আত্রাইয়ের যুদ্ধ, নওগাঁ
আত্রাই একটি নিচু এলাকা। এই এলাকার ভেতর দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে আত্রাই নদী, যা নওগাঁর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নাটোর এবং সিংড়া হয়ে পদ্মা নদীর সাথে সংযুক্ত হয়েছে। বর্ষায় এই নদী খুব হিংস্র রূপ ধারণ করে। তবে শুস্ক মৌসুমে অনেকটাই শান্ত। এই নদীর সাথেই ছোট ছোট খালের মাধ্যমে গ্রামগুলো সংযুক্ত হয়েছে। নদীর পাড় উঁচু হওয়ায় বসতিও বেশি। তাছাড়া কোথাও নদীর পাড়ে জঙ্গল রয়েছে। বর্ষায় নদীর বিস্ততৃতি ৩০০-৪০০ গজ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। তবে শুস্ক মৌসুমে এর বিস্ততৃতি ১০০-২০০ গজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এই গ্রামগুলোর প্রধান বাহন নৌকা।
১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী ১১টি দেশী নৌকাযোগে বান্দাইখাড়া গ্রামের ওপর বর্বর আক্রমণ চালায়। গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে তারা অগ্নিসংযোগ করে। লুটপাট করে নিরীহ জনসাধারণের সম্পত্তি এবং হত্যা করে অসংখ্য সাধারণ গ্রামবাসীকে। এই সময়ে তারা আটক করে প্রায় ৫০ জন যুবক-যুবতীকে। পাক হানাদারদের এই নির্মম হত্যাযজ্ঞের খবর পেয়ে নওগাঁ জেলার দেশপ্রেমিক মুক্তিপাগল মুক্তিযোদ্ধারা শিকারপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামে সংঘবদ্ধ হয় এবং পাকবাহিনীর বর্বর আক্রমণের উচিত শিক্ষাদানের জন্য সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা করে।
মুক্তিযোদ্ধাদের অ্যাম্বুশ পরিকল্পনাঃ মুক্তি্যোদ্ধারা দুটি দলে বিভক্ত হতে অ্যাম্বুশ কার্যকর করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক কমান্ডার আব্দুল মালেকের নেতৃত্ব ১৯ জনের একটি দলে আত্রাই নদী পার হয়ে তারানগর গ্রামে অ্যাম্বুশ পাতে। অপর দলটি মুক্তিযোদ্ধা আবু রেজা (বিশু)র নেতৃত্বে বান্দাইখাড়া গ্রামকে বামে রেখে আত্রাই নদীর উত্তর তীরে ৫০০ গজ পশ্চিমে ধনপাড়া গ্রামে অবস্থান নেয়। আত্রাই নদীর দক্ষিণে বান্দাইখাড়া গ্রাম থেকে ১ কিলোমিটার পূর্বে তারানগর গ্রামের অবস্থান।
চূড়ান্ত আঘাতঃ ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে বান্দাইখাড়া গ্রামের হত্যাযজ্ঞের পর পাকসেনারা ১১টি নৌকাযোগে পূর্বদিক আত্রাই অভিমুখে যাত্রা করে। বেলা আনুমানিক ১২টা ১৫ মিনিটে পাকসেনারা প্রথম নৌকাটি কমান্ডার আব্দুল মালেকের, পাতা ফাঁদে প্রবেশ করে। ক্রমান্বয়ে দুটি নৌকা ফাঁদে প্রবেশ করার পর আব্দুল মালেক ৩য় নৌকায় প্রথম আঘাত হানে। মাত্র ১০ গজ দূরে লুকিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা সফল আক্রমণ চালিয়ে ৬টি নৌকা নদীতে ডুবিয়ে দেয়। অবশিষ্ট নৌকা থেকে পাকবাহিনী বাহুল্য গ্রামে নেমে আব্দুল মালেকের ওপর পাল্টা গুলিবর্ষণ করে। প্রায় ১ ঘন্টা ১০ মিনিট গুলিবর্ষণ পাল্টা গুলিবর্ষণের পর গোলাবারুদ শেষ হয়ে গেলে আব্দুল মালেকের অ্যাম্বুশ পার্টি পিছু হটে আসে এবং তার দল গজমতখালি বিল অতিক্রম করে। বান্দাইখাড়া গ্রাম হতে রাত ৩টার সময় তার দল রঘুনাথপুর গ্রামে ফেরত আসে।
[৫৬] সংকলন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত