You dont have javascript enabled! Please enable it! আলফাপুর যুদ্ধ-২ ঝিনাইদহ - সংগ্রামের নোটবুক

আলফাপুর যুদ্ধ-২ ঝিনাইদহ

আলফাপুর প্রথম থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। আর এ কারণে রাজাকার ও পাকবাহিনীর দৃষ্টি ছিল আলফাপুরের দিকে। এই যুদ্ধের কমান্ডার বিশারত আলীর মুখোমুখি হলে তিনি জানান, কামরুজ্জামান, দবির উদ্দিন জোয়ারদার, আবদুস সাত্তার, চাঁদ, ফরিদ, আবু তৈয়ব, বাবলু, আ. বারি, লাড্ডু, কাউসার, মোতাহার উদ্দিন, আকামত আলী ও ইজাহার আলীসহ ৫০/৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা আলফাপুরের যুদ্ধে অংশ নেন। ৪ আগস্ট শৈলকুপার আবাইপুর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প থেকে মুকিতযোদ্ধের এই দলটি আলফাপুরের খেজুর বাগানে অবস্থান গ্রহণ করে। অবশ্য পাকবাহিনী আগে থেকেই এই গ্রামে আক্রমণের পরিকল্পনা করে তা বিশ্বস্ত সূত্রে মুক্তিবাহিনী ও গ্রামবাসীরাও অবহিত হয়। মুক্তিসেনাদের আগমনের খবর পেয়ে গ্রামবাসীরা যুদ্ধ করার জন্য অনুরোধ জানায়। মুক্তিযোদ্ধারা সকল প্রস্তুতিসহ সময় ও সুযোগের অপেক্ষা করতে থাকে। এক সময় কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত উপস্থিত হয়। খাগড়া, শ্রীপুর, লাঙ্গলবাঁধ এবং শৈলকুপা মিলিটারি ক্যাম্প থেকে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক খানসেনারা অগ্রসর হতে থাকে। আগে থেকেই মুক্তিবাহিনী এই গ্রামে প্রবেশের পথ নৌকো ডুবিয়ে রুদ্ধ করে রাখে। ফলে সহজ প্রবেশের পথে অন্তরায় সৃষ্টি হয়। এ সময় গোয়ালবাড়ি এলাকায় মাত্র দুইটি নৌকা মুক্তিযোদ্ধারা নিয়ন্ত্রণে রেখে পাহারা দিতে থাকে। বেলা ১০/১২ টার দিকে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয় এবং তা চারটা পর্যন্ত একটানা চলতে থাকে। বিকেলের দিকে পাকবাহিনী বগুড়া বাজার থেকে ক্রমাগত মর্টার শেল বর্ষণ করতে থাকে। সে সময় মুক্তিযোদ্ধারা কৌশলগত কারণে মর্টারের গোলা এড়াতে নিজেদের অবস্থান কিছুটা পরিবর্তন করে। মুক্তিসেনারা এই যুদ্ধে বিপুল সাফল্য অর্জন করে। মিলিটারিরা পালিয়ে যায় শৈলকুপা ও মাগুরার পথে। যুদ্ধ শেষে পাকবাহিনীর ৭৫টি রাইফেল এবং ১০০/১৫০টি ব্যাজ মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়। ব্যাজগুলো নিয়ে দবিরউদ্দিন জোয়ারদার, শাম ও আলম কাজীসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ভারতে যান এবং প্রবাসী সরকারের কাছে তা জমা দিয়ে প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে পুনরায় শৈলকুপায় ফিরে আসেন। এই যুদ্ধে ২২৫ জন পাকসেনা মারা যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ মারা না গেলেও দুইজন মুক্তিসেনা আহত হন। যুদ্ধজয়ের পর আবার আক্রমণের আশঙ্কায় মুক্তিযোদ্ধাদের ৪০/৫০ জন সদস্য নৌকাযোগে আওদা কোমলনগর বিলে আশ্রয় নেন। এ সময় তারা খাদ্যের অভাবে ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়েন। পরদিন এই খবর পেয়ে কুশিবাড়িয়ার জমিদার মোঃ মোজাহার উদ্দিন লোক মারফত খবর দিয়ে অনাহারী মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্ধার করে খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্যের ব্যবস্থা করেন। পরে মাগুরার শ্রীপুর থেকে বিপুল সংখ্যক পাকবাহিনী এসে তাদের নিহত সঙ্গীদের লাশ নৌকাযোগে নিয়ে যায়। এ সময় তারা একজন নৌকার মাঝিসহ ৩/৪ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে।
সদরুল আইন

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত