উড়িয়া চরের যুদ্ধ, গাইবান্ধা
এই যুদ্ধের নেতৃত্বে ছিলেন কোম্পানী কমান্ডার এম.এন.নবী লালু। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার গঠনের পূর্বে বিএসএফ-এর তত্ত্বাবধানে মানকার চর থেকে গাইবান্ধা জেলায় বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত অপারেশন করতে ছোট ছোট মুক্তিযোদ্ধা দল পাঠানো হতো। জুলাইয়ের মাঝামাঝি এমনি এক অপারেশনে আসেন এম.এন.নবী লালুর দল। তিনি স্মৃতিচারণ করে লিখেছেন-“মানকার চর থেকে সকাল ১০টায় রওয়ানা দিলাম। পৌছিলাম রাত ৯টায় আওয়ামী লীগের নেতা ফুলছড়ির সিরাজ মাস্টারের বাসায়। খাওয়া দাওয়ার পর রাত্র তখন ২টায় অন্য এক নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেলেন সিরাজ মাস্টার সাহেব। চারিদিকে নিস্তব্ধতা। অন্ধকার আর অন্ধকার। রাতভর সিরাজ মাস্টারের সঙ্গে শলা-পরামর্শ হলো। গাইবান্ধায় পাকবাহিনীর খবরা-খবর, অবস্থান ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হলো। তারই নিকটে জানতে পারি উড়িয়ার চরে পাকবাহিনীর ও রাজাকাররা অবস্থান নিয়েছে। পাকবাহিনীর শত অত্যাচারের নির্যাতনে গ্রামবাসীরা দলে দলে পালাচ্ছে। চলছে নারী নির্যাতন সহ জঘন্য ঘটনাবলী। তাদের সহযোগিতা করছে পাকবাহিনীর দোসর রাজাকাররা। শুনে শত্রু হননের দৃঢ় ইস্পাত কঠিন লড়াকু মনোবল নিয়ে আমার প্লাটুনের সাহসী যোদ্ধাদের সাথে নিয়ে প্রথম অপারেশনের সংকল্প গ্রহণ করি। দুইটি নৌকা নিয়ে আমরা রওনা দেই। সেকশন কমান্ডার মরহুম নুরুল ইসলাম (নুরু) সহ পরের নৌকায় তোড়া ভাইসহ বহু মৃত্যুঞ্জয়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা আমার সাথে ছিল। দুটি নৌকা আমাদের আক্রমণের লক্ষ্যস্থলে পৌঁছাবার পর আমার নৌকা থেকে যখন মুক্তিযোদ্ধারা নামছিল তখনই শুরু হয় প্রচণ্ড গোলাগুলি কিন্ত আমরা আমাদের প্রথম নৌকার অবস্থান কোথায় তা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারছিলাম না। চারিদিকে গভীর অন্ধকার। গভীর অমানিশার বাঁধ ভেঙে খুব সতর্কতার সাথে গুলি ছুঁড়তে লাগলাম এবং সামনের দিকে এগুতে থাকি। এর কিছু পড়ে বিক্ষিপ্তভাবে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা আমার সাথে যোগ দেয়, সেকশন কমান্ডার নুরু আমাকে জানায় শত্রুবাহিনী আমাদের প্রচণ্ড গোলাগুলির মুখে টিকতে না পেরে চলে গেছে। তখন সেকশন কমান্ডারকে নির্দেশ দিলাম নিরাপদ স্থানে যেতে। পূর্বেই আমরা নির্দ্ধারণ করেছিলাম নিরাপদ স্থানে। আমাদের মধ্যে কেউ যুদ্ধে ছত্রভঙ্গ হলে তাকে উক্ত নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলাম, আমরা নিরাপদ স্থানে যেয়ে দেখতে পেলাম আমাদের মধ্যে ৫ জন নেই। হারিয়ে যাওয়া ৫ জনের মধ্যে ১ জনের নাম মনে পড়ে আলাউদ্দিন।”
[৫৮০] ড. মোঃ. মাহবুবুর রহমান
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত