You dont have javascript enabled! Please enable it! সামরিক কর্মকর্তা, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিক মোহাম্মদ আবদুল জলিল - সংগ্রামের নোটবুক

জলিল, মোহাম্মদ আবদুল, মেজর (১৯৪২-১৯৮৯)

মোহাম্মদ আবদুল জলিল, সামরিক কর্মকর্তা, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিক। বরিশাল জেলার উজিরপুরে ১৯৪২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তাঁর জন্ম। উজিরপুর ডব্লিউ বি ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯৫৯ সালে প্রবেশিকা এবং পাকিস্তানের মারী ইয়ং ক্যাডেট ইনস্টিটিউশন থেকে আইএ পাশ করে আবদুল জলিল ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে ট্রেনিং অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। সামরিক বাহিনীতে চাকরিরত অবস্থান তিনি বিএ এবং ইতিহাসে এম এ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পান এবং ১৯৭০ সালে মেজর পদে উন্নীত হন।
মুলতানে কর্মরত থাকাকালে তিনি ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ছুটি নিয়ে বরিশালে আসেন এবং মার্চ মাসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি নবম সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্ব লাভ করেন। কিন্ত নভেম্বর মাসে তাঁকে এ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখেন।
১৯৭২ সালের অক্টোবর মাসে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠনে মেজর জলিল উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তিনি ছিলেন এ দলের যুগ্ম আহবায়ক। ২৬ ডিসেম্বর দলের কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁর নেতৃত্বে জাসদ দেশে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে এবং সরকার বিরোধী রাজনীতিতে সক্রিয় থাকে।
১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ দলীয় কর্মিদের নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরকারি বাসভবন ঘেরাও অভিযানকালের তিনি গ্রেফতার হন এবং ১৯৭৫ সালের ৮ নভেম্বর মুক্তিলাভ করেন। ১৮ জুলাই ১৯৭৬ অবৈধ পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টার অভিযোগে বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচার তিনি যাবতজ্জিবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। ১৯৮০ সালের ২৫ মার্চ তিনি মুক্তিলাভ করেন।
জাসদ, ওয়ার্কর্স পার্টি ও কৃষক-শ্রমিক সমাজবাদী দলে সমন্বয়ে গঠিত ত্রিদলীয় জোটের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মেজর জলিল ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলে সভাপতি পদ থেকে অপসারিত হন। এরপর তিনি জাসদ ত্যাগ করে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন নামে একটি দল গঠন করেন এবং এই দলের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করেন। লেখক হিসেবে মেজর জলিল উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তাঁর রচিত রাজনীতি বিষয়ক গ্রন্থঃ সীমাহীন সময় (১৯৭৬), দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবন দর্শন, সূর্যোদয় (১৯৮২), অরক্ষিত সাধিনতাই পরাধীনতা (১৯৮৯), Bangladesh Nationalist Movement for Unity: A Historical Necessity তিনি ১৯৮৯ সালের ১৯ নভেম্বর পাকিস্তানের ইসলামাবাদে মৃত্যুবরণ করেন।

[৭৩] রিয়াজ আহমেদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত