You dont have javascript enabled! Please enable it! কুমিল্লার প্রতিরোধ, কুমিল্লা - সংগ্রামের নোটবুক

কুমিল্লার প্রতিরোধ, কুমিল্লা

২৫ মার্চ থেকে পাকিস্তানীরা এ দেশে নিরস্ত্র বাঙালি উপর যে তাণ্ডবলীলা চালায় তার প্রথম প্রতিরোধে হয় এই কুমিল্লায়। সংগ্রামী ঐতিহ্যের গর্বিত উত্তোরাধিকার নিরস্ত্র কুমিল্লাবাসী দেশে পাক সৈন্যদের নির্মম অত্যাচার প্রতিরোধ করে। ’৭১-এর মার্চ দ্বিপ্রহরে দেবীদ্বার থানার জাফরগঞ্জ বাজার ও তৎসংলগ্ন এলাকার জনগণ হঠাৎ গুলির শব্দে চমকে ওঠে, কিছুক্ষণের মধ্যেই জানতে পারে আখাউড়া থেকে এসে সাত জন পাকসেনা জাফরগঞ্জ বাজারের মসজিদে আশ্রয় নিয়েছে। জাফরগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন বিভিন্ন অস্ত্র, মরিচের গুঁড়া, বালু ইত্যাদি নিয়ে মসজিদটি ঘিরে ফেলে। মসজিদে অবস্থানরত পাকসেনারা তখন জনতার উপর গুলি ছুঁড়তে থাকে। নিরস্ত্র জনসাধারণের প্রতিরোধ বুড়িচং থানায় পৌঁছলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বার্তা বাহকের কাছে ৯০টি রাইফেলের গুলি দিয়ে দেয়। পূর্বাহ্নে তবদল হোসেন অসম্ভব সাহসিকতা সঙ্গে মসজিদের জানালা দিয়ে পাকসেনাদের দুইটি রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে আসে এবং পরক্ষণে আরো একটি রাইফেল হস্তগত করার জন্য এগিয়ে গেলে পাকসেনাদের গুলিতে তিনি শহীদ হন। তবদল হোসেন কর্তৃক ছিনিয়ে আনা রাইফেলে ওসির দেয়া গুলি কাজে লাগানো হয়। এসময় বুড়িচং থানা থেকে পুলিশ কনষ্টেবল মোল্লা ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রতিরোধ আক্রমণে সুষ্ঠ নেতৃত্বে দেন এবং জনগণকে অহেতুক গুলিবিদ্ধ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেন। কনেস্টেবল মোল্লার সময়োচিত নেতৃত্বে এলাকাবাসী মসজিদে অবস্থানরত ৭ জন পাকসেনার মধ্যে তিনজঙ্কে মসজিদের জানালা দিয়ে হত্যা করতে সমর্থ হয়। এ সময় কংশনগরের আলতাফ আলী, আবদুল সাত্তার (আনছার) সহ আরো কয়েকজন মসজিদের পিছন দিয়ে ছাদ ছিদ্র করে কাপড়ের মধ্যে মরিচের গুঁড়া দিয়ে আগুন লাগিয়ে মসজিদের ভিতরে ফেলে দেয়। এতে বাকি চারজন মসজিদের বাহিরে আসতে বাধ্য হয়। উপস্থিত জন প্রচণ্ড আক্রোশে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই প্রতিশোধ আক্রমণে কংশনগরেরে ফজল আলী, তবদল হোসেন, বাদশা মিয়া, চান্দিপুরের এক অবসর প্রাপ্ত সামরিক লোক, মনোহর পুরের একজন, বারা গ্রামের চারজন, গড়ার চরের একজন শহীদ হন। জাফরগঞ্জ মসজিদ সংলগ্ন এলাকা ও আসার পথে এই পাকসেনারা অন্তত ৩২ জনকে হত্যা করে। ৩১ মার্চের এই প্রতিরোধ সংঘর্ষ ছিল পাকসেনাদের সঙ্গে নিরস্ত্র জনসাধারনের প্রথম সংঘর্ষ। এর পূর্বে চট্টগ্রামের বেঙ্গল রেজিমেন্টের বঙ্গ শার্দুলের সঙ্গে পাকসেনাদে সংঘর্ষ হয় যা ছিল সামরিক অস্ত্রে সজ্জিত ও সুপরিকল্পিত যুদ্ধ।
[১৮] আবুল কাশেম হৃদয়

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত