আবু ওসমান চৌধুরী, লে. কর্নেল
৮ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী ’৭১-এর ২৫ মার্চ রাত্রে কুষ্টিয়া সার্কিট হাউসে অবস্থান করছিলেন। তখন তিনি ছিলেন চুয়াডাঙ্গার ৪ নং ইপিআর উইং- এর অধিনায়ক মেজর ওসমান। সেদিন ছিল তাঁর বিবাহ বার্ষিকী। আগের দিন অফিসের কাজে সপরিবারে তিনি কুষ্টিয়া আসেন। ২৬ মার্চ সকালে চুয়াডাঙ্গায় ফিরে আসার প্রস্তুতি নিতেই তিনি দেখে শহরের সড়কগুলোতে সামরিক জিপ টহল দিয়ে সান্ধ্য আইনের ঘোষণা প্রচার করছে। টেলিফোনের রিসিভার তুলে বুঝতে পারে লাইন বিকল। সকার ৮টায় রেডিও নব ঘুরিয়ে ঢাকা বেতার ধরতেই তার কানে চলে আসে সামরিক আইন বিধির নতুন নতুন ধারা- উপধারা। সন্দেহের আর কোনো অবকাশ থাকে না মেজর ওসমানের। শহরের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তের কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ সড়কের গাঁ ঘেঁষে অবস্থান সার্কিট হাউসটির। তিনি দেখেন, তার পেছনের জিলা স্কুলে অবস্থান নিয়েছে ২৯ বেলুচ রেজিমেন্টের একটি প্লাটুন। টহল জিপের সতর্ক পাহারা এড়িয়ে বেলা ১১টার দিকে ঝিনাইদহের পথে কুষ্টিয়া শহর ছাড়েন মেজর ওসমান। ইতিমধ্যে ঝিনাইদহের রাস্তায় ব্যারিকেড পড়েছে একাধিক। দপ্তরে পৌছেই সমবেত জমসমুদ্রের মাঝে মেজর ওসমান ঘোষণা করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেরশ সৃষ্টির দৃপ্ত প্রত্যয়। এভাবে শুরু করে’ ৭১-এর আগস্ট মাস পর্যন্ত ৮ নং সেক্টরের সামরিক অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন মেজর ওসমান। মধ্য আগস্টে বাংলাদেশ বাহিনীর সদর দপ্তর মুজিবনগরে এসিস্ট্যান্ট চিফ অব স্টাফ (লজিস্টিকস)- এর দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। সে দায়িত্বই তিনি পালন করে যান যুদ্ধের শেষ দিন পর্যন্ত।
আবু ওসহান চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৫ সালের ১ জানুয়ারি। ১৯৫৮ সালে তিনিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। ’৭১-এর ২৫ ফেব্রুয়ারী ত্নি দায়িত্ব নেন চুয়াডাঙ্গার ইপিআর ৪ নং উইং-এর অধিনায়কের। যুদ্ধের পর লে. কর্নেল পদে উন্নীত হয়ে ৩ বছর সেনা সদরে কোন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে তিনি। ৭৫ সালের নভেম্বর সামরিক অভ্যুথানের পর তাঁকে সেনাবাহিনী থেকে অবসর প্রদান করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে ৮ নং সেক্টরের ভৌগলিক সীমানা ছিল পুরো কুষ্টিয়া ও যশোর জেলা, ফরিদপুর জেলার অধিকাংশ এলাকা এবং দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়কের উত্তরাংশ।
[৫৪] আশরাফ কায়সার
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত