করটিয়ার কমান্ডো আক্রমণ, টাঙ্গাইল
শত্রু বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি ছিল টাঙ্গাইল শহর থেকে ৫ মাইল দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত করটিয়ার। টাঙ্গাইল সামরিক ছাউনির পরেই করটিয়ার নাম করা যায়। করটিয়ার জমিদারদের এক অংশের সক্রিয় সহায়তায় এবং জামাতে ইসলামীদের উদ্যেগে এখানে রাজাকারদের একটা বড় রকমের ঘাঁটি সৃষ্টি হয়। প্রথমে হাতেম নামক এক ব্যক্তি রাজাকার কমান্ডার হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উপর অত্যাচার চালায় এবং যুবক ও ছাত্রদের দেশ ত্যাগে বাধ্য করে। অবশ্য জুন মাসের দিকে তার ভবলীলা সাঙ্গ হয়। করটিয়া রাজাকার ক্যাম্পএ হাতেম যখন রাজাকারদের শিক্ষা দিচ্ছিল তখন মুক্তিবাহিনীর কমান্ডো সবুরের গুলীর আঘাতে মৃত্যু ঘটে।
এই ঘটনার পর বেশ কিছুদিন রাজারদের উৎপাত বন্ধ হয়ে যায়। জনসাধারণ ও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বাঁচে। কিন্তু হঠাৎ দেখা গেল আগস্ট মাসের মাঝামাঝি জমিদার বাড়ির কেউ কেউ বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে পাকবাহিনীকে সাহায্য করার জন্য। তারা নতুন করে রাজাকার বাহিনী গঠনে উঠে পড়ে লেগে গেল।
স্থানীয় দারোগাও দালালদের সহায়তার রাজাকার কমান্ডার হাতেমের হত্যার দায়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের সমর্থক সফি মিয়া ও অন্যান্য কয়েকজনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা সাজিয়ে ফেলল। এজন্য তারা কিছু সাক্ষি-সাবুদও তৈরি করে ফেলল। দালালদের এই কারসাজী নস্যাৎ করার জন্য অধিনায়ক কাদের সিদ্দিকী কমান্ডো সবুরকে ব্যবস্থা করতে বললেন। সবুর নেতার নির্দেশক্রমে ফেরদৌসকে সঙ্গে নিয়ে ১২ই আগস্ট রাতে করটিয়ার কাছে একটি গ্রামে আশ্রয় নিলেন এবং স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করতে লাগলেন। তারা ১৩ আগস্ট রাতে করটিয়া পুল ধ্বংস করে দিলেন এবং কমান্ডো পদ্ধতিতে কলেজ ভবনে হামলা চালিয়ে ৫ জন রাজাকারকে খতম করলেন। ১৪ই আগস্ট ভোর রাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের উপর সামরিক জিপের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে গাড়িটি অকোজো করে দেয়া হয় এবং জিপের আরোহী দু’জন শত্রু নিহত হয়। পাল্টা হামলা হওয়ার আগেই সবুর তার সঙ্গীদের নিয়ে নিরাপদ ঘাঁটিতে ফিরে আসেন। এই হামলার পর করটিয়া রাজাকার তৎপরতা স্তব্ধ হয়ে যায়।
[৫৯৫] ফিরোজ খায়রুদ্দিন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত