You dont have javascript enabled! Please enable it! অবরুদ্ধ বাংলাদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

অবরুদ্ধ বাংলাদেশ

একাত্তরের ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে মধ্য ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন পর্যন্ত বাংলাদেশ ছিল মূলত এক অবরুদ্ধ নিষিদ্ধ দেশ। কতটা ভয়াবহ দুঃসহ ছিল যুদ্ধদিনের সে সময়গুলি, একমাত্র এদেশে বসবাসকারী সে সময়ের সাধারণ বাঙালী জনগোষ্ঠীই কেবল জানেন এর যথার্থ উত্তর। অনবরত ভয়, শঙ্কা ও মৃত্যুকে সামনে রেখে অনিশ্চয়তার দোলাচলে যেমন ক্ষত-বিক্ষত হয়েছেন, তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রয়োজনীয় রসদ সংগ্রহ, তৈরি ও সরবরাহের কাযে নিজেদের জীবন বিপন্ন করে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। জীবনের ভয় তুচ্ছ কএ লুকিয়ে রেখেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধদের অস্ত্র। সন্তানদের যুদ্ধে পাঠিয়ে বাবা-মা পাকসেনাদের হাতে নিহত হয়েছেন। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দেশের অভ্যন্তরে অবস্তানরত বাঙালি জনগনই একাত্তরের ভয়াবহতা, প্রচণ্ডতা সবচেয়ে বেশি অনুভব ও প্রত্যক্ষ করেছে এবং ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ব্যক্তিগত, যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট এবং সংলগ্ন মানুষদের অভিজ্ঞতা, অন্তরঙ্গ আলোচনা, গবেষণা ও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং বই থেকে এ সম্পর্কিত জানা যায় অনেকে তথ্য, বিবরণ ও অজানা কাহিনী।
মুক্তিযুদ্ধ নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাবু অবরুদ্ধ দেশের খোদ রাজধানী শহর ঢাকার ডি. আই. টির টিভি স্টেশন অপারেশন করার ঘটনা প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘সে সময় খালেদ মোশরফের নির্দেশ ছিল টিভি ভবন উড়িয়ে দেয়ার। কিন্তু আমাদের ভিতর প্রবেশের কোন উপায় ছিল না। এ কাজে এগিয়ে এলেন মাহবুব আলী নামে টিভির একজন। তিনি বললেন, প্রতিদিন তিনি দুই আউন্স পি.কে. নিতে পারবেন। জুতোর তলায়, টাকার মধ্যে, প্যান্টের নিচে করে তিনি প্রতিদিন পি.কে নিয়ে ঢুকতেন। দু’পাউন্ডের মতো ভিতরে ঢোকার পর মিলিটারি কি করে যেন খবর পেয়ে পেল। ওরা চেক করে সবাইকে ঢোকাতে লাগল। এক পর্যায়ে তারা সারা টিভি অফিস চেক করার সিদ্ধান্ত নিল। মিলিটারিরা যখন দ্বিতীয় তলা চেক করছিল তখন মাহাবুব আলী দৌড়ে এলো পল্টনের একটি বাড়িতে। সে জানত না কীভাবে এক্সপ্লোসিভ ব্যবহার করা যায়। তাকে শিখিয়ে দেয়া হলো। অফিসে গিয়ে ফিউজ ফিট করে দিলো টাওয়ারে। আমাদের খারাপ লাগছিল। কিন্তু কিছুই করার নেই। আমরা, এখন যেখানে হকি স্টেডিয়াম, সেখানে দাঁড়িয়ে দেখলাম। পুরো টাওয়ারই কেঁপে বাঁকা হয়ে গিয়েছিল। পি.কে যদি ঠিকভাবে বসানো হতো তাহলে সেটা পড়েই যেতো। ১ এভাবেই অবরুদ্ধ দেশে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের সমন্বিত প্রচেষ্টার যোগফল আজকের এই স্বাধীনতা।
অবরুদ্ধ বাংলাদেশের বাঙালী জনগণের আশার আলো ও বেঁচে থাকার প্রেরণা এবং প্রত্যাশা ছিল মুক্তাঞ্চল থেকে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা ও রেডিওর খবরাখবর।
[৬৩] সেলিনা হোসেন

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত