You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.10 | গলাচিপা আক্রমণ, পটুয়াখালী - সংগ্রামের নোটবুক

গলাচিপা আক্রমণ, পটুয়াখালী

৩/৪ দিন পরে ঠিক করলাম ওদের ঘাঁটি আক্রমণ করতে হবে। শওকতকে প্রধান করে জাহাঙ্গীর, মোস্তফা, হাবিবসহ ৩৫ জনের একটা দল পাঠালাম গলাচিপা আক্রমণ করতে। ওরা ঠিক পরিকল্পনা মতো আক্রমণ করল। মারা গেলো বিপক্ষের কয়েকজন। দিন শেষ হয়ে গেল। ওরা ফিরে এল শিবিরে। আবার পরিকল্পনা করল সেই রাতেই আক্রমণ করার। কিন্ত রাত আর আসতে পারল না দুপুরের দিকে সদলবল থানা ছেড়ে পটুয়াখালীর দিকে চম্পাট। খবরটা পেলাম রাতে। শওকত লাফিয়ে পড়ল। তখনই ১০ জনের একটা দল নিয়ে সে চলে গেল গলাচিপায়। পরের দিন বাকী সকলকে নিয়ে আমিও গিয়ে পৌঁছলাম। পটুয়াখালী থেকে জাতিসংঘের একটা ছোট জাহাজে কয়েকজন বাঙালি পুলিশ দিয়ে মেজর ইয়ামিন একটা দল পাঠালেন পর্যবেক্ষণ করতে। অর্থাৎ গলাচিপার খবরাখবর সংগ্রহ করতে। শব্দ শুনে রেডি হলাম। কিছুক্ষন পরে চোখে পড়ল জাতিসংঘের জাহাজটা গলাচিপা বন্দরের দিকে এগিয়ে আসছে। আমরা ওৎ পেতে থাকলাম। আওতার মধ্যে আসার সাথে সাথে আক্রমণ চালালাম। প্রায় ১ মাইল এলাকা নিয়ে আমরা পজিশন নিয়েছিলাম। বাঙালি পুলিশগুলো তাদের হাতেরত অস্ত্রশস্ত্র সব নদীতে ফেলে দিল। শেষ পর্যন্ত কূলে ভিড়ল জাহাজটি। চেষ্টা করছিল কাটিয়ে যেতে কিন্ত পারল না। দখল করলাম জাহাজটি। ওটার নাম ছির ‘বাট্টি-মেবি’। মালয়েশিয়ার লোক ছিল ক্রু। তাদের কাছ থেকে আমাদের এয়ার ফোর্সের শাজাহান, মজিদে, মিজান শিখে নিল জাহাজটি চালাবার পদ্ধতি। মালয়েশিয়ানদের সসম্মানে জাহাজ থেকে উঠিয়ে যত্ন সহকারে তাঁদেরকে রাখলাম গলাচিপার একটা হোটেল। জাহাজটাকে আমরা আমাদের যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করলাম। ডিসেম্বরের পাঁচ তারিখ, হাতেম আলী, আলমগীর, আজাদ, বারেক, ওদের সকলের নিকট ব্যক্তিগত চিঠি পাঠালাম পটুয়াখালী আক্রমণ করা প্ল্যান দিয়ে। ডিসেম্বরের ১০ তারিখ। রাত ১০ টার সময় বারেক তাঁর দল নিয়ে পটুয়াখালীর উত্তর পাড় দিয়ে, আমি লোহালিয়া অর্থাৎ পটুয়াখালীর পূর্ব দিক দিয়ে, হাতেম আলী, আলমগীর দক্ষিণ দিক দিয়ে এবং আজাদ পটুয়াখালীর পশ্চিম পার দিয়ে আক্রমণ চালাবে। পাঁচ কমান্ডারের একটা বৈঠক আহব্বান করলাম বগাবন্দরে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বগাবন্দর বাউফল থানার অন্তর্গত এবং পঞ্চম আলীর দল বাউফল থানা দখল করে নিয়েছিল। তখন পর্যন্ত গলাচিপা, বাউফল, বামনা ও বেতাগী থানা মুক্তিবাহিনী দখলে।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত