খৰ্নিয়া গণহত্যা (জুন-আগস্ট)
ডুমুরিয়া উপজেলার একটি ইউনিয়ন হলো খর্নিয়া। ডুমুরিয়া সদর থেকে সাত কিলোমিটার পশ্চিমে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের পাশে খর্নিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়-সহ একটি বাজার রয়েছে। বাজারের পশ্চিম দিকে রয়েছে নদী। একাত্তরে এই নদীতে কোনো ব্রিজ ছিল না; পারাপারের মাধ্যম ছিল খেয়া নৌকা। স্থানীয় রাজাকাররা এই নদীতে হত্যাকাণ্ড চালাতো। যাঁদের এরা হত্যা করতে চাইতো, ধরে এনে প্রথমে তাঁদের নির্যাতন করা হতো। এরপর সাধারণত হাত পা বেঁধে জীবন্ত নদীতে ফেলে দিত। ধরাবাহিকভাবে বেশ কয়েক মাস ধরে রাজাকাররা এই গণহত্যা চালিয়েছিল। এভাবে ভদ্রদিয়া গ্রামের ললিত মল্লিক (নলে) (৪০) এবং শোভনা গ্রামের আলি বখশকে (মতান্তরে আলাউদ্দিন ওরফে আলে) (২৭) হাত পা বেঁধে নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। জানা যায়, স্থানীয় সোহরাব রাজাকার এঁদের দুইজনকে প্রথমে গুলি করে হত্যা করতে চেয়েছিল, কিন্তু পরে চরম নৃশংস হয়ে হাত-পা বেঁধে এই দুইজনকে ভদ্রা নদীতে ফেলে দিয়েছিল। এঁদের দুই জনের হত্যার পর ঘটনাটি এলাকায় ‘আলে-নলের খুন’ বলে ব্যাপক প্রচারিত হয়েছিল।
কুলবাড়ি থেকে জনৈক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে রাজাকাররা নির্যাতন করে খর্নিয়া হাই স্কুলের পাশে হত্যা করেছিল। নির্যাতনের এক পর্যায়ে রাজাকাররা হুক মেরে তাঁর জিহ্বা ছিড়ে ফেলেছিল। এরপর দুই হাতে পেরেক মেরে তাঁকে স্কুলের পাশে একটি গাবগাছে ঝুলিয়ে রেখেছিল। বেশ কয়েকদিন এই গাছে তাঁর পেরেক বিদ্ধ মৃতদেহ ঝুলানো ছিল।১৯৪
রাজাকারদের এই ধারাবাহিক গণহত্যা ছাড়া পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা খর্নিয়াতে আরেকটি গণহত্যার ঘটনা ঘটে। জুন মাসের প্রথমার্ধে গানবোটে করে সেনারা খর্নিয়া এলাকায় আসে। খর্নিয়া ও পার্শ্ববর্তী শোভনা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে অভিযান চালিয়ে তারা আবদুল জব্বার, আবদুল লতিফ, আমজাদ হোসেন এবং জগবন্ধু নামক চারজনকে ধরে খর্নিয়া বাজারে নিয়ে যায়। এই চারজনই ছিল গ্রামের নিরীহ অধিবাসী, কোনো রাজনীতির সাথে তাঁরা জড়িত ছিল না। এই চারজনকে পাকিস্তানি সেনারা খর্নিয়া বাজারে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে।১৯৫
……………………………………………………
১৯৪. সাক্ষাৎকার, বিপ্লবী কামাক্ষ্যাপ্রসাদ রায় চৌধুরী (ভদ্রদিয়া, ডুমুরিয়া) ২৭ জুলাই ২০১৪।
১৯৫. সাক্ষাৎকার, বিপ্লবী কামাক্ষ্যাপ্রসাদ রায় চৌধুরী (ভদ্রদিয়া, ডুমুরিয়া) ২৭ জুলাই ২০১৪।
……………………………………………………
সূত্র: একাত্তরে খুলনা মানবিক বিপর্যয়ের ইতিহাস- দিব্যদ্যুতি সরকার