কুমিল্লার রণাঙ্গন-১, কুমিল্লা
২৫ মার্চ সিলেটের জকিগঞ্জে পাকবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের সুবেদার আবদুল জলিল সরকারী দায়িত্ব পালনকালে বিশেষ বার্তা পেয়ে কুমিল্লা আসেন। রেললাইন এলাকায় পৌঁছার পর পাকবাহিনীর তাণ্ডবলীলা সম্পর্কে অবগত হয়ে ক্যান্টনমেন্ট না গিয়ে জাঙ্গালিয়া পাওয়ার ষ্টেশনে যাওয়ার মনস্থ করেন। সেখানে ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৪নং ব্যাটালিয়ানের একটি প্লাটুন ছিল। সেই প্লাটুনের কমান্ডার ছিলেন তারই ছাত্র নায়েব সুবেদার আবদুল জলিল। তিনি যখন জাঙ্গালিয়া আসছিলেন তখন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের (ডিগ্রিশাখা) কাছে একটি জীপ আড়ি থেকে কতিপয় সামরিক লোক খেলার ছলে তিনজন বাঙালি লোককে গুলি করে হত্যা করে। সুবেদার জলিল কোন রকমে জাঙ্গালিয়া পৌঁছান এবং প্লাটুনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি জানতে পারেন তার ছাত্রের এ প্লাটুনে ৩০ জন সিপাই, এনসিওর জন্য একমাসের রশদ, ৬টি হালকা মেশিনগান দুটি ষ্টেনগান, চাইনিজ রাইজফেল ও গোলাবারুদ রয়েছে। সুবেদার জলিল প্লাটুনের দুজন হাবিলদার ও অন্যান্য সঙ্গে আলাপ করে পাকবাহিনীর আক্রমণ প্রতিরোধ করার সিদ্ধান্ত নেন। সুবেদার জলিল পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সক্রিয় সংগ্রামের পরিকল্পনা করেন এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তার ছাত্র নায়েব সুবেদার জলিলের উপর দায়িত্ব দিয়ে লাকসাম চলে আসেন। ২৭ মার্চ সকালে লাকসামে এসে আবদুল আওয়াল এম. পি. এ জালাল আহাম্মদ এম. পি. এ প্রমুখ নেতৃবৃন্ধকে তার পরিকল্পনা অবগত করান। নেতৃবৃন্ধ সুবেদার জলিলকে সাহায্য করার আশ্বাস দেন কিন্তু পাকবাহিনীর তৎপরতা লক্ষ্য করে পরিকল্পনা বাতিল করেন। ২৮ মার্চ সন্ধ্যায় পুরো প্লাটুন নিয়ে লাকসামের মনু মিঞার বাড়িতে যান এবং সেখান থেকে বাগমারা হাই স্কুলে ফিরে সে চাঁদপুর সড়কের পাশে প্রতিরোধ লাইন গড়ে তোলেন। আবদুল আওয়াল এম. পি০ এ এবং জালাল আহাম্মদ এম.পি. এ সুবেদার জলিলের প্লাটুনের যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সুরুজ মিয়া সর্বাত্মক সাহায্য এবং কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন। এরপরই শুরু হয় সক্রিয় সংগ্রাম। ৩১ মার্চ বেলা তিনটায় নায়েব সুবেদার জলিল তিনজন সিপাই নিয়ে কুমিল্লা বিমানঘাটির দক্ষিণ প্রান্তরে একটি ধানক্ষেত থেকে হালকা মেশিনগানের সাহায্যে পাকবাহিনীর মালবাহী কালো রঙের বৃহদাকার বিমানকে আক্রমণ করে। বিমানটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত না হলেও কুমিল্লা বিমান বন্দরে দু’দিন মেরামত কাজ চালাতে হয়। ২ এপ্রিল ঐ এলাকার চাঁদপুর গ্রামে প্লাটুনের চার জন সিপাই সাতজন পাকসেনা-কর্তৃক আক্রান্ত হলে কয়েকজন পাকসেনাকে হত্যা করে। এই সংঘর্ষে সুবেদারে প্লাটুনের দুজন শহীদ হন।
[১৮] আবুল কাশেম হৃদয়
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত