খাটালিয়া-লক্ষ্মীখোলা রাজাকার ঘাঁটি দখল, খুলনা
১৯৭১ সালে দাকোপ থানার চালনা ইউনিয়নের খাটালিয়া থানার খোলা গ্রামে আবুবক্কর শেখের একতলা বাড়িতে একটি রাজাকার ক্যাম্প প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ক্যাম্প থেকে রাজাকার এলাকায় চরম অত্যাচার নির্যাতন চালায়। তদের অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করে। লুটতরাজ, হত্যাযজ্ঞ, নারীধর্ষণ প্রভৃতি তাদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজে পরিণত হয়। এতে এলাকাবাসি অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। স্থানীয় অধিবাসীরা ৩০/৩৫ মিটার দূরে শিবাসা নদীর অপর পাড়ে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের হাতিয়াডাঙ্গা কাম্পের স্মরণাপন্ন হয়। এ ক্যাম্পে তখন অবস্থান করতেন লে. গাজী রহমত উল্লাহ দাদু। তিনি ঘটনা শোনার সাথে সাথে এ রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এ আক্রমণ পরিচালিত হয়। তিনি ৩টি নৌকা যোগে ৬০/৬৫ জন যোদ্ধা নিয়ে রওনা হন। খাটাখালির-লক্ষ্মীখোলায় যেতে হয় শিপাসা নদী পড়ে হয়ে ঢাকী নদীর মধ্যে দিয়ে। নদীপথে প্রধান সমস্যা ছিল ঢাকী নদীতে পাকসেনাদের গানবোটের টহল। তিনি অতি সাবধানে টহল এড়িয়ে পৌঁছে যান লক্ষ্মীখোলায়। সেখান থেকে রেকি করে রাজাকারদের অবস্থান জেনে নেন। এরপর ৪টি গ্রুপে ভাগ হয়ে ক্যাম্পের চারিদিকে ঘিরে ফেলে তিনি আক্রমণের নির্দেশ দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের জবাবে রাজাকাররা পালটা গুলি ছুঁড়তে থাকে। আধঘণ্টা গুলি বিনিময়ের পর দাদু রাজাকারদের আরনসমর্পণের আদেশ দেন এবং দশ মিনিট সময় দেন। এ সময় কয়েকজন প্রবীণ লোক মধ্যস্থতা করার জন্য এগিয়ে আসলে দাদু তাঁদেরকে সে সুযোগ দেন। কিন্ত রাজাকাররা আপস আক্রমণ শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা ভবনের কাছাকাছি চলে এলে রাজাকার কমান্ডার অস্ত্র ফেলে দিয়ে আত্নসমর্পণের আবেদন জানান। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা সবাইকে বেঁধে ফেলে। এ সময় উপস্থিত জনগণের অনুরোধ মুক্তিযোদ্ধারা স্থানীয় কয়েকজন রাজাকারকে ছেড়ে দেয় এবং বাকিদেরকে ক্যাম্পে নিয়ে আসে।
[৯২] রিয়াজ আহমেদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত