পাগলা গ্রাম অ্যামবুশ, কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রাম নাগেশ্বরী থানার একটি গ্রাম পাগলা। অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল হকে নেতৃত্বে ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা এই অভিযানে অংশ গ্রহণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা পাগলা খান পার হয়ে নাগেশ্বরী ফুলবাড়ী রাস্তার দু’পাশের উত্তর ও দক্ষিণ বরাবর সুবিধামত কয়েকটি বাড়ির কাছে বাঁশের ঝোপে ও জঙ্গলের মধ্যে ওঁৎ পেতে বসে থাকে। সকাল ১০টার সময় পাকিস্তানী ও ইপিক্যাপের দুটি দল এই পথ ধরে পাগলার দিকে এগিয়ে আসে এবং পাগলার খালের পাশে পৌঁছা মাত্রই মুক্তিযোদ্ধারা দুদিক থেকে প্রচণ্ড গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এমন সময় নাগেশ্বরী থেকে অগ্রসরমান শত্রুর অপর দল মুক্তিযোদ্ধাদের পিছন দিক থেকে আক্রমণ করে নিরাপদ স্থানে চলে আসে। খাল পার হয়ে এসে মুক্তিযোদ্ধারা পাগলা বাজারের উত্তর দক্ষিণ পাশে অবস্থান নিয়ে শত্রুর ওপর বৃষ্টির মত গুলিবর্ষণ করতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের কুড়িগ্রাম জেলার সদর থানার পূর্ব্দিকে ব্রক্ষপুত্র নদীর চরাঞ্চলে যাত্রাপুর একটি চর। এই চরে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান করে পাকিস্তানীদের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা করতো। ৯ নভেম্বর স্বাধীন বাংলা প্রথম পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ সংঘর্ষের খবর পেয়ে কুড়িগ্রাম সদর থানার ঘোগাদহ ইউনিয়নের ৩০০ রাজাকার স্বেচ্ছায় তাদের হাতিয়ার যাত্রাপুরে কমান্ডার মন্সুরের নিকট আত্মসমর্পণ করে। এই আত্মসমর্পনের খবর বিভিন্ন স্থানে রাজাকারদের মনে বিরাট প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তারা কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে যেমন-নুন খাওয়া, বুড়বুড়ি, মুগল্বাচা ইত্যাদি থেকে, স্বেচ্ছায় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে থাকে। কুড়িগ্রাম শহরে শত্রুঘাটি থেকে বহু রাজাকার তাদের হাতিয়ারসহ পালিয়ে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
[৫৯৬} অমিত কুমার বিশ্বাস
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত