ওদারহাট অপারেশন, নোয়খালি
ওদারহাট ক্যাম্পে রাজাকাররা ঐ সময় চরমটুয়া ইউনিয়ন এবং ১৫ নং ছয়ানীর বিভিন্ন গ্রামে ভয়ানকভাবে আক্রমণ করে। প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন গ্রাম আক্রমণ করে জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে দেয়। নারী নির্যাতন ও লুটপাটের অবস্থা দেখে ‘সি’ জোনের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিনিধি আলী আহম্মেদ চৌধুরী এক জরুরী মিটিং আহবান করেন। মিটিং-এ সকল রাজনৈতিক প্রতিনিধি এবং জোন কমান্ডাররা উপস্থিত ছিলেন। এই মিটিং সর্বসম্মতিক্রমে ওদারহাট রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ৩০ অক্টোবর শনিবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক দুপুর বারোটায় ‘সি’ জোনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ওদারহাট রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করেন। হাবিলদার সিরাজ, হাবিলদার মতিন, হাবিলদার খালেকের ট্রুপসহ প্রায় ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা আক্রমণে অংশগ্রহণ করেন। এই আক্রমণ ৪ ঘন্টা স্থায়ী হয়। এই আক্রমণে উভয় পক্ষের কয়েক হাজার রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়। বিকেল চারটায় মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা কৌশলে ক্যাম্পের বিল্ডিং-এর ওয়ালের কাধে সঙ্গে পৌঁছে যায়। তাঁদের গ্রেনেড নিক্ষেপের কথা বললে ২৬ জন রাজাকার বাধ্য হয়ে আত্মমসমর্পণ করে। এরপর বেলা দুটোর পর হজতে ক্যাম্পের চারদিকে প্রায় ৫/৬ হাজার জনতা জড়ো হয়ে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানের কথা এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। এসব লোকদের একত্রিত করে জনাব আফাজউদ্দিন আহম্মেদ এবং জনাব সেলিম। পরে ২৬ রাজাকারকে আবদুল্লাহ মিয়ার বাড়ির সামনে তিন রাস্তার মোড়ে গুলি করে মারা হয় এবং এই খবর মাইদজদী পাকবাহিনীর নিকট পৌঁছে। সেদিন যেসব রাজাকারদের হত্যা করা হয় তারা হলো, আচুয়া ডগির নুম্মা, হুগলির নছির, আবু কালাম, হালিম, রফিকউল্লাহ, ফায়েজ, হাফিজ উল্লাহ, হাশেম, চরমটুয়ার রফিক, বোবার কান্দির আবুল কালাম, দক্ষিণ জগৎপুরের আব্দুল হক, রামগতির কাদির মাওলানা এবং লক্ষীপুরের ওয়লীউল্লাহ উল্লেখযোগ্য। পরদিন সকালে ১০ টা গাড়ি নিয়ে পাকবাহিনীর বহর সেখানে পৌঁছে। মেজর গাড়ি থেকে নেমে রাজাকারদের লাশ দেখে দ্রুত পুনরায় মাইজদী চলে আসে। ভীত সস্ত্রস্ত অবস্থায় এই জায়গায় কোনো অপারেশন করার সাহস পায়নি।
[৪৪] জোবাইদা নাসরীন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত