৩৪] স ম বাবর আলী
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত