You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.06 | ঈশ্বরদী রণাঙ্গন - সংগ্রামের নোটবুক

ঈশ্বরদী রণাঙ্গন

ঈশ্বরদী মুক্ত হওয়ার আগে পাক সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের মূলত তিনটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এগুলো হচ্ছে ২৯ মার্চ মাধপুরের যুদ্ধ, ৬ নভেম্বর খিদিরপুররের যুদ্ধ এবং ১১ ডিসেম্বর জয়নগের যুদ্ধ। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের তরফ থেকে ছোটখাটো আরও বেশ ক’টি গেরিলা কায়দায় আক্রমণ পরিচালনা করে হয়েছে। ঈশ্বরদী মুক্ত করার লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন ৪টি মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ। এগুলোর নেতৃত্ব ছিলেন সিরাজুল ইসলাম মন্টু, সদরুল হক মৃধা, মেজর রশিদ, মতিউর রহমান কচি, আনিসুর রহমান, হাশিম সরোয়ার, কামাল আহমেদ ও শামসুজ্জামান সেলিম প্রমুখ বীর মুক্তিযোদ্ধা। মাধপুরের যুদ্ধে প্রাথমিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ২৫ জন যুবক মুক্তিযোদ্ধা মাত্র ৪টি সাধারণ বন্দুক, দা, ছোরা সম্ভল করে পাবনা থেকে পদ্মা নদী পথে আগত পাকবাহিনী ছোট একটি গ্রুপকে বাধা প্রদান করে। কিন্তু শত্রুপক্ষের আধুনিক অস্ত্রের মুখে তাদের এই বাধা তেমন জোরালো ছিল না। তবুও মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাপ্টেন আবদুল আজিজের নেতৃত্ব সাহসের সঙ্গে লড়াই করে প্রায় তিন ঘন্টা পাকসেনাদের অগ্রগমন ঠেকিয়ে রেখেছিলেন। তবে এই যুদ্ধে হাবিবুর রহমা শেলী, নবাব আলী, লতিফ, শামশের, ওহিদুর, রাজ্জাক, নূরুল, গফুর ও আলী আহমেদ নামের ৯ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১১ ডিসেম্বরের দুপুরবেলা পাকশি-ঈশ্বরদী রাস্তার ভেলুপাড়া সাঁকোর কাছে এ্যাম্বুশ করছিল ২৯ জন পাকসেনা। এখানে মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বপূর্ণ লড়াই করে ২৮ জন পাঞ্জাবি সৈন্যকে হত্যা করে। এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের স্মৃতিচারণ করে জানান, বাকি একজন পাকসেনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড ছুড়তে গিয়ে আমরা দেখি তাতে ডেটোনেটর নেই। ঐ আর্মিটি ঈশ্বরদী গিয়ে পরে আরও অস্ত্র ও সৈন্যসহ ফিরে আসে। এর মধ্যে আমরা নিহত সৈন্যদের অস্ত্রশস্ত্রগুলো নিয়ে ওখান থেকে সরে যায়। ঠিক এই অবস্থায় মিত্র বাহিনী আকাশপথে পাকশি হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ওপর বোমা নিক্ষেপ করতে শুরু করলে পাকসেনারা আর এগুতে পারেনি। মুজিব বাহিনী ও এফ এ বাহিনীর যৌথ উদ্যোগে পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি অপর একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয় ৬ নভেম্বর খিদিরপুর গ্রামে। এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন ওয়াছেব আলী (স্বাধীনতার পর দুস্কৃতকারীদের গুলিতে নিহত) ও আনিসুর রহমান। এখানে সাহসিকতাপূর্ণ লড়াই করেন ৩২ জন মুক্তিযোদ্ধা। শত্রুসেনারা ছিল সংখ্যায় এঁদের দিগুণের বেশি। এই যুদ্ধ সংঘটিত হয় দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। দেশমুক্তির এই লড়াইয়ে পাকবাহিনীর সাথে লড়াই করে শহীদ হন ইউনুস আলী শহীদুল ইসলাম, আবদুস সাত্তার, নায়েব আলী, আবদুর রাজ্জাক, আবদুর রশিদ, গেদু সরদার, আবদুল মালেক ও সাইদুর রহমান। এই যুদ্ধে শত্রুবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
[৬] সংকলন

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত