জাতহলিদার যুদ্ধ, বগুড়া
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বগুড়া এলাকায় যুদ্ধ ছিল মূলত খণ্ড খণ্ড আক্রমণ এবং পাল্টা আক্রমণের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মুক্তিবাহিনী শত্রুর ওপর এ ধরনের আক্রমণ পরিচালনা করে তন্মধ্যে জাতহলিদার প্রতিরোধ যুদ্ধ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ যুদ্ধে উভয় দলের তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও পাকবাহিনী পরাজিত হয় এবং পিছু হটে যায়। বগুড়া থেকে সারিয়াকান্দি পৌঁছাতে পাকবাহিনী যে রাস্তা ব্যবহার করত জাতহলদা সেই সড়কের পাশে ছিল সারিয়াকান্দি পৌঁছাতে এই প্রধান সড়কের বিকল্প কোনো রাস্তা নেই। সেই কারণে জাতহলিদার যুদ্ধ কৌশলগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পাকবাহিনী যাতে বগুড়া থেকে এসে সারিয়াকান্দি এলাকায় প্রবেশ করে বাঙালীদের হত্যা করতে না পারে সে কারণে জাতহালিদা গ্রামে প্রতীরোধ গড়ে তোলা হয়। পাকবাহিনীর জনবল, অস্ত্র, গোলাবারুদের ক্ষতিসাধন করার জন্য জাতহালিদায় প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। নেপালতলী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে রাজাকার রিক্রুটিংয়ের খবর পেয়ে জনাব রেজাউল বাকীর নেতৃত্বে ৩৫ জনের একটি মুক্তিযোদ্ধা দল অক্টোবরের মাজাহ্মাঝি সময়ে নেপালতলী ইউনিয়নের জাতহলিদা, সরাতলী এবং আবন্দপাড়া গ্রামে অবস্থান নেয়। এ সংবাদ পেয়ে পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান গ্রহণের দ্বিতীয় রাত্রিতে জাতহালিদা গ্রাম কর্ডন করে। কিন্ত মুক্তিযোদ্ধারা পূর্বেই পাকসেনাদের আগমনের সংবাদ পেয়ে যায় এবং তাদের গতিবিধি লক্ষ করে জাতহলিদা গ্রাম ছেড়ে পাশে দুই গ্রামে অবস্থান নেয়। পাকসেনারা গ্রামের ভেতর অগ্নিসংযোগ এবং তল্লাশি শুরু করে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা পাশের গ্রাম থেকে পাকসেনাদের দিকে গুলিবর্ষণ শুরু করে। উভয় পক্ষে ৪-৫ ঘন্টা গুলি বিনিময় হয় ও ভোররাতে পাকবাহিনী গ্রাম ত্যাগ করে। মুক্তিযোদ্ধারা সারাদিন ওই গ্রামে অবস্থান করে এবং সন্ধ্যায় নারচি চলে যায়। এ যুদ্ধে কোনো পক্ষে কোনো হতাহত হয়নি।
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত