হাড্ডা গ্রাম গণহত্যা, খুলনা
খুলনার শিবসা নদীর পশ্চিম দিকে উঠে যাওয়া উত্তর তীরে হাড্ডা গ্রামটি অবস্থিত। খুলনার বিভিন্ন গ্রামের শরণার্থীরা পাক হানাদার বাহিনীর ভয়ে নিরাপত্তার জন্য শত শত নৌকায় করে সুন্দরবনের পথে ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ১৪ই মে শুক্রবার দুপুরের দিকে শরণার্থীরা খাবার, গোসল ও একটু বিশ্রামের জন্য হাড্ডা গ্রামের ওয়াপদা বাঁধের গেটের কাছে সমবেত হয়। কিছুক্ষণ পরে তাপস সরদার নামক স্থানীয় এক কিশোর খবর দেয় যে, রাজাকার আবু সাত্তারের সশস্ত্র বাহিনী শরণার্থীদের হত্যা ও লুটপাটের জন্য আসছে। এই খবর পাওয়ার পর স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী শরণার্থীদের অনেককেই দ্রুত সুন্দরবনের দিকে পাঠায়। স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর ভূপেন ইজারাদার, মতিন গোলদার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, রাজাকার আবু সাত্তারের বাহিনীর কাছে মাত্র তিনটি বন্দুক আছে তখন তাদের মনোবল শক্ত হয় এবং রাজাকার বাহিনীকে প্রতিরোধের কথা ভাবেন। রাজাকার বাহিনীকে ভয় দেখানোর জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের পক্ষ থেকে একনলা বন্দুক দিয়ে একটা ফাঁকা আওয়াজ করা হয়। কিন্তু রাজাকার বাহিনী ভয় না পেয়ে সামনের দিকে এগিয়ে আসে। রাজাকার আবু সাত্তার ওয়াপদা বাঁধের উপর উঠে নৌকার দিকে তাক করে কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। এতে শরণার্থীদের মধ্য থেকে রাজকুমার হালদার, অসীম হালদার, নগরবাসী মণ্ডল, প্রতিমা মণ্ডল প্রমুখ মারা যায়। এরপর স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর গুলিতে রাজাকার আবু সাত্তার ও তার এক সহযোগী মারা যায়। এরপর শরণার্থীরা সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে ভারতের দিকে চলে যান।
[১২৪] মোহাম্মদ সুলতান আহমেদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত