You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.06 |পাংশা গ্রাম গণহত্যা | ফরিদপুর - সংগ্রামের নোটবুক

পাংশা গ্রাম গণহত্যা, ফরিদপুর

একাত্তরের ফরিদপুর জেলার পাংশা ছিল এক অজপাড়াগাঁও। পাংশার এই গ্রাম ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রাম। মুক্তিসেনারা এখান থেকে গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত অপারেশন চালিয়ে পাক সৈন্যবাহিনীদের সদা ব্যতিব্যস্ত রাখত। অপারেশনের নানা পর্যায়ে তারা সেনাদের কয়েকটি পজিশনে হামলা চালায়। এরই ফলশ্রুতিতে ৬ মে, বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে বারোটার দিকে স্থানীয় রাজাকাররা পাক সেনাদের পথ চিনিয়ে পাংশায় নিয়ে আসে। দুই জিপ ভর্তি সেনা ও ৫০ জনের মতো রাজাকার গ্রামে প্রবেশ করে ঘরে ঘরে মুক্তিসেনাদের খোঁজে তল্লাশী শুরু করে। ইতোমধ্যে পাক সেনাদের আসার আলামত টের পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা গ্রাম ছেড়ে যায়। ভয়, আতঙ্ক ও নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে কিছু তরুণী ও মহিলারা পার্ট ক্ষেত ও অন্যান্য ঝোপ-জঙ্গলে লুকিয়ে থাকে। মুনশী বাড়ি ও আরো পাঁচটি বাড়ির লোকজন যখন পালাবার সুযোগ খুঁচ্ছিল সে সময় পাক-সেনারা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। ৬ মাসের শিশু থেকে ১২/১৩ বছরের কিশোর, কুমারী, যুবতী রমনী ও বৃদ্ধা মিলে প্রায় ৪৩ জনকে মধ্যাহ্ন সূর্যের নিচে দাঁড় করিয়ে রাইফেল তাক করে ও বুটের লাথি মেরে বলতে থাকে- ‘শুয়ার কা বাচ্চা, বাতাও মুক্তি কাঁহা, তোমহারা আদমী সব কাঁহা গিয়া’। জবাব না পেয়ে বুটের লাথিতে কয়জনকে ফেলে দিয়ে হুংকার দিয়ে উঠল— ‘ওয়া আভি বলো মুক্তি কাঁহা, তোমহারা আদমি সব কাঁহা। নেহী বাতাও গে তো গুলিসে তোমহারা শের উড়া দেগা, বাঙালি শুয়ার কা বাচ্চা, বাতাও জলদি’। ভয়ে কেঁদে কেঁদে সবাই জানেন না বলে জানান। সেনারা তাদের তওবা পড়তে বলে রাইফেলের গুলি করে সবাইকে হত্যা করে। ৪৩ জনের এই লাশগুলো তারা আধা মাইল দূরে নিয়ে কিছু লোক ও জোয়ান দিয়ে গণকবর খুঁড়িয়ে মাটি চাপা দেয় এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত পাহারা দিয়ে চলে যায়।
{৬৩৫} হাসিনা আহমেদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত