কোদালিয়া ও দেওহাটা সেতুর পতন, টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত মির্জাপুর থানাধীন ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে কোদালিয়া নামক স্থানে অবস্থিত সেতুটিই সোদালিয়া সেতু নামে পরিচিত। ১৯ শে নভেম্বর অপরাহ্ন ৪টার পর পূর্বে পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিবাহিনীর কোম্পানিগুলো ঢাকা-টাঙ্গাইল রাস্তার দিকে এগুতে থাকে। পাঁচটার মধ্যে তারা পাকা সড়কের পশ্চিমে যার যার সুবিধামতো অবস্থান নেয়। নিত্য দিনের মতো এদিনও সড়ক পাহারায় নিয়োজিত দু’টি হানাদার কোম্পানি ‘কনভয়’ ঢাকা-টাঙ্গাইল ও টাঙ্গাইল-ঢাকা যাতায়াতে করে টহল দিচ্ছিল। দু’বার টহলদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। টহলদার বাহিনীর মধ্য কোনো সংশয় বা উত্তেজনা নেই। গাড়ির মধ্যে তারা নিশ্চিন্তে ঢিলেঢালাভাবেই রয়েছে। ইফতারের কিছু আগে টহলদার বাহিনী পাকুল্লা থেকে ঢাকার দিকে এগুতে থাকে। ইফতারের মিনিট কুড়ি পর হানাদার দলটি কোদালিয়া সেতু পার হয়। কমান্ডার সবুর খান তাঁর নেতৃত্বাধীন দলকে আরেকবার সতর্ক করে দেন। হানাদাররা সূত্রাপুর, গজারিয়াপাড়া ও কালিয়াকৈর পেরিয়ে গেলো।
কোদালিয়া সেতু পার হওয়ার প্রায় দু’ঘণ্টা পরেও যখন মহিষাবাথান পুল পেরিয়ে যাওয়ার সংকেত এল না, তখন কমান্ডার সবুর খান কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি ঠিক বুঝতে পারছিলেন না কেন অনিবার্য সংকেতটি আসছে না। তবে কি শত্রুরা মহিষাবাথান পুল পার হয়নি? ঢাকার দিক থেকেও কোনো সংকেত ছাড়া পুলে আঘাত হানবে কিনা তা নিয়েও কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দে ছিল। দু’ঘণ্টা কুড়ি মিনিট পরও সংকেত না পেয়ে কমান্ডার সাইদুর রহমানের সাথে পরামর্শ করে সবুর খান মুক্তিযোদ্ধাদের কোদালিয়া সেতু আক্রমণে নির্দেশ দেন। সবুর খান ও সাইদুর রহমানের নেতৃত্বেধীন পনের জন করে গড়া দু’টি দল মিলিশিয়া ও রাজাকারদের প্রতিরোধে অতি সহজেই ভেঙে দিয়ে পুল দখল করে ধ্বংস করেন। পাঁচ-সাত মিনিটের যুদ্ধে ৪জন মিলিশিয়া ও পঞ্চাশজন রাজাকার মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্নসমর্পণ করে। মুক্তিযোদ্ধা ও শত্রুবাহিনী কেউই হতাহত হয়নি।
কমান্ডার সবুর খান কোদালিয়া সেতুটি আঘাত হানার ৫ মিনিটের মাথায় ২ মাইল উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত দেওহাটা সেতুটি কমান্ডার রবিউল তাঁর দল নিয়ে আঘাত হানেন। দেওহাটা সেতুর পতন ঘটাতে তেমন গোলাগুলি বা সংঘর্ষের সম্মুখীন হতে হয়নি। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে কিছুক্ষণের মদ্ধেই সেতুর অধিকাংশ পাকসেনা ও রাজাকার রাস্তার আড়াল নিয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে পালিয়ে যায়। মুক্তিবাহিনী সেতু দখল করে ধ্বংস করে। দেওহাটাতে ৭/৮ জন পাকবাহিনীর সদস্য ও রাজাকার মুক্তিবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে।
[৫৯৫] ফিরোজ খায়রুদ্দিন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত