You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.13 | ইজ্জতপুর রেলওয়ে ব্রিজ (শ্রীপুর)-এর যুদ্ধ, গাজীপুর - সংগ্রামের নোটবুক

ইজ্জতপুর রেলওয়ে ব্রিজ (শ্রীপুর)-এর যুদ্ধ, গাজীপুর

গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলায় ইজ্জতপুর গ্রাম। এই গ্রামের ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল লাইনে শ্রীপুর উপজেলা থেকে ৪ কি.মি দক্ষিণে এবং রাজেন্দ্রপুর থেকে ৬ কি.মি উত্তরে রেলওয়ে ব্রিজটি অবস্থিত। ২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউনের পর থেকেই পাকবাহিনী তাঁদের অপতৎপরতার অংশ হিসেবে রাজেন্দ্রপুর-শ্রীপুর রেলপথে টহল জোরদার করে। শ্রীপুর থানার বিভিন্ন গ্রামের বিভিন্ন বয়সীদের সমন্বয়ে মুক্তিবাহিনী সংগঠিত হতে শুরু করে। তারা পরিকল্পনা করতে থাকে কি করে পাকবাহিনীর এই অশুভ চক্রান্তের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া যায়। প্রথম দিকে তাদের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ থাকলেও অচিরেই তারা সুসংগঠিত হতে শুরু করে এবং সাহস সঞ্চয় পাকবাহিনী দলের উপর নজর রাখতে শুরু করে এবং শ্রীপুর উপজলেয়ার অন্তর্গত ইজ্জতপুর গ্রামে রেল ব্রিজটি ধ্বংসের পরিকল্পনা করে। ইতোমধ্যেই পাকবাহিনীর ৩০/৪০ জনের একটি দল ইজ্জতপুর রেলওয়ে ব্রিজের দক্ষিণ পার্শ্বে চারটি বাংকার তৈরি করে সেখানে অবস্থান নেয়। মুক্তিবাহিনী ১০/১২ জনের একটি দল রাতে পাকবাহিনী অবস্থান রেকি করে এবং পরবর্তীতে তৃতীয় বারের প্রচেষ্টায় ডিসেম্বর দ্বিতীয় সপ্তাহে ব্রিজটি ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। উল্লেখ্য যে, ব্রিজ ধ্বংসের পূর্বে প্রায় প্রতি রাতেই পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর গুলি বিনিময় হতো। এরই ফলশ্রুতিতে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে পাকবাহিনী পার্শ্ববর্তী পাটপচা ও নলজানী গ্রামের ১৬/১৭টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। ব্রিজটি ধ্বংসের পর পাকবাহিনীর ট্রেনে টহল ও মালামাল পরিবহন সাময়িক বন্ধ হলেও বাংকার উত্তর উত্তর পাকবাহিনীর অবস্থান বহাল থাকে। ব্রিজ ধ্বংসের পর পরই মুক্তিযোদ্ধারা ডিনামাইট দিয়ে বাংকারগুলো উড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরিকল্পনা অংশ হিসেবে মুক্তিবাহিনীর ছোট ছোট তিনটি দল উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম দিকে অবস্থান নেয় ১৩/১৪ ডিসেম্বর রাতে। শাহাবুদ্দিন নামের এক মুক্তিযোদ্ধা সাথে আরো দুইজন সঙ্গীসহ রাতের অন্ধকারে পাক অবস্থানের পেছন দিক থেকে জঙ্গলের ভেরত দিয়ে লুকিয়ে বাংকারের দিক অগ্রসর হতে থাকে। তারা যখন বাংকার থেকে ২০/২৫ গজ দূরে তখন ফজরের আযান হয়ে গেছে এবং আলো ফুটতে শুরু করেছে। ঠিক এই সময় পাকসেনারা শাহাবুদ্দিনকে দেখে ফেলে এবং তাৎক্ষণিক ব্রাশ ফায়ার করলে শাহাবুদ্দিন মৃত্যুকোলে ঢলে পড়েন। পাকবাহিনী তাএ সেখানেই মাঠে গর্ত করে মাটি চাপা দেয় এবং সেদিনই ঐ স্থান ত্যাগ করে।
[৫৯৪] সংকলন

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত