কলকাতা-কক্সবাজার (বঙ্গোপসাগর) অভিযান
মুক্তিবাহিনী মাধ্যমে খবর পাওয়া যায় যে কিছু পাকসেনা ও অফিসার কক্সবাজার দিয়ে স্থলপথে বার্মায় পালিয়ে যাবার চেষ্টা করচে। আর পাকিস্তানী জাহাজে অবলোকনে বিভ্রান্তকর রং লাগিয়ে অথবা অন্য দেশের ফ্ল্যাগ লাগিয়ে বিদেশী জাহাজের ছদ্মবরণে কয়েকটি জাহাজকে অবরোধ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ভারতের ইস্টার্ন ফ্লিটকে এ সংবাদ পাঠালো তারা সর্তক হয়ে যায়। পাকিস্তানী জাহাজ আইএন এস ভারতীয় গোলার আঘাতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাজেই ব্যর্থ হয় তাঁদের পালাবার চেষ্টা। মিত্রবাহিনী কক্সবাজারে রোমিও ফোর্স নামক একটি ফোর্স কলকাতা বন্দর থেকে পাঠায় পাকবাহিনীকে অবরোধ করতে। পূর্ব থেকেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল যে, এই ফোর্স কক্সবাজারে এসে জাহাজ থেকে নামার পর মিত্রবাহিনীর ৪র্থ কোর এর নিয়ন্ত্রণে থেকে যুদ্ধ করবে। রোমিও ফোর্স ১০/১১ ডিসেম্বর রাতে কলকাতায় মিলিত হয়ে এবং ১২ ডিসেম্বর ৪.৪৫ ঘটিকায় আইএনএস গুলজার ও মরিয়াল জাহাজে করে রওনা হয়। এই জাহাজ দুইটি ১৪ ডিসেম্বর ২.৪৫ ঘটিকায় আরভিতে পৌঁছে। তবে অপারেশনটি ব্যর্থ হয়। প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন উপকূল তটরেখা, স্রোতের গতি, পানির গভীরতা বিষয়ে জানা ছিল না। প্রশিক্ষণও হয়নি। অভিযানের শুরুতেই কয়েকজন ডুবে মারা যায়। এখানে উল্লেখ্য যে, পাকসেনারা ঐ সময় আত্মসমর্পণ না করলেও ভারতীয় বিমানবাহিনী দীর্ঘক্ষণ ধরে বিমান আক্রমণ চালিয়ে যেতে ব্যর্থ হলেও রোমিও ফোর্সের ভাগ্য খুবই খারাপ হতে পারত। এই ফোর্স উখিয়ার বিপরীতে অবতরণ করে এবং রামুর দিকে রাস্তায় রোড ব্লক স্থাপন করে। এই ফোর্স পরে মুক্তিবাহিনী ৮৩ ব্রিগেডের সাথে চট্টগ্রামে মিলিত হয়। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী সুপরিকল্পিত অগ্রাভিযান, উপযুক্ত চতুর্মুখী প্রথাগত আক্রমণের দলে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরাজিত হয়ে ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এই বিজয় ও স্বাধীনতা ত্বরান্বিত হয়েছিল সুদীর্ঘ নয় মাসে অকুতোভয় দেশাতৃকার জন্য নিবেদিত প্রাণ মুক্তিবাহিনীর অন্যান্য সাধারণ তৎপরতার কারণে।
[৫৯৭] কে.এম.আহসান কবীর
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত