চরটেপুরাকান্দি যুদ্ধ, ফরিদপুর
যশোর পতনের পর রাজবাড়ীর বিহারী, রাজাকার ও মিলিশিয়াদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়। ১৩ ডিসেম্বর বিহারী ও মিলিশিয়ারা তাঁদের পরিবার-পরিজনসহ গোয়ালন্দে সমবেত হয় এবং পরে পদ্মার পাড় দিয়ে পূর্বদিকে অগ্রসর হয়। এ খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানার মোকারম গ্রুপের ১৫/২০ জন মুক্তিযোদ্ধা তাহের দেওয়ানের নেতৃত্বে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ গেলে তারা বিহারী-মিলিশিয়াদের দ্বারা ঘেরাও হয়ে যায় এবং গুলিবিনিময় চলতে থাকে। ঐ খবর পেয়ে ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা মেজবাহউদ্দিন খান মিরাজ, নীতিভূষণ সাহা প্রমুখের নেতৃত্বে সম্মিলিতভাবে তিন দিক থেকে আক্রমণ করে। তাঁদের আত্মসমর্পণের আহবান জানানো সত্ত্বেও তারা গুলি চালাতে থাকে। ১৬ তারিখ দুপুর থেকে ১৭ তারিখ দুপুর পর্যন্ত ব্যাপক গুলিবিনিময় হয়। ১৭ তারিখে ফরিদপুর শহর থেকে ভাঙ্গা, নগরকান্দা, মকসুদপুর এবং চরভদ্রাসন থেকে মুক্তিযোদ্ধারা যোগদান করে। হাজার হাজার জনগণের গগণবিদারী জয়বাংলা শ্লোগান এবং মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিবৃষ্টির মুখে বিহারী-মিলিশিয়ারা আত্মসমর্পণ করে। ওই সিএন্ডবি ঘাটের মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুস শহীদ হন। অপরদিকে কয়েকশ’ বিহারী-মিলিশিয়া নিহত হয়। আত্মসমর্পণকারী বিহারী-মিলিশিয়ারা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য ফরিদপুর জেলে পাঠানো হয়। ঐ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর বিহারী-মিলিশিয়াদের সঙ্গে যুদ্ধ করার কোনো ইচ্ছা ছিল না। তাই বারবার তাঁদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয় এবং বলা হয় আত্মসমর্পণকারীদের নিরাপত্তা দেয়া হবে। কিন্তু আত্মসমর্পণ না করে দু’দিন যুদ্ধ চালিয়ে যায়। এর কারণ তারা নিজেরাই। রাজবাড়ী গোয়ালন্দে এসব বিহারী-মিলিশিয়া অবর্ণীয় নির্যাতন, গণহত্যা, নারী ধর্ষণ ও লুটপাট করেছে। তাদের ধারণা ছিল আত্মসমর্পণ করলে তারা ক্ষমা পাবে না। তাদের এই মনোভাবের জন্য বিজয়ের পরও এই রক্তক্ষয়ী ও মর্মান্তিক যুদ্ধ পরিচালনা করতে হয়।
[১৫] আবু সাঈদ খান
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত