You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.05 | গাড়াগঞ্জ ব্রিজের সম্মুখ যুদ্ধ, ঝিনাইদাহ - সংগ্রামের নোটবুক

গাড়াগঞ্জ ব্রিজের সম্মুখ যুদ্ধ, ঝিনাইদাহ

৫ এপ্রিল [মতান্তরে ৩০ মার্চ) ঝিনাইদাহ শহর থেকে ৮কি.মি. উত্তরে ঝিনাইদাহ কুষ্টিয়া মহাসড়কের শৈলকূপা থানার গাড়াগঞ্জ নামক স্থানে এই দু’টি জেলার সাথে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সেতু প্রথমে ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর বালি চুন দিয়ে ভাঙ্গা অংশটি একটি মরণফাদে পরিণত করা হয়। কুষ্টিয়া থেকে ঝিনাইদাহগামী পলায়নপর পাকবাহনীর দু’টি জীপ গাড়াগঞ্জ ব্রিজের এমনি মরণফাদে আটকে পড়ে। এর পরপরই মেজর শোয়েবসহ একটি ট্রাক ভর্তি পাক হানাদার বাহিনীর ৫০/৬০ জন জোয়ান এই মরণফাদে আটকা পড়ে। হতবুদ্ধি পাকসেনারা গাড়ি ফেলে চারদিক ছড়িয়ে পড়ে। এই অবস্থায় আগে থেকে ওৎ পেতে ত্থাকা মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে খানসেনাদের তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে হানাদার বাহিনী গ্রামের দিকে ছুটে পালাতে থাকে। তখন হাআজার হাজার সাহসী গ্রামবাসী আধুনিক অস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী সমরাস্ত্রেও সজ্জিত পাকবাহিনীকে খতম করার উদ্দেশ্য ঢাল, ফালা, বল্লম, লাঠিসোঁটা ইত্যাদি নিয়ে আক্রমণ করে। শুরু হয় বিভিন্ন স্থানে খণ্ড খণ্ড যুদ্ধ। একই সময়ে মশিউর রহমানের নেতৃত্বে প্রচণ্ড যুদ্ধ চলতে থাকে। গাড়াগঞ্জের ব্রিজের যুদ্ধে বেলুচ রেজিমেন্টের গাড়িগুলো বিধ্বস্ত হলে মুক্তিবাহিনীর হতে পাক হানাদার বাহিনীর লেফটেন্যান্ট আতাউল্লাহ শাহ্‌ গুরুতর আহত অবস্থায় ধরা পড়ে। তাঁকে প্রথমে শৈলকূপা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পড়ে ভারতে নিয়া যাওয়া হয়।
আতাউল্লাহ শাহ্‌ ভারত বেতার থেকে পাকিস্তানী শাসকচক্রের উদ্দেশে বলেন, “আমার বাঙালীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ভুল করেছি”। এসময় বেঙ্গল রেজিমেন্টের ইপিআর সদস্য ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা জনসাধারণকে সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেন। এই যুদ্ধে ২৭ বেলুচ রেজিমেন্টের একজন সদস্যও যশোর ক্যান্টনমেন্ট জীবিতাবস্থায় ফিরে যেতে পারে নি। শৈলকূপার মুক্তিযোদ্ধা নিশিকান্ত সাহা এই যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বাহিনীর নিক্ষিপ্ত গ্রেনেডের ক্ষত শরীরে বহন করে আজও বেঁচে রয়েছেন। এই যুদ্ধে যারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন, তারা হলেনঃ তৎকালীন সাংসদ কাজী খাদেমুল ইসলাম, খন্দকার আরেফিন রোকনুজ্জামান রবার্ট, বিশারত আলী, জামাল খাঁ, রহমত আলী মন্টু, ডা. মোকাররম হোসেন, ডা. সিরাজুল ইসলাম এবং মশিউর রহমান। এই যুদ্ধের অভূতপূর্ব সাফল্যে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্নপ্রত্য্য বহুগুণ বেড়ে যায়।
সদরুল আইন

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত